পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধিতে সারা দেশে বিএনপির বিক্ষোভ সোমবার

পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সোমবার বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। ঢাকাসহ সারা দেশে এ কর্মসূচি পালন করবে দলটি।

এছাড়া সাম্প্রতিক ভারত সফরে দেশটির সঙ্গে করা চুক্তিগুলো সম্পর্কে জানতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আজকালের (রবি-সোম) মধ্যে চিঠি দেবে বিএনপি। একই সঙ্গে চুক্তিগুলো সম্পর্কে জানতে তথ্য অধিকার আইন সামনে রেখে তথ্য কমিশনেও চিঠি দেবে দলটি।

শনিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া বৈঠকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

বিকাল ৪টা থেকে তিন ঘণ্টাব্যাপী স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। লন্ডন থেকে বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্কাইপে যুক্ত ছিলেন।

বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, এখানে সিন্ডিকেট জড়িত। এই সিন্ডিকেটের পেছনে সরকারের মদদপুষ্ট ব্যক্তিরা কাজ করেছে। সরকার ব্যর্থ হয়েছে, আগে ধারণাই করতে পারেননি কত আসছে, কত রফতানি হচ্ছে। যার ফলে আজকে পেঁয়াজের মতো একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু পেঁয়াজই নয় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। আমরা সরকারের ব্যর্থতার নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রতিবাদে আগামী সোমবার ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতিবাদ সমাবেশ হবে। একই সঙ্গে কৃষকদের পণ্যের ন্যায্য মূল্যের দাবিও এই সমাবেশে থাকবে।

পদ্মা সেতুর মেয়াদ দেড় বছর বাড়িয়ে প্রকল্পে অর্থ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত মেগা প্রজেক্টে মেগা দুর্নীতি ছাড়া কিছুই নয় বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, পুরো প্রকল্পের ব্যয় এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। মেগা প্রজেক্টের সঙ্গে মেগা দুর্নীতি এবং নতুন করে যোগ হয়েছে মেগা পাচার। মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে এসব টাকাগুলো পাচার করা হচ্ছে।

রেল দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার রেল পরিচালনা ও সড়কে দুর্ঘটনা রোধে ব্যর্থ। সরকার নিজেই যেখানে লাইনচ্যুত হয়ে গেছে, সেখানে রেল কীভাবে লাইনে থাকে।

রোহিঙ্গা ইস্যু প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গা নিধন ও নির্যাতনের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মামলা করছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার মামলা না করায় সরকারের অনীহা দেখছে বিএনপি। এ বিষয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা নূর হোসেনকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন আমরা তার বক্তব্যের জন্য তাকে ধিক্কার জানাই। তার বিরুদ্ধে সংসদীয় নীতিমালায় ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানাই। তার এই পদে থেকে এমন বক্তব্য আশা করা যায় না।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিএনপি উদ্বিগ্ন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী প্রায় পঙ্গুত্ব অবস্থায় চলে এসেছে বলে মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা গোপন করে বিএসএমএমইউ পরিচালক গর্হিত কাজ করেছেন। আগামীকাল (রোববার) দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে আবেদন করা হচ্ছে। আদালত তার স্বাস্থ্যগত কারণে অনন্ত বেগম জিয়াকে জামিন দেবেন, আদালতের কাছে আমরা সুবিচার আশা করি।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আগামী ২৮ নভেম্বর যে গণশুনানি হবে তাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করবে। সেখানে তারা এ বিষয়ে আমাদের বিএনপির যে বক্তব্য তুলে ধরবেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক। যে দুর্নীতির অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ হারাল, সেই রকম অভিযোগ জাহাঙ্গীরনগর ভিসির বিরুদ্ধে এসে গেছে। সে ক্ষেত্রে তাকে ডিফেন্ড করে প্রধানমন্ত্রী নিজে যে হুমকি দিয়েছে সেটা কিন্ত আইনসম্মত নয়। উনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, সরকার টাকা বন্ধ করে দেবে। আমার কথা টাকা আসে কি সরকারের পকেট থেকে, না জনগণের কাছ থেকে।

জনগণ টাকা দেয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, তারা জনগণের টাকায় চলে। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অর্ডিন্যান্স আছে, সে সব নিয়ম-কানুন আছে তার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চলে। শিক্ষক ও ছাত্ররা যে আন্দোলন করছে আমরা সেই আন্দোলনকে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন মনে করি এবং আমরা এটা সমর্থন জানাচ্ছি।

এছাড়াও স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তার ভারত সফরের করা চুক্তিগুলো অবিলম্বে দেশবাসীর সামনে প্রকাশ করা উচিত বলে মনে করে স্থায়ী কমিটি। কারণ চুক্তিগুলো নিয়ে দেশবাসীর মধ্যে অনেক জিজ্ঞাসা আছে। দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন এখানে জড়িত আছে।

বিএ-১৫/১৬-১১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)