বাংলাদেশের যেসব এলাকায় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ফনি

ধেয়ে আসা অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ফনি। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ফনি। ধারণা করা হচ্ছে, শুক্রবার মধ্যরাতের দিকে খুলনাসহ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হানতে পারে এটি।

যেসব এলাকায় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ফনি তার সম্ভাব্য এলাকাগুলো হলো- সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, চাঁদপুর, ফেনী, লক্ষীপুর, নোয়াখালী চট্টগ্রাম।

এছাড়া দেশের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ফনি। এসব এলাকায় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলায় এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরকে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৯০-১১০ কিমি বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় ফনির প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাত হচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

ইতিমধ্যে দেশের দুই সমুদ্রবন্দর মোংলা ও পায়রা বন্দরকে সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ফনির প্রভাবে বজ্রপাতে কিশোরগঞ্জ জেলার তিন উপজেলায় এক শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় ১ জন ও নেত্রকোনায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ভারতের ওড়িশ্যার পর পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় ফনি। ওড়িশ্যায় প্রবল বৃষ্টি, ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রপাতে এ পর্যন্ত ৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় দেড় শতাধিক। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় ফনির আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে ওড়িশ্যা।

ইতিমধ্যে ঘূর্ণিঝড় ফনির কারণে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের ১২ লাখ ৪০ হাজার ৭৯৫ জন মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল।

দেশের ১৯ জেলার ১৪৭টি উপজেলার ১৩ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা উপকূলীয় এলাকা হিসেবে চিহ্নিত; সেখানে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষের বসবাস।

এই ১৯ জেলায় ৪ হাজার ৭১টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে, যার বেশিরভাগই প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সচিব জানিয়েছেন, নেভি, কোস্টগার্ড, পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, স্বেচ্ছাসেবকসহ রাজনৈতিককর্মীরা উপকূলের মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়াসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন।

ঘণ্টায় ১৭৫ থেকে ১৮৫ কিলোমিটার গতির ঝড়ো হাওয়া সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে ওড়িশ্যা উপকূল অতিক্রম শুরু করে ঘূর্ণিঝড় ফনি।

বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে মোটামুটি এর অর্ধেক শক্তি নিয়ে এ ঝড় শুক্রবার মধ্যরাতের দিকে খুলনাসহ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছাতে পারে।

এরপর তা রাজশাহী, রংপুর এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহের ওপর দিয়ে দেশের উত্তরাংশ পেরিয়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

এরআগে সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড় ফনি বাংলাদেশে আঘাত হানবে বলে জানিয়েছিল আবহাওয়া অধিদফতর। তবে ফনি দূর্বল হয়ে প্রবেশ করবে। এর প্রভাব থাকবে দুদিন। এর প্রভাবে আজ-কাল দিনভর বৃষ্টি থাকবে।

আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শামছুদ্দীন আহমেদ শুক্রবার সকালে জানান, উড়িষ্যা রাজ্যে ২০০ কিলোমিটার গতিবেগে ছোবল মারা ফনি পশ্চিবঙ্গের দিকে যাচ্ছে। সেখান থেকে দুর্বল হয়ে বাংলাদেশে আসবে সন্ধ্যা নাগাদ। বাতাসে গতিবেগ থাকবে ৮০-১০০ কিলোমিটার।

তিনি জানান, সারারাত ফনি সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরিশাল অঞ্চলের দিক থেকে ফরিদপুর, ঢাকা হয়ে ভারতের মেঘালয়ের দিকে যাবে।

বিএ-২৫/০২-০৫ (ন্যাশনাল ডেস্ক)