পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে ‌‘চিভ-১’

মাস পেরিয়ে গেছে দেশের বাজারে পেঁয়াজের অস্থিরতা। হু হু করে বাড়ছে এর দাম। দুই দিন আগেই ডাবল সেঞ্চুরি করেছে মসলাটির প্রতি কেজির মূল্য।

লাগাম টেনে ধরতে পারছে না খোদ সরকারও।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত রফতানি বন্ধ করে দেয়াই পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশে পেঁয়াজের তেমন ঘাটতি নেই। সিন্ডিকেটের কারণে পেঁয়াজের বাজারে এমন পরিস্থিতি।

এসব কথা নিয়ে রাজনীতির মাঠেও বীরদর্পে বিচরণ করছে পেঁয়াজ। সংসদ উত্তাল পেঁয়াজ কথনে। বিরোধী দলীয় নেতারা বিষয়টি সরকারের ব্যর্থতা দাবি করে বিষবাক্য নিক্ষেপ করছেন।

এদিকে মধ্যবিত্ত ও নিম্মবিত্তরা পেঁয়াজের ঝাঁঝে মরণ দশা। গত দুই দিন ধরে হালিতে পেঁয়াজ কিনতে দেখা গেছে দেশের বিভিন্ন বাজারে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই রান্নায় পেঁয়াজ ব্যবহার করবেন না বলে পোস্ট দিচ্ছেন।

এমন যখন পরিস্থিতি তখন দেশবাসীর জন্য সুখবর নিয়ে এলেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। তারা জানালেন, রান্নায় আর পেঁয়াজ ব্যবহার করা লাগবে না। এমন এক বিকল্প আবিস্কার করেছেন তারা যাতে পেঁয়াজের ঝাঁঝ পাওয়া যাবে।

দেশের মাটিতে পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে ‘চিভ’ নামক এক মসলা চাষে সফল হয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) মসলা গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চিভ চাষে এই সাফল্য পেয়েছেন।

বারি এর আঞ্চলিক মশলা গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. নূর আলম চৌধুরী জানান, চিভ মসলাটি উত্তর চীন, সাইবেরিয়া ও মঙ্গোলিয়া অঞ্চলের। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় সেই মসলার চাষ বাংলাদেশের মাটিতে করতে সফল হয়েছি আমরা।

শুধু তাই নয়; উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন চিভের ওপর গবেষণা করেও সফলও হয়েছেন। তারা বারি চিভ-১ নামের একটি জাত উদ্ভাবন করেছেন যা বছর জুড়েই চাষ ও ফলনের উপযোগী।

এ গবেষণায় ড. মো. নূর আলম চৌধুরীকে সাহায্য করেছেন ড. মোস্তাক আহমেদ এবং ড. আলাউদ্দিন খান ও মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।

কি এই চিভ-১? এটি কি সত্যি পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে?

ড. মো. নূর আলম চৌধুরী জানান, চিভে পেঁয়াজ ও রসুনের স্বাদ বা গুণাগুণ রয়েছে। তাই আপৎকালীন সময়ে পেঁয়াজ-রসুনের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে এই চিভ।

তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশে চিভ সাধারণত স্যুপ, সালাদ ও চাইনিজ ডিসে ব্যবহৃত হয়। এর পাতা লিলিয়ান আকৃতির ফ্ল্যাট, কিনারা মসৃণ ও এর ভালভ লম্বা আকৃতির। মসলাটি হজমে সাহায্য ও রোগ নিয়ন্ত্রণ করে। এর মধ্যে ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণাগুণও বিদ্যমান রয়েছে। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-১, বি-২, নায়াসিন, ক্যারোটিন ও খনিজ উপাদান বিদ্যমান।

২০১৭ সালে বারি’র এই তিন বিজ্ঞানী উন্নত জাতের উচ্চফলনশীল চিভ উদ্ভাবনে গবেষণা শুরু করেন।

প্রথম দিকে দেশের পাহাড়ি এলাকা সিলেট ও চট্টগ্রামে চাষ হতে থাকে এটি। কিন্তু এখন পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, মাগুরা, বগুড়া ও লালমনিরহাট এলাকায় চিভ চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলেছে জানান কৃষিবিদরা।

তারা বলেন, চিভ গাছ একবার লাগালে দীর্ঘদিন ধরে ফল পাওয়া যায়। বাড়ির আঙিনায় বা টবে এই ফসলের চাষ করা যায়।

এ বিষয়ে বারি’র মশলা ফসল বিশেষজ্ঞ ও গাজীপুর আঞ্চলিক মশলা গবেষণা কেন্দ্রের (বিএআরআই) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার জানান, চিভকে পেঁয়াজ-রসুনের বিকল্প হিসেবে আদর্শ একটি মশলা হতে পারে। বাঙালিরা এতে অভ্যস্ত হওয়াই এখন সময়ের ব্যাপার। পেঁয়াজ-রসুনের ঘাটতি চিভ দিয়েই মেটানো সম্ভব হবে বলে মনে করছি আমরা।

প্রসঙ্গত বিবিএস ২০১৭ এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে বাৎসরিক পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ১৭.৩৫ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু চাহিদা রয়েছে ২২ লাখ মেট্রিক টন। এ ক্ষেত্রে পাশাপাশি চিভ ব্যবহার করলে বাকি ৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি নির্ভরতা কমে আসবে। পেঁয়াজের দাম হাতের নাগালের বাইরে চলে গেলেও সমস্যাটি এড়িয়ে যাওয়া যাবে।

বিএ-০৫/১৬-১১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)