ক্যাসিনোকাণ্ডে অভিযুক্ত সাঈদ কাউন্সিলর বরখাস্ত

বরখাস্ত হলেন ঢাকার ক্যাসিনোকাণ্ডে অভিযুক্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদ।

বৃহস্পতিবার তাকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে ডিএসসিসির বোর্ড সভায় অনুপস্থিতি ও অনুমোদন ছাড়া বিদেশে অবস্থান করার কারণে।

পর পর ৩টি বোর্ড সভায় উপস্থিত না থাকায় সাঈদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি তদন্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বৃহস্পতিবার তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

জানা যায়, একেএম মমিনুল হক সাঈদ যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। ২০১৫ সালে ডিএসসিসির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হলেও তিনি বোর্ড সভায় নিয়মিত উপস্থিত হন না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া অসংখ্যবার বিদেশে গেছেন। বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুরে আছেন।

ডিএসসিসি সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে গত জুন পর্যন্ত ডিএসসিসিতে ১৮টি বোর্ড সভা হয়। এগুলোর মধ্যে মাত্র ৫টি সভায় উপস্থিত ছিলেন মমিনুল হক। ডিএসসিসি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তিনি তা মানেন না। ২৫ জুন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছে সিটি কর্পোরেশন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় সরকার বিভাগের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী পর পর তিনবার বোর্ড সভায় অনুপস্থিতি কাউন্সিলর পদ থেকে অপসারণযোগ্য অপরাধ এবং অসদাচরণের শামিল। বিষয়টি উল্লেখ করে ৭ জুলাই তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি জবাবে অভিযোগ অস্বীকার করেন।

পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের এক প্রভাবশালী নেতার তদবিরের কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। ২৬ আগস্ট ডিএসসিসির বোর্ড সভায় অংশ নিয়েছিলেন মমিনুল হক। ওই সভায় তিনি এলাকার উন্নয়ন কাজ তদারকির ব্যাপারে আগ্রহ দেখান।

তখন ডিএসসিসির মেয়র জানান, আইন অনুযায়ী তদারকির দায়িত্ব প্রকৌশল দফতরের। এই দায়িত্ব কাউন্সিলরদের নয়। পরে বক্তব্যের একপর্যায়ে মমিনুল হক উত্তেজিত হয়ে উঠেন।’

স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র জানায়, ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানীতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে গ্রেফতার হন অনেকে। তাদের মুখ থেকেই বের হয় যে, ক্যাসিনো-কাণ্ডের হোতাদের মধ্যে অন্যতম হলেন কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ। এরপর থেকেই তিনি পলাতক।

এ কারণে বিভিন্ন জায়গা থেকে সাঈদকে বরখাস্ত করার জন্য চাপ বাড়তে থাকে। কিন্তু ক্যাসিনো-কাণ্ডের বিষয়ে কেউই মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ না দেয়ায় কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি স্থানীয় সরকার বিভাগ।

পরে সাঈদের বিরুদ্ধে করা আগের অভিযোগ (বোর্ড সভায় উপস্থিত না থাকা) তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বিষয়টি তদন্ত করে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের পরিচালক (স্থানীয় সরকার) এম ইদ্রিস সিদ্দিকী প্রতিবেদন জমা দেন।

এদিকে র‌্যাব সূত্র জানায়, ঢাকার ফকিরাপুলের ওয়ান্ডারার্স ক্লাবটি চালাতেন যুবলীগের বিতর্কিত নেতা মমিনুল হক। ওই ক্লাবে নিয়মিত ক্যাসিনো, জুয়া, মাদকের আসর বসত। র‌্যাবের অভিযানের পর পরই মমিনুল হক সিঙ্গাপুর পালিয়ে গেছেন।

ফকিরাপুল ও আরামবাগের অনেকেই তাকে ‘ক্যাসিনো সাঈদ’ নামে চেনেন। ২০১৫ সালে কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা চালু করেন। এছাড়া আরও চারটি ক্লাবে ক্যাসিনো ব্যবসা ছিল সাঈদের নিয়ন্ত্রণে।

বিএ-১৫/১৭-১০ (ন্যাশনাল ডেস্ক)