কুরিয়ারে স্ত্রীর কাছে ঘুষের কোটি টাকা, ডিআইজি প্রিজন গ্রেফতার

কুরিয়ার সার্ভিসে ধাপে ধাপে স্ত্রীর কাছে প্রায় কোটি টাকার উপরে পাঠিয়েছেন ডিআইজি প্রিজন (হেডকোয়ার্টার্স) বজলুর রশীদ।

টাকা তুলেছেন তার স্ত্রী রাজ্জাকুন নাহার। এজন্য প্রকৃত ঠিকানা গোপন করে স্ত্রীর নামে তোলা হয় মুঠোফোনের সিম।

এছাড়া সরাসরি নিজে টাকা না পাঠিয়ে ঘুষ চ্যানেলের নির্ভরযোগ্য সোর্স ব্যবহার করেছেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বজলুর রশীদকে গ্রেফতার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অবৈধভাবে তিন কোটি আট লাখ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

রোববার দুপুরে দুদক পরিচালক মো. ইউসুফের নেতৃত্বে একটি টিম তাকে গ্রেফতার করে বলে জানা গেছে। এসময় উপ-পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন ও সালাউদ্দিন আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে রোববার সকাল ১১টা থেকে বজলুর রশীদ ও তার স্ত্রী রাজ্জাকুন নাহারকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে দুদক। অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানোর অভিযোগে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেখানেই তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি দুদকের নজরে আসে৷

জানা গেছে, এসএ পরিবহনের মাধ্যমে ঘুষ লেনদেনের ২৪টি রসিদ পাওয়া যায়। সূত্র জানায়, যদিও বাস্তবে এ ধরনের রসিদের সংখ্যা শতাধিক। প্রাপ্ত রসিদে টাকার যোগফল দাঁড়ায় প্রায় কোটি টাকা।

কুমিল্লা থেকে তৌহিদ হোসেন মিঠু (মোবাইল নং ০১৭২৬০১২০০৭) নামে একজন এই টাকা বজলুর রশীদের স্ত্রী রাজ্জাকুন নাহারের নামে নেয়া (০১৮৫৬৫৫৭৩৫৮) মোবাইল নম্বরে পাঠাতেন। রেবা নামে এই টাকা গ্রহণ করার তথ্য নিশ্চিত করা হয়। আর রাজ্জাকুন নাহার রেবাই হল ডিআইজি বজলুর রশীদের স্ত্রী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অবৈধ টাকা সহজে লেনদেনের স্বার্থে ভুল ঠিকানা দিয়ে একটি মোবাইল ০১৮৫৬৫৫৭৩৫৮ নম্বর সংগ্রহ করেন। ২০১৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর কারা ডিআইজি বজলুর রশীদের স্ত্রী রাজ্জাকুন নাহারের নামে সিমটি রেজিস্ট্রেশন করা হয়।

ওই সিম রেজিস্ট্রেশনে তার নাম সঠিক থাকলেও ঠিকানা দেয়া রয়েছে নওগাঁর নিয়ামতপুর। সিম রেজিস্ট্রেশন ফরমে গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্রের যে নম্বর (এনআইডি-১৯২৬৭১০০৬৯৯৭৮) রয়েছে তা যাচাই করা হয়।

এতে দেখা যায়, প্রকৃত ঠিকানা দেয়া হয় জামালপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের নিশিন্দি গ্রাম। জাতীয় পরিচয়পত্রে গ্রামীণফোনের আরেকটি নম্বর দেয়া আছে।

লেনদেন যেভাবে : চলতি বছর ছাড়াও ২০১৭ সাল থেকেই মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন করেছেন রাজ্জাকুন নাহার। এর মধ্যে গত ২০ জানুয়ারি ৯৫৮৮২৫ রসিদে ৫০ হাজার টাকা, ১৭ ফেব্রুয়ারি ৯৫৮১০৮ রসিদে ১ লাখ ২ হাজার টাকা, ২৪ ফেব্রুয়ারি ৯৫৮১৪৩ রসিদে ২ লাখ টাকা, ২০ মে ৯৫৯০৬০ রসিদে ১ লাখ টাকা, ২৩ মে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা, ২৭ মে ৯৫৯১৪১ রসিদে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৩৫০ টাকা, ৬ জুলাই ৯৫৯৪৬৯ রসিদে ৩ লাখ টাকা, ১৪ জুলাই ৯৫৮৯৭২ রসিদে ১ লাখ টাকা, ২২ জুলাই ৯৫৯৫১২ রসিদে ১০ লাখ ১০ হাজার, ১৬ জুলাই ৯৫৯৪৭০ রসিদে ৩ লাখ টাকা, ৪ মার্চ ৯৫৮২১৮ রসিদে ২ লাখ টাকা, ২৬ সেপ্টেম্বর ৯৫৯৫৪১ রসিদে ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৪ অক্টোবর ৯৫৯৭৪৯ রসিদে ৬ লাখ টাকা স্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়।

২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর ৯৫৮৪৮১ রসিদে ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা, ১৯ মার্চ ৯৫৮৩৪৫ রসিদে ৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা, ১১ এপ্রিল ৮৪২১২৮ রসিদে ৩ লাখ টাকা, ২০ নভেম্বর ৮৪২২৩৯ রসিদে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ৩০ সেপ্টেম্বর ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ৯৫৭৬৪০ রসিদে (তারিখ অস্পষ্ট) ২ লাখ টাকা, ২০১৭ সালের ৪ মার্চ ৯৫৮১৬৯ রসিদে ৬ লাখ ৮ হাজার টাকা, (১৬ অক্টোবর সাল অস্পষ্ট) ৮১৭২৩৮ রসিদে ১ লাখ টাকা, (৮ অক্টোবর সাল অস্পষ্ট) ৮১৭১৫৭ রসিদে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, ৯৫৯৭১৩ রসিদে (তারিখ অস্পষ্ট) ৬ লাখ ৪৪ হাজার টাকা, ২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর ৮১৭২১৭ রসিদে ৩ লাখ টাকা, ১২ অক্টোবর ৮১৭২০৭ রসিদে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা লেনদেন করা হয়। কুমিল্লা থেকে তৌহিদ হোসেন মিঠুর পাঠানো টাকা এসএ পরিবহনের কাকরাইলের প্রধান অফিস থেকে শুধু মোবাইলে মালিকানা নিশ্চিত করে বিপুল অঙ্কের এই টাকা তুলে নেয়া হয়।

এছাড়া রসিদে জামালপুর থেকে দুলাল মিয়া নামে ডিআইজি বজলুর রশীদের স্ত্রী রাজ্জাকুন নাহারকে আরও কিছু টাকা পাঠাতে দেখা যায়। এর মধ্যে ৯৫৮৭৮৯ রসিদে (তারিখ অস্পষ্ট) ৩৪ হাজার টাকা, ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ৪ হাজার টাকা এবং ৪ জুলাই ৯৫৯৩৭০ রসিদে ৩৩ হাজার টাকা পাঠানোর তথ্য পাওয়া যায়।

বিএ-১১/২০-১০ (ন্যাশনাল ডেস্ক)