সংসদে মাথা ছাড়া ধড় পাঠিয়ে লাভ নেই

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, সংসদে মাথা ছাড়া ধড় পাঠিয়ে কোনো লাভ হবে না। কৌশলের রাজনীতি বন্ধ করে শূন্য হওয়ার আসনে পুনঃনির্বাচনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আপনিও সংসদে আসার চেষ্টা করুন। কারণ সংসদই হলো আপনাদের একমাত্র পথ।

বৃহস্পতিবার ঢাকাতে মহান মে দিবস উপলক্ষে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) আয়োজিত ‘জাতীয় উন্নয়ন সমৃদ্ধির জন্য পেশাজীবী-জনতার ঐক্য’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মোহাম্মদ নাসিম বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে থাকুক এটা আমরাও চাই না। আদালত তাকে মুক্তি দিলে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।

এ সময় অতীতের ভুল স্বীকার করে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে তিনি বিএনপির প্রতিও আহ্বান জানান।

আওয়ামী লীগ ছাড়া এদেশে আর কেউ আন্দোলন সফল করতে পারে না মন্তব্য করে নাসিম বলেন, দেশে ইতিবাচক রাজনৈতিক ধারা শুরু হয়েছে। তবে সবক্ষেত্রে বিএনপিকে পরাজিত করবে আওয়ামী লীগ।

তিনি বলেন, একের পর এক রাজনৈতিক ভুল করতে করতে বিএনপি পচে গেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তারা ভুল করেছে, আবার ২০১৮ সালে লোক ভাড়া করে তারা নির্বাচনে আসলো। কিন্তু কী কারণে নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে মাঠ ছেড়ে পালালো। এখন আবার তাদের সিনিয়র নেতারা চান না, নির্বাচিতরা সংসদে আসুক।

নাসিম বলেন, নতুন খোলসে জামায়াত মাঠে আসুক এটা আমরা চাই না। তাদের গতিবিধির ওপর নজরদারি বাড়াতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

আওয়ামী লীগের এই সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বলেন, ব্যাংকের ঋণখেলাপিদের ক্ষমা করা যাবে না। এটা জনগণের অর্থ। প্রয়োজনে আরও শক্ত হয়ে খেলাপি ঋণের অর্থ আদায় করতে হবে।

অনুষ্ঠানে শ্রমিকদের হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, একদিন শ্রমিকদের রাজত্ব কায়েম হবে। দেশে দুটি শ্রেণির মানুষ আছে। একটি লুটেরা শ্রেণি, আরেকটি শোষিত শ্রেণি। মাত্র এক ভাগ লুটেরা শ্রেণি, শোষিত শ্রেণি ৯৯ ভাগ।

তিনি বলেন, সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী ঋণখেলাপিদের সুদ হার কমিয়ে ৯ ভাগে আনার ঘোষণা দিয়েছেন। আর যারা ঋণখেলাপি নয় তাদের সুদ দিতে হবে ১২ ভাগ। এটার প্রেক্ষিতে সবাই ঋণখেলাপি হতে চাইবে-এটাই স্বাভাবিক।

অর্থমন্ত্রীর আরেকটি বক্তব্যের সমালোচনা করে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, কারোর নিজের সম্পত্তি নয় যে, ঋণখেলাপিদের ঋণ মাফ করে দিবেন। এটা জনগণের সম্পদ। এটা মাফ করা চলবে না। বৈষম্য কমিয়ে আনতে পাঁচ লক্ষ কোটি টাকা দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে বিলিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, দেশে ৩৫ ভাগ যুবক, যারা কর্মস্থলে প্রবেশ করতে চায়। কিন্তু তারা কাজ পাচ্ছে না। খেলাপিদের ঋণ মাফ করে দেয়ার বিষয়টির কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।

জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, আমাদের পথ মসৃণ নয়, তবে লক্ষ্যে পৌঁছানো অসম্ভবও নয়। কোনো জাতি গঠনে গৌরবময় অতীতের প্রয়োজন হয় যা প্রেরণা দেয়। এটা আমাদের আছে। এখন উন্নয়নের সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছাতে প্রকৃত স্বপ্ন দেখতে হবে। যে স্বপ্ন ঘুমাতে দেবে না। যেমনটি একাত্তরে বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগে দ্রুত শুদ্ধি অভিযান চালানোর পরামর্শ দেন তিনি।

জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, এখনও এদেশে জঙ্গিরা ছোবল মারার চেষ্টা করছে। বিপদ কাটেনি। তাই সতর্ক থাকতে হবে।

আইডিইবি’র সভাপতি এ কে এম এ হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার, আইডিইবি’র সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুর রহমান প্রমুখ।

বিএ-০৫/০২-০৫ (আঞ্চলিক ডেস্ক)