‘বেতন বাড়লেও দুর্নীতি কমছে না’

রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে জনপ্রশাসনে শুদ্ধাচার চর্চা সঠিকভাবে হচ্ছে না। এ কারণে দুর্নীতি প্রতিরোধ, সুশাসন, জবাবদিহিতা তৈরি হচ্ছে না বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলছে, বিভিন্ন প্রণোদনায় শুদ্ধাচার বৃদ্ধির পথে বাস্তব কোনো অগ্রগতি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি হলেও দুর্নীতি কমছে না। সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য গাড়ি সুবিধা বাড়ানো হলেও তারা নিজেদের গাড়ি ব্যবহার না করে পরিবহন পুলের গাড়ি ব্যবহার করছে। ক্যাডার সুযোগ-সুবিধায় বৈষম্য থাকায় তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হচ্ছে।

রোববার ঢাকার মাইডাস সেন্টারে ‘জনপ্রশাসনে শুদ্ধাচার: নীতি ও চর্চা’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে নয় দফা সুপারিশ তুলে ধরে টিআইবি।

টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনপ্রশাসনে শুদ্ধাচার নীতিতে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি বছর হিসাব দেয়ার কথা থাকলেও তারা সম্পদের বিবরণ দিচ্ছেন না। প্রতি বছর নিয়মিতভাবে শূন্যপদে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ নিশ্চিত করার কথা থাকলেও সময় দীর্ঘসূত্রতার কারণে ২৩ শতাংশ পদ খালি থাকছে। প্রক্রিয়াগত দীর্ঘসূত্রতার কারণে সিনিয়র সহকারী থেকে সমপর্যায়ের পদে ২৭ শতাংশ ও সহকারী সচিব বা সমপর্যায়ে পদে ২৯ শতাংশ পদ শূন্য থাকছে। সাম্প্রতিক সময়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব নিয়োগের বেশিরভাগই যোগ্যতার পাশাপাশি ক্ষমতাসীনের ইচ্ছায় নিয়োগ হচ্ছে।

বলা হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকদের সিলেকশন বোর্ডের সদস্যদের ক্ষমতার অপব্যবহার করা হচ্ছে। গোয়েন্দা রিপোর্টকে এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে, তাতে আর্থিক লেনদেন ও কে কোন রাজনৈতিক মতাদর্শের রিপোর্টে সেই বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। সরকারের বাইরে বিভিন্ন দলের মতাদর্শে বিশ্বাসী কর্মকর্তাদের ওএসডি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্কোরকে বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে না।

প্রশাসনে শুদ্ধাচার বাস্তবায়নে নয়টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

টিআইবির সুপারিশসমূহ

সরকারি কর্মচারী আইন-১৯৭৯ শুদ্ধাচার কৌশলের আলোকে হালনাগাদকরণ, আয়কর প্রদানের বাইরে সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব প্রদানে সুনির্দিষ্ট ডিজিটাল কাঠামো তৈরি করে সে অনুযায়ী বার্ষিক সম্পদের হিসাব নিশ্চিতকরণ, সরকারি চাকরি আইন-২০১৮-এ সংবিধান পরিপন্থী ও ঝুঁকিপূর্ণ ধারা বাতিল, এ আইনে সরকারি ধারাটি পরিবর্তন করে প্রজাতন্ত্র শব্দ যুক্ত, জনপ্রশাসনের উচ্চপদগুলোর শূন্যপদের বিপরীতে অতিরিক্ত নিয়োগ না দিয়ে নিচের পদগুলো পূরণ, পদোন্নতিতে বৈষম্য দূর করে সব ক্যাডারকে সমান সুযোগ দেয়া, প্রশাসন ক্যাডার থেকে টেকনিক্যাল ক্যাডার না দিয়ে টেকনিক্যাল দক্ষ ব্যক্তিদের দায়িত্বে বসানো, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্কোর ও দক্ষতা মূল্যায়ন করে পদোন্নতি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে কর্মজীবন উন্নয়ন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে তা কার্যকরকরণ ও তথ্য প্রকাশ আইন-২০১১ বাস্তবায়নে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির সুপারিশ পেশ করা হয়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান প্রতিবেদন বিশ্লেষণে বলেন, জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে জনপ্রশাসনের শুদ্ধাচার কিছু কিছু স্থানে বাস্তবায়ন হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা উপেক্ষিত হয়েছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যেও বৈষম্য সৃষ্টি হওয়ায় তারা অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েছেন।

তিনি বলেন, ১১টি শুদ্ধাচার কৌশলের মধ্যে মাত্র ৫টি বাস্তবায়ন হলেও শুধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে, বাকিগুলোর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ তে কাউকে আটক করতে হলে তার নিয়োগ প্রদানকারীর অনুমোদন নেয়ার বিষয়টি সংবিধান লঙ্ঘন করে। এতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে দুর্নীতি-অনিয়মের প্রবণতা বেড়ে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহাজাদা এম আকরাম, টিআইবির নির্বাহী ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি পরিচালক মো. রফিকুল হাসান প্রমুখ।

বিএ-০৪/২৩-০৬ (জাতীয় ডেস্ক)