দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি পরিণত হয়েছে নিম্নচাপে। এটি রোববার ভোরের দিকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হবে ফণি।
ঝড়ের এই নামটি দিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) এবং এসক্যাপের মাধ্যমে উত্তর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল বা বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের তীরবর্তী দেশগুলোর প্রস্তাবিত নামগুলোর মধ্য থেকে ঝড়ের এই নামকরণ হয়েছে।
নিম্নচাপের কারণে ইতিমধ্যে সাগর উত্তাল হতে শুরু করেছে। এ কারণে দেশের চার সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া বিভাগ (বিএমডি)।
এদিকে নিম্নচাপের প্রভাব পড়েছে গোটা প্রকৃতিতে। কয়েক দিনের দাপটের পর ব্যারোমিটারের পারদ নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে। শুক্রবার দেশে তাপমাত্রা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে। বৃহস্পতিবার দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তা কমে শুক্রবার ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছে। এই তাপমাত্রা ছিল রাঙ্গামাটিতে।
বিএমডির আবহাওয়াবিদ আশরাফুল আলম বলেন, শুধু তাপমাত্রার কমেছে তা নয়, এর বিস্তৃতিও কমেছে। আগের প্রায় সারা দেশে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। শুক্রবার এটি ৮-৯টি জেলা এবং কয়েকটি বিভাগে চলে এসেছে। অর্থ্যাৎ, এদিন মৃদ্যু তাপপ্রবাহ বয়ে যায় ঢাকা, মাদারীপুর, রাঙ্গামাটি, নোয়াখালী, ফেনী, রাজশাহী, যশোর, বাগেরহাট, পটুয়াখালী জেলায়। এছাড়া সিলেট বিভাগজুড়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যায়।
এদিন ঢাকায় বিকাল ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু এর অনুভূতি ছিল ৪০ ডিগ্রির মতো। অনেক ফ্ল্যাট বাড়ি ও ঘরের ভেতরটা ছিল যেন অগ্নিচুল্লি। গরমে হাঁসফাঁস করার মতো অবস্থা ছিল। এই গরমে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ে বয়স্ক এবং শিশুরা।
বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, দিনের সূর্যের আলো যখন ধরণীকে উত্তপ্ত করতে থাকে, তখন শহরে ফ্ল্যাট বাড়ির ভেতরটাও সমান্তরালে গরম হয়। বাইরে মাঝেমধ্যে বাতাস প্রবাহিত হলে শীতল লাগে। কিন্তু বাসা-বাড়ির ভেতরের গরমটা আর বের হতে পারে না। ফলে ফ্ল্যাট বাড়িগুলো একেকটা অগ্নিচুল্লির মতো মনে হয়।
আর আবহাওয়াবিদ আশরাফুল আলম বলেন, রাঙ্গামাটিতে শুক্রবার ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা বেশি ঢাকার চেয়ে। কিন্তু অনুভবটা ঢাকায় বেশি হওয়ার প্রধানতম কারণ মানবসৃষ্ট। এই শহরে আছে কার্বন নিঃসরনের নানা উপাদান। এর মধ্যে অত্যধিক যানবাহন ও কলকারখানার কার্বন অন্যতম। সেই সঙ্গে ইটভাটাগুলোর কার্বনডাই অক্সাইড ও কার্বন মনোঅক্সাইড গরমকে আরও উসকে দিচ্ছে।
বিএমডির কর্মকর্তারা বলছেন, তবে এই গরম কমতে শুরু করেছে। মূলত বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের সুফল এটা। নিম্নচাপের কেন্দ্রস্থল যত উপকূলের দিকে আগাবে, গরম তত কমবে। সে কারণে আশা করা যায়, রোববার থেকে তাপমাত্রা আরও কমবে। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার নেপথ্যে সামদ্রিক নিম্নচাপ, আকাশে মেঘের আনাগোনা, জলীয় বাষ্পের হার হ্রাস প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করেন তারা।
এদিকে বিএমডি এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ২১৭০, কক্সবাজার থেকে ২০৮৫, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২১৮৫ এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২১৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
নিম্নচাপ কেন্দ্রে ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়া আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটে সাগর উত্তাল রয়েছে। এ কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌযানগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
বুয়েটের জলবায়ু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, নিম্নচাপটি শনিবার দিবাগত মধ্যরাতের পর বা রোববার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটা কতটা শক্তিশালী হবে তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। এর গতিপথ কেউ কেউ বলছে ভারতের তামিলনাড়ুর চেন্নাই। তবে উপকূলঘেঁষে এন্টি ক্লকওয়াইজ পদ্ধতিতে এটি ভারত হয়ে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যেও বিস্তৃত হতে পারে।
বিএ-১৬/২৬-০৪ (ন্যাশনাল ডেস্ক)