কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণেও বাঁশ-কাঠ!

সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় রেললাইনে বাঁশ ও কাঠের ব্যবহারের খবর প্রচার হয়েছে। রেলের দুর্ঘটনার খবরও আসছে। ভবন নির্মাণে রডের জায়গায় বাঁশ বা কাঠের ব্যবহার হচ্ছে। ঘটছে ভবন ধসের খবরও। এ ধরনের ঘটনা যেন থেমে নেই।

আইএমইডির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘অধিকাংশ প্রকল্প এলাকায় ভবন নির্মাণের চুক্তির ব্যত্যয় ঘটিয়ে স্টিলের পরিবর্তে বাঁশ ও কাঠের সাটারিং (কংক্রিটের ঢালাইয়ে ব্যবহৃত অস্থায়ী কাঠামো) ব্যবহার করা হচ্ছে।’প্রতিবেদনটিতে সুপারিশ করা হয়, গণপূর্ত অধিদফতর চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

দেশের ৪০টি উপজেলায় ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভবন নির্মাণকাজ চলমান। এর মধ্যে ২০টির বেশি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভবন নির্মাণে স্টিলের পরিবর্তে বাঁশ ও কাঠের সাটারিং (কংক্রিটের ঢালাইয়ে ব্যবহৃত অস্থায়ী কাঠামো) ব্যবহার করা হচ্ছে।’

৪০টি উপজেলায় ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও চট্টগ্রামে একটি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি স্থাপন প্রকল্পের ওপর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) দেয়া এক নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন (দ্বিতীয় খসড়া) থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রকল্পের আওতায় ৪০টির প্রতিটিতেই ছয়তলা পাইল ভিতের ওপর পাঁচতলা একাডেমিক ভবন, ছয়তলা পাইল ভিতের ওপর তিনতলা ডরমেটরি ভবন, ছয়তলা পাইল ভিতের ওপর চারতলা ভবন (প্রিন্সিপাল, ভাইস প্রিন্সিপাল কোয়ার্টার ও নারী পরিদর্শকদের জন্য ডরমেটরি), পাম্প হাউজ, সাব-স্টেশন, গ্যারেজ, ভূগর্ভস্থ পানি সংরক্ষণাগার, ডিপ টিউবওয়েল, কম্পাউন্ড ড্রেন, বাউন্ডারি ওয়াল, অ্যাপ্রোচ রোড, গার্ড শেড ইত্যাদি অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি ফিরোজ হাসান (পেকু সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মো. ফিরোজ হাসান) সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারবেন।

তবে আমার কাছে মনে হয়, এটা ঠিক নয়। কারণ সাটারিংয়ে স্টিলের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করবেন কেমনে? তবে আমরা আইএমইডির সুপারিশের ব্যত্যয় করি না। সুপারিশ করে থাকলে আমরা অবশ্যই সুপারিশ অনুযায়ী কাজ করব।’

এ বিষয়ে জানতে গণপূর্তের পেকু সার্কেলের তত্ত্বাধায়ক প্রকৌশলী কাজী ফিরোজ হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

প্রকল্পটি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাস্তবায়ন করছে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো/গণপূর্ত অধিদফতর (নির্মাণকাজের জন্য)। পুরোটাই সরকারি অর্থায়নে এতে ব্যয় হচ্ছে এক হাজার ৩৩১ কোটি ২৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।

২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের জুন মেয়াদে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত নির্মাণকাজের অগ্রগতি ৩০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ২৩ দশমিক ৮১ শতাংশ।

আইএমইডি প্রতিবেদনটি তৈরি করে চলতি বছরের মে মাসে। তখন প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন মো. আজিম উদ্দিন। তিনি জানান, গত জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে চাকরি থেকে তিনি অবসর নেন। তার বক্তব্য, ‘আমি থাকতে ওই রিপোর্ট পাইনি। হয়তো আমি আসার পর ওই রিপোর্ট এসেছে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই চলে এসেছিলাম।’ তবে এ প্রকল্পের নতুন পরিচালক কে হয়েছেন, তা জানা সম্ভব হয়নি।

নিবিড় ওই পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন তৈরিতে সম্পৃক্ত আইএমইডির পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন সেক্টর- ৫ (স্বাস্থ্য ও গৃহায়ন)। এ সেক্টরের সহকারী পরিচালক মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। এটা গত অর্থবছরের কাজ ছিল। ওই সময়ই দেয়া হয়েছে। এ অর্থবছরের জন্য আবার মনিটরিং করা হচ্ছে।’

আইএমইডির সুপারিশ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় মানছে কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছি। অবশ্যই তারা সেটা বাস্তবায়ন করবে। তবে প্রতিবেদনে অনিয়ম আসলে সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা আইএমইডির নেই। আইএমইডি সুপারিশ দেবে, মতামত দেবে। আমাদের পুলিশি কোনো ক্ষমতা দেয়া হয়নি যে, আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। প্রতিবেদনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তবায়নকারী ও উদ্যোগী মন্ত্রণালয়/বিভাগ কী ব্যবস্থা নিয়েছে, সেটা তারাই বলতে পারবে।’

কোন কোন উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণে স্টিলের পরিবর্তে বাঁশ-কাঠের সাটারিং ব্যবহার করা হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি প্রতিবেদনে।

এ বিষয়ে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘ইন্টিগ্রেটেড সলিউশনস লিমিটেডকে কনসালটেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছি। তাদের জিজ্ঞাসা করতে পারেন, কেন তারা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেনি।’

বৈদেশিক শ্রমবাজারের প্রয়োজন অনুযায়ী দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা, বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা, দক্ষ জনশক্তি সরবরাহের মাধ্যমে শিল্প খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং সারাদেশে কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সুযোগ ও কাজের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করা এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

প্রকল্পের আওতায় বরিশালের গৌরনদী, পটুয়াখালীর দশমিনা, কুমিল্লার দাউদকান্দি, চৌদ্দগ্রাম ও নাঙ্গলকোট, চাঁদপুর সদর, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও রাউজান, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা ও নগরকান্দা, গাজীপুরের কাপাসিয়া, গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া, কিশোরগঞ্জের মিঠামইন, টাঙ্গাইলের নাগরপুর ও কালিহাতী, নরসিংদীর মনোহরদী, শেরপুর সদর, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, জামালপুরের মেলান্দহ, যশোরের কেশবপুর, খুলনার পাইকগাছা ও দিঘলিয়া, বাগেরহাটের চিতলমারী, সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ ও সিরাজগঞ্জ, রাজশাহীর মোহনপুর, নাটোরের সিংড়া, দিনাজপুরের খানসামা, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা, রংপুরের পীরগঞ্জ ও গংগাচড়া, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, কক্সবাজারের রামু, মানিকগঞ্জের সিংগাইর, নারায়ণগঞ্জের সদর, পাবনার সুজানগর, নওগাঁর রাণীনগর, মৌলভীবাজারের বড়লেখা এবং হবিগঞ্জ সদরে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।

এর বাইরে প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় একটি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি স্থাপন করা হচ্ছে।

বিএ-০২/২০-১১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)