বহিষ্কৃত ছাত্রদল নেতাদের ক্ষমা করে দিয়েছে হাইকমান্ড

বিক্ষোভ ও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভাংচুরের অভিযোগে বহিষ্কার হওয়া জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাদের ক্ষমা করে দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। তারা ১৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় ছাত্রদলের জাতীয় কাউন্সিলে অংশ নিতে চান। বহিষ্কার হওয়া একাধিক নেতা সম্মেলনের কাউন্সিলরও। তারা যত দ্রুত সম্ভব বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চান।

বুধবার রাতে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছ থেকে স্কাইপে নির্দেশনা নেন কাউন্সিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা। এসময় তারেক রহমান দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে বহিষ্কার হওয়া ছাত্রদল নেতাদের ক্ষমা করে দেয়ার মনোভাব প্রকাশ করেন।

কাউন্সিল প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছাত্রদলের সাবেক একজন সাধারণ সম্পাদক বলেন, বহিষ্কৃত ১২ ছাত্রদল নেতাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন তারেক রহমান, বহিষ্কার আদেশও তিনি তুলে নেবেন। তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্তও দেবেন তিনি। যেহেতু বহিষ্কৃতরা ছাত্রদল করবে না, সে কারণে অন্য অঙ্গসংগঠনগুলোতে কীভাবে কাজে লাগানো যায় তাদের নিয়ে সে ভাবনাও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ভাবছেন বলে তা সাবেক ছাত্রদল নেতাদের জানিয়েছেন। তাদেরকে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিতে রাখা হবে। সবাইকে নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য কাউন্সিল করতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

বহিষ্কার হওয়া নেতারা হলেন- ছাত্রদলের ভেঙে দেয়া কমিটির সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট, ইকতিয়ার কবির, জয়দেব জয়, মামুন বিল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, বায়েজিদ আরেফিন, সহ-সাধারণ সম্পাদক দবির উদ্দিন তুষার, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আজম সৈকত, আব্দুল মালেক এবং সদস্য আজীম পাটোয়ারি, ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক বাশার সিদ্দিকী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি জহিরউদ্দিন তুহিন।

জানা গেছে, তারেক রহমানের যে কোনো সিদ্ধান্ত মানার অঙ্গীকার করেছেন বিলুপ্ত কমিটির নেতারা। ছাত্রদলের সমস্যা সমাধানে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে। তারা কয়েক দফা ক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সংকট সমাধানের পথ খুঁজে বের করেন।

এদিকে ছাত্রদলের কাউন্সিলকে উৎসবমুখর করতে আগামী দিনের সব কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চান ছাত্রদলের বহিষ্কৃতসহ বিলুপ্ত কমিটির নেতারা। তার আগে ১২ ছাত্রদল নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চান তারা। বহিষ্কৃত ছাত্রদল নেতাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি জহির উদ্দিন তুহীনও রয়েছেন। প্রতিটি জেলা-মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকসহ সুপার ফাইভ কাউন্সিলর হিসেবে ভোট দেবেন। কিন্তু বাশার ও তুহিনের বহিষ্কার প্রত্যাহার না হলে তারা কাউন্সিলর হিসেবে ভোট দিতে পারবেন না। এ নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটিও কী করবে তা নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে।

জানতে চাইলে ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি (বহিষ্কৃত) ইখতিয়ার রহমান কবির বলেন, আমরাও এই কাউন্সিলকে উৎসবমুখর করতে কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চাই। সম্প্রতি গুলশান কার্যালয়ে আমাদের নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে আমাদের স্কাইপে কথা হয়েছে। আমরা তার কাছে ক্ষমা চেয়েছি। তিনি আমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। তিনি আমাদের রাজনৈতিক দায়িত্ব নিয়েছেন, সময় নিয়েছেন। তার ওপর আস্থা রেখেই আবেদন করছি, কাউন্সিলদের মধ্যে দু’জন বহিষ্কৃত নেতাও রয়েছেন। তাদের বহিষ্কার তুলে নিয়ে ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ভোট দেয়ার সুযোগ করে দেয়া হোক।

উল্লেখ্য, ছাত্রদলের কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল ১৫ জুলাই। কিন্তু সংগঠনটির আগের কমিটির নেতাদের বিক্ষোভের মুখে কাউন্সিল পেছাতে হয়েছে। তাদের দাবি ছিল, ছাত্রদলের কমিটি গঠনে বয়সসীমা তুলে দিতে হবে। এ নিয়ে বিক্ষোভের এক পর্যায়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে লাঞ্চিতও করা হয়। ভাংচুর করা হয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়। পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনটির ১২ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। এতেও বিক্ষোভ দমানো যায়নি।

পরে দীর্ঘ আলোচনার পর সংকটের সমাধান হয়। তারেক রহমানের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনার পর বিক্ষোভ থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধরা।

বিএ-০৩/২৩-০৮ (ন্যাশনাল ডেস্ক)