তিন দশকে দেশের ভয়াবহ যত ট্রেন দুর্ঘটনা

ভ্রমণের জন্য ট্রেনকে সবচেয়ে নিরাপদ মাধ্যম মনে করা হলেও সড়কের পাশাপাশি রেলপথে দুর্ঘটনার সংখ্যা কম নয়। দেশে প্রায়ই ছোট-বড় ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে। কখনো লাইনচ্যুত হয়ে বা দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে এ ধনের দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। নিহত ও আহত হচ্ছেন শত শত মানুষ। দেশে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছিল ১৯৮৯ সালের ১৫ জানুয়ারি গাজীপুরের টঙ্গীতে। ওই দুর্ঘটনায় ১৭০জন নিহত হন, আহত হন আরও ৪০০ যাত্রী। বিভিন্ন কারণে দেশে ভয়াবহ সব ট্রেন দুর্ঘটনার ঘটেছে। আজকের প্রতিবেদনে এমনই কিছু দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরা হলো-

সেতু ভেঙে দুর্ঘটনা: ১৯৮৩ সালের ২২ মার্চ ঈশ্বরদীর কাছে একটা ট্রেন সেতু দিয়ে চলার সময় ভেঙে পড়ে। সাথে সাথে পরপর কয়েকটা স্পান ভেঙে পড়ে। কয়েকটি বগি নিচে শুকনা জায়গায় পড়ে। এ দুর্ঘটনায় ৬০ জন যাত্রী নিহত হন।

আগুন ধরে দুর্ঘটনা: ১৯৮৫ সালের ১৩ জানুয়ারি খুলনা থেকে পার্বতীপুরগামী সীমান্ত এক্সপ্রেসের কোচে আগুন ধরে যায়। এতে ২৭ জন যাত্রী নিহত হন এবং ২৭ জন আহত হন।

সর্বহারার নাশকতা: ১৯৮৬ সালের ১৫ মার্চ সর্বহারার নাশকতায় ভেড়ামারার কাছে ট্রেন লাইনচ্যুত হয় এবং নদীতে পড়ে যায়। এতে ২৫ জন যাত্রী নিহত হন এবং ৪৫ জন আহত হন।

টঙ্গীর মুখোমুখি সংঘর্ষ: ১৯৮৯ সালের ১৫ জানুয়ারি টঙ্গীর কাছে মাজুখানে দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৭০ জন যাত্রী নিহত হন, আহত হন আরও ৪০০ জন। এছাড়া ১৯৮৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের কাছাকাছি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে ১৩ জন নিহত হন ও ২০০ জন আহত হন।

হিলির মুখোমুখি সংঘর্ষ: ১৯৯৫ সালের ১৩ জানুয়ারি রাত সোয়া ৯টায় গোয়ালন্দ থেকে পার্বতীপুরগামী ৫১১ নম্বর লোকাল ট্রেনটি হিলি রেলস্টেশনের ১ নম্বর লাইনে এসে দাঁড়ায়। এর কিছুক্ষণ পর সৈয়দপুর থেকে খুলনাগামী ৭৪৮ নম্বর আন্তনগর সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনটি একই লাইনে ঢুকে পড়ে। এ সময় ভয়াবহ মুখোমুখি সংঘর্ষে গোয়ালন্দ লোকাল ট্রেনের ইঞ্জিনসহ দুটি বগি আন্তনগর ট্রেনের উপর উঠে যায়। এতে দুটি ট্রেনের অর্ধশতাধিক যাত্রী নিহত হয়। আহত হয় দুই শতাধিক।

নরসিংদীর দুর্ঘটনা: ২০১০ সালে চট্টগ্রামগামী আন্তনগর ‘মহানগর গোধূলি’ ও ঢাকাগামী মেইল ‘চট্টলা’ ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় দুটি ট্রেনের ইঞ্জিন দুমড়ে-মুচড়ে যায়। চট্টলা ট্রেনের একটি বগি মহানগর ট্রেনের ইঞ্জিনের উপর উঠে যায়। সেই দুর্ঘটনায় চালকসহ মোট ১২ জন নিহত হন।

টঙ্গীর দুর্ঘটনা: ২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিল গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় ঢাকা-জয়দেবপুর রেললাইনে একটি কমিউটার ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে ৫ জন নিহত হন। এতে আহত হয় প্রায় অর্ধশতাধিক। ট্রেনের ৫টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়।

কুলাউড়ায় দুর্ঘটনা: ২০১৯ সালের ২৩ জুন মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। উপজেলার বরমচাল রেলক্রসিং এলাকায় সিলেট থেকে ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেসের ৪টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে খালে ছিটকে পড়ে। এ ঘটনায় ৬ জন নিহত হন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘর্ষ: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায় দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৬ জন নিহত হন। ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর ভোররাত পৌনে ৩টার দিকে উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শতাধিক যাত্রী আহত হন। সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস এক নম্বর লাইনে ঢুকছিল। এ সময় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথাকে আউটারে থাকার সিগন্যাল দেয়া হয়। চালক সিগন্যাল অমান্য করে মূল লাইনে ঢুকে পড়লে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

বিএ-০৮/১২-১১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)