প্রিয় নেতাকে রংপুরেই রেখে দিলেন নেতাকর্মীরা

সাবেক রাষ্ট্রপতি সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মরদেহ ঘোষণা মোতাবেক রংপুরেই রেখে দিলেন সেখানকার নেতাকর্মীরা। প্রিয় নেতাকে তার নিবাস পল্লী নিবাসের লিচুতলায় চির নিদ্রায় দাফনের সিদ্ধান্তে অনড় থাকলেন তারা। তাদের আবেগ ও ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শেষ পর্যন্ত এরশাদকে সেখানেই সমাহিত করার সিদ্ধান্ত নিলেন জাতীয় পার্টির নীতিনির্ধারকেরা।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু এরশাদ রংপুর-৩ (সদর) আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি এ আসন থেকে টানা ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। রংপুরকে জাতীয় পার্টির ঘাঁটি বিবেচনা করা হয়। এরশাদ জেলে থেকেও এখান থেকে ভোট করে বারবার নির্বাচিত হয়েছেন।

পল্লীবন্ধুকে নিয়ে রংপুরের মানুষের এক ধরনের আবেগ কাজ করে। সেই আবেগ থেকেই কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এখানকার নেতাকর্মীরা পল্লী নিবাসে এরশাদের জন্য কবর খুঁড়ে রাখেন। তারা এরশাদকে রংপুরেই সমাহিত করার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন।

বহু নাটকীয়তার পর মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতারা এরশাদকে সমাহিত করার বিষয়ে চূড়ান্ত এ সিদ্ধান্ত নেন।

জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা গেছে, পল্লী নিবাসে এরশাদের সমাহিত করার অনুমতি দিয়েছেন তার স্ত্রী ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ। এরশাদের কবরের পাশে নিজের জন্য কবরের জায়গা রাখার অনুরোধও করেছেন রওশন এরশাদ।

এর আগে মঙ্গলবার বেলা ২টা ২৯ মিনিটে রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে চতুর্থবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় এরশাদের জানাজা। জানাজা শেষে সাবেক রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় পল্লী নিবাসে।

এরশাদের জানাজায় ইমামতি করেন রংপুর করিমিয়া নুরুল উলুম মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মুহম্মদ ইদ্রিস আলী। জানাজা শুরু হয় দুপুর ২টা ২৭ মিনিটে। শেষ হয় ২টা ২৯ মিনিটে।

জানাজা শেষে সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা এরশাদের মরদেহে শ্রদ্ধা জানান। প্রিয় নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ঢল নামে।

জানাজার আগে এরশাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া চেয়ে বক্তৃতা করেন জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের, এরশাদের ছেলে রাহগির আল মাহি সাদ, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা প্রমুখ।

রংপুরের মেয়র পল্লীবন্ধুকে রংপুরে পল্লী নিবাসে খোঁড়া কবরে সমাহিত করার ঘোষণা দেন। তখন জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান। এর পরই লাশবাহী গাড়ি পল্লী নিবাসের উদ্দেশে রওনা হয়। এ সময় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা স্লোগান দিয়ে এরশাদকে রংপুরে দাফনের দাবি জানান।

প্রসঙ্গত রোববার সকাল পৌনে ৮টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন মৃত্যুবরণ করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তিনি রক্তে সংক্রমণসহ লিভার জটিলতায় ভুগছিলেন। রোববার বাদ জোহর ঢাকা সেনানিবাস কেন্দ্রীয় মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর পর সোমবার বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদে দ্বিতীয় এবং বাদ আসর বায়তুল মোকাররম মসজিদে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। কিছুক্ষণ পরই তাকে পল্লী নিবাসে দাফন করা হবে।

বিএ-০১/১৬-০৭ (ন্যাশনাল ডেস্ক, তথ্যসূত্র: যুগান্তর)