ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ ধেয়ে আসায় উপকূলীয় ঝুঁকিপূর্ণ ১৯ জেলায় শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১২ লাখ ৪০ হাজার ৭৯৫ জনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. শাহ কামাল এমন তথ্য জানিয়েছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র সর্বশেষ অবস্থা ও মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. জয়নাল আবেদীন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ত্রাণ সচিব বলেন, ‘দুপুর পর্যন্ত (শুক্রবার) আমরা যে লোকগুলোকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে এসেছিলাম, তাদের সংখ্যা ছিল চার লাখ চার হাজার। এ মুহূর্তে সর্বশেষ সংখ্যা হলো ১২ লাখ ৪০ হাজার ৭৯৫ জন। উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত আছে। আমাদের আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা চার হাজার ৭১টি।’
তিনি বলেন, ‘ঝড়ের গতি ও সিগন্যাল কমে আসছে, লোকও কম আসবে। সিগন্যাল ৭-এর পর আর বাড়েনি।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এর সঙ্গে (আশ্রয় কেন্দ্র) প্রাইমারি ও হাইস্কুল এবং কলেজ বিল্ডিংগুলো অন্তর্ভুক্ত হবে। প্রত্যেক জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, উপকূলীয় এলাকায় স্কুল-কলেজের ভালো বিল্ডিং থাকলে সেগুলো আশ্রয় কেন্দ্রে রূপান্তর করতে। ইতোমধ্যে এমন ভবনগুলো আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে রূপান্তর করা হয়েছে। ওইসব এলাকার মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছে।’
এনামুর রহমান বলেন, ‘ঝড়ের যে গতি তাতে আমাদের খুব বেশি ক্ষতি হবে না বলে মনে করি।’
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সরকারের সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সবাইকে সরকার ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছে। সবাই দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’
মুখ্য সচিব বলেন, ‘হয়তো বিপদের কোনো আশঙ্কা নেই- এটা মনে করে যদি অতি স্বাভাবিক হয়ে যান তবে পূর্ণ প্রস্তুতিতে ফিরিয়ে নেয়া যায় না। এজন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া।’
তিনি আরও বলেন, ‘তখন যদি বিপদ সেই রকম না হয় তখন কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু উল্টোটা যদি হয়, আমরা প্রস্তুত হলাম না, বড় বিপদ হয়ে গেল; তখন কিন্তু সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন- কেউ যাতে দুর্যোগের সম্ভাবনাকে খাটো করে না দেখেন। আমরা দেখেছি, সবাই প্রস্তুত রয়েছেন।’
আবহাওয়া অধিদফতরের সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ভারতের ওড়িশা উপকূল ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এটি একই এলাকায় অবস্থান করছে।
বুলেটিনে আরও বলা হয়, এটি আজ সন্ধ্যা ৬টায় মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
‘এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ৩ মে মধ্যরাত থেকে সকালের মধ্যে খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছাতে পারে। বাংলাদেশ ও এর উপকূলীয় এলাকায় আজ শুক্রবার সকাল থেকে ঘূর্ণিঝড় ফণীর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব অব্যাহত রয়েছে।’
‘ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টির পার্শ্ববর্তী এলাকার নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।’
তাতে আরও বলা হয়, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এর কাছাকাছি দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং এর কাছাকাছি দ্বীপ ও চরগুলো ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
অপরদিকে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ফেণীর তাণ্ডবের প্রথম ছোবল পড়ে ভারতের ওড়িশায়। তুমুল বৃষ্টিপাতের সঙ্গে বয়ে যায় প্রচণ্ড হাওয়া। একের পর এক গাছ উপড়ে পড়ে। উড়ে যায় ঘরের চালাও। শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে ওড়িশার পুরীতে আছড়ে পড়া ফণীতে এখন পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটার।
পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার জানায়, ওড়িশার পুরী, কটক, ভুবনেশ্বর, বালাসোর, চাঁদিপুর, গোপালপুরের মতো এলাকা একেবারে বিধ্বস্ত হয়েছে। এখন সেখানে চলছে উদ্ধার তৎপরতা। ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওড়িশার চার জেলা। অধিকাংশ এলাকা রয়েছে সম্পূর্ণ বিদ্যুৎহীন।
বিএ-২০/০২-০৫ (ন্যাশনাল ডেস্ক)