সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ আর নেই, রাতে ঢাকায় পৌঁছবে মরদেহ

ব্যাংককে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি… রাজিউন)। বাংলাদেশ সময় শনিবার সকাল ১০টা ৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। মাহফুজউল্লাহর মেয়ে নুসরাত হুমায়রা বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহর মরদেহ রাতেই থাইল্যান্ড থেকে ঢাকায় পৌঁছবে।

বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহর মরদেহ আজ রাত ১২টা ৪০ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছবে। রোববার বাদ জোহর গ্রিন রোডের ডরমিটরি মসজিদে প্রথম নামাজে জানাজা। দ্বিতীয় নামাজে জানাজা বাদ আসর জাতীয় প্রেস ক্লাবে। মরহুমের ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে বলেও জানান তিনি।

গুরুতর অসুস্থ হয়ে গত তিন সপ্তাহ ধরে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন মাহফুজউল্লাহ। গত ২১ এপ্রিল তার মৃত্যুর খবরও ছড়িয়েছিল, কিন্তু মেয়ে নুসরাত তখন জানিয়েছিলেন, তার বাবা বেঁচে আছেন।

গত ২ এপ্রিল অসুস্থ হয়ে পড়েন মাহফুজউল্লাহ। তখন তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়েছিল। ১০ এপ্রিল তাকে ব্যাংককের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি হৃদরোগ, কিডনি ও ফুসফুসের রোগে ভুগছিলেন।

মরহুমের স্ত্রী দিনারজাদী বেগম, ছোট মেয়ে ডা. নুসরাত হুমায়রা, ছোট মেয়ের জামাতা মিনহাজুল হক ব্যাংককের হাসপাতালে উপস্থিত আছেন। সব প্রক্রিয়া শেষে রবি বা সোমবার মাহফুজউল্লাহর মরদেহ দেশে আনা হবে বলে জানিয়েছেন নুসরাত হুমায়রা।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ ১৯৫০ সালে নোয়াখালী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যা ও সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী হিসেবে ঊনসত্তরের ১১ দফা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্র রাজনীতির কারণে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনামলে তাকে ঢাকা কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

ছাত্রাবস্থাতেই মাহফুজউল্লাহ সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বাংলাদেশের একসময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সাপ্তাহিক বিচিত্রার ১৯৭২ সালে জন্মলগ্ন থেকেই তিনি এ পত্রিকার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মাঝে চীন গণপ্রজাতন্ত্রে বিশেষজ্ঞ হিসেবে, কোলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপদূতাবাসে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। রেডিও ও টেলিভিশনে অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেছেন তিনি।

মাহফুজউল্লাহ আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একজন সক্রিয় পরিবেশবিদ এবং বাংলাদেশে তিনিই প্রথম পরিবেশ সাংবাদিকতা শুরু করেন।

বিভিন্ন বিষয়ে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় লেখা তার বইয়ের সংখ্যা ৫০-এর অধিক এবং এসবের অধিকাংশই পৃথিবীর বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে সংগৃহিত আছে।

তার সম্পাদিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে- প্রেসিডেন্ট জিয়া অব বাংলাদেশ: আ পলিটিক্যাল বায়োগ্রাফি, যাদুর লাউ, যে কথা বলতে চাই, অভ্যুত্থানের ঊনসত্তর, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন: গৌরবের দিনলিপি (১৯৫২-৭১), উলফা অ্যান্ড দ্য ইনসারজেন্সি ইন আসাম, বেগম খালেদা জিয়া: হার লাইফ হার স্টোরি, স্বাধীনতার প্রথম দশকে বাংলাদেশ।

বিএ-০১/২৭-০৪ (ন্যাশনাল ডেস্ক)