গেল ১০ মাসে সৌদি থেকে খালি হাতে ফিরলেন ২০৬৯২ কর্মী

গত ১০ মাসে সৌদি আরব থেকে একেবারেই খালি হাতে দেশে ফিরে এসেছেন ২০ হাজার ৬৯২ জন কর্মী।

স্বপ্ন গড়তে সহায় সম্বল বিক্রি করে অনেকেই পাড়ি জমিয়েছিলেন প্রবাসে। কিন্তু ফিরতে হলো একেবারে খালি হাতে, নিঃস্ব হয়ে।

অনেকের গায়ে ছিল কোম্পানির পোশাক, কারও পায়ে ছিল না স্যান্ডেলও। অনেকে পুরনো পোশাক ছাড়া সঙ্গে করে আর কোনো কাপড় আনতে পারেননি।

যদিও বছরজুড়েই সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশি শ্রমিকরা ফিরছেন। নিয়মিত বিরতিতে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর হতাশা আর চাপা ক্ষোভে ডুবেছে।

তবে নভেম্বর মাসের প্রথম দিন থেকেই প্রবাসীকর্মীদের ফেরার সংখ্যাটি আশঙ্কাজনক।

বুধবার রাতে আরও ৯৬ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। বুধবার রাত ১১টা ২০ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইনসের এসভি ৮০৪ বিমানযোগে তারা দেশে ফেরেন।

এ নিয়ে এ মাসের প্রথম পাঁচ দিনেই ৪২১ জন ফিরলেন। এর মধ্যে ১ নভেম্বর ১০৪ জন, ২ নভেম্বর ৭৫ জন, ৩ নভেম্বর ৮৫ জন, ৪ নভেম্বর ৬১ জন ও গতকাল ৬ নভেম্বর ৯৬ জন ফিরেছেন।

এর আগে গত ৫ অক্টোবর ১২০ জন, ২৭ অক্টোবর ১৬০ এবং ৩১ অক্টোবর ১৫৩ বাংলাদেশিকর্মী ফিরেছেন।

চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত এই ১০ মাসে সৌদি আরব থেকে ২০ হাজার ৬৯২ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দরের প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক। এ পরিসংখ্যানে যুক্ত হলো নভেম্বরের আরও ৪২১ জন।

সৌদি আরবের রাস্তায়, দোকানে ধরপাকড়ে পরে এসব বাংলাদেশি শ্রমিক এক কাপড়েই দেশে ফিরেছেন। ইকামা (সৌদি আরবের রেসিডেন্স পারমিট) বৈধরাও এ ধরপাকড় অভিযানে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে দেশে ফিরছেন।

গতকাল ফেরাদের একজন হলেন কিশোরগঞ্জের তোফাজ্জল। তিনি জানান, সৌদি আরবে যাওয়ার খরচই জোগাড় করতে পারেননি তিনি। মাত্র আড়াই মাস আগে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। এর মধ্যেই ধরপাকড়ে পড়ে তাকে ফিরতে হলো।

গত তিন বছর ধরে সৌদি আরবে চাকরি করছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মহিউদ্দিন। সম্প্রতি সাড়ে ১৮ হাজার রিয়াল ( প্রায় চার লাখ টাকা) দিয়ে ইকামা নবায়নও করেছিলেন। তবু ধরপাকড়ের শিকার হয়ে শূন্যহাতে বাংলাদেশে পা রাখতে হলো তাকে।

মহিউদ্দিনের মতোই অভিযোগ গাজীপুরের মো. হান্নান মিয়ার। তিনি বলেন, গত ১৫ বছর ধরে সৌদি আরবে ছিলাম। আমার বৈধ ইকামা রয়েছে। ওখানের অধিবাসীরা আমাকে চেনে। এর পরও রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে আমাকে এক কাপড়ে দেশে পাঠিয়ে দিল সৌদি পুলিশ।

ইকামা দেখিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যা, ইকামা দেখিয়েছিলাম, কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। সৌদি পুলিশ তাদের ভুল স্বীকার করে না।

একইভাবে কাজে যোগদান করতে গিয়ে সৌদি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে দেশে ফিরেছেন নোয়াখালীর জয়নাল, ময়মনসিংহের আলম, জামালপুরের সবুজ মিয়া, বরিশালের মামুনসহ আরও অনেকে।

তাদের অনেকেই জমি, ভিটেমাটি বিক্রি করে প্রায় নিঃস্ব হয়ে সৌদি আরব গিয়েছিলেন। আর যাওয়ার খরচ জোগাড় না করা ছাড়াই ফিরতে হয়েছে তাদের।

এদিকে সৌদি আরবে তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার হওয়া তিন নারী আজ দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে। তাদের নাম, শাহিদা, মনোয়ারা, মিনা।

পরিবারের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড ও মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিল ব্র্যাক।

বরাবরের মতো গতকাল ফেরত আসাদেরও প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের সহযোগিতায় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম থেকে খাবার-পানিসহ নিরাপদে বাড়ি পৌঁছানোর জন্য জরুরি সহায়তা প্রদান করা হয়।

ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান জানান, চলতি বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ২১ হাজার বাংলাদেশিকে সৌদি আরব থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ বছরের কোন মাসে কত কর্মী ফিরেছে সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি গত দুই মাস ধরে ধরপাকড়ের তীব্রতা বেড়েছে।

তিনি বলেন, অনেকেই মনে করেন ইকামা থাকলেই বৈধ। কিন্তু কেউ যদি বৈধ ইকামা থাকার পরও যেখানে কাজ করার কথা সেখানে না করে অন্য জায়গায় কাজ করেন, সৌদি আইন অনুযায়ী সেটিও অপরাধ।

এই বিষয়গুলো কর্মীদের বোঝাতে হবে। আর রিক্রুটিং এজেন্সিকেও নিশ্চিত করতে হবে যাতে কোনো একজন কর্মী যেখানে যান সেখানে গিয়ে সেই কাজ পান। ফ্রি ভিসার নামে প্রতারণা বন্ধ করা উচিত।

বিএ-২০/০৭-১১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)