ফের জামিন আবেদন ওসি মোয়াজ্জেমের

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় দায়ের হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় হাইকোর্টে জামিন চেয়ে ফের আবেদন করেছেন ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। বুধবার হাইকোর্টে তার জামিন আবেদনের বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

মোয়াজ্জেম হোসেন এর আগে জামিন চেয়ে জজকোর্টে আবেদন করেছিলেন। জজকোর্টে জামিন আবেদন বাতিল করায় হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। হাইকোর্টেও তার জামিন আবেদন খারিজ হয়ে যায়। পরে তিনি আবারও আবেদন করেন।

ওসি মোয়াজ্জেমের জামিন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে আজ বুধবার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে দেশ ছাড়বেন না যুক্তিতে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেছিলেন ওসি মোয়াজ্জেম। মোয়াজ্জেমের আইনজীবী রানা কাওসার জানান, ‘ওসি মোয়াজ্জেম অসুস্থ। তিনি জামিন পেলে দেশত্যাগ করবেন না। এসব যুক্তিতেই জামিন আবেদনটি করা হয়েছে।’

কারাগারে যাওয়ার পর এ নিয়ে তৃতীয় দফায় উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন করলেন ওসি মোয়াজ্জেম। ওই মামলায় জামিন চেয়ে গত ১৭ জুন ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিফল হন তিনি। এর পর এই আদেশের বিরুদ্ধে তিনি জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন, যা ৯ জুলাই উত্থাপিত হয়নি বলে খারিজ হয়।

গত ১৫ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (প্রত্যাহার হওয়া) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। আদালত তার জবানবন্দি নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় করা অভিযোগটি পিটিশন মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন। এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন আদালত।

গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর রোববার মোয়াজ্জেম হোসেনকে হাইকোর্ট এলাকা থেকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানা পুলিশ।

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তার মা শিরীন আক্তার বাদী হয়ে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে মামলা করেন। এর পর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের নামে নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন ওসি মোয়াজ্জেম। পরে সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েও দেন তিনি।

এর আগে ২৬ মার্চ মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা তার অফিসকক্ষে ডেকে নিয়ে মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানি করেন।

রাফি এর প্রতিবাদ করেন এবং এ বিষয়ে রাফির মা শিরীন আক্তার মামলা করলে পুলিশ অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠান।

ওই মামলা প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছিল নুসরাত ও তার পরিবারকে। কিন্তু মামলা তুলে না নেয়ায় ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার একটি ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে রাফির গায়ে আগুন দেয় বোরকাপরা কয়েকজন। আগুনে শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়া রাফি ১০ এপ্রিল রাতে হাসপাতালে মারা যান। তিনি বলেন, রাফির গায়ে আগুন দেয়ার পর ৮ এপ্রিল তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান অধ্যক্ষ সিরাজকে প্রধান আসামি করে আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। রাফির মৃত্যুর পর তা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।

বিএ-০৬/২১-০৮ (ন্যাশনাল ডেস্ক)