অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চায় আওয়ামী লীগ ‘নাম্বার ওয়ান’

অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চায় আওয়ামী লীগ দেশে ‘নাম্বর ওয়ান’ বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, আমাদের ১০টি সাংগঠনিক জেলা সম্মেলন সুন্দরভাবে সফল হয়েছে। উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে দুই একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু জেলা, মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনে এমন কিছু হয়নি যে খারাপ খবরের শিরোনাম হতে পারে। এমনকি কমিটি ঘোষণার সময় স্বাভাবিক যে বিশৃঙ্খলা হয়ে থাকে সেটাও হয়নি। আমি দাবি করব এখনো অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চায় আওয়ামী লীগ এ দেশে নাম্বার ওয়ান। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এদেশে সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল ও ঐক্যবদ্ধ।

রোববার বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপ-কমিটির বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ও সবার সহযোগিতায় চারটি সহযোগী ও ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সম্মেলনের নয় নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তার ঘোষিত শুদ্ধি অভিযান, সেই শুদ্ধি অভিযানের সঙ্গে প্রাসঙ্গিকতা ও সঙ্গতি রেখে একদিকে যেমন আমাদের প্রত্যেকটি সম্মেলন যেমন সুশৃঙ্খল এবং স্বতঃস্ফূর্ত হয়েছে তেমনি নেতৃত্ব নির্বাচনেও শৃঙ্খলার পরকাষ্ঠা প্রদর্শিত হয়েছে। আমাদের দল শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ‘সলিডলি’ ঐক্যবদ্ধ সেটা প্রমাণিত হয়েছে। এই কয়েকটি সম্মেলনে সফল সমাপনীর মধ্য দিয়ে এটাই প্রমাণিত হয়েছে। জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে আমরা দেশের জনগণের কাছে ‘ক্লিন ইমেজের’ বার্তা দিতে পেরেছি।

জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন পুরাতনের সমন্বয়ে আমরা আমাদের দলকে ঢেলে সাজাব- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রযুক্তির সঙ্গে ঐতিহ্য, ‘আইডিয়ালিজমের’ সঙ্গে ‘রিয়ালিজম’ এবং আধুনিকতার সঙ্গে বিশ্বাসের মধ্যে ‘ব্যালেন্স’ করে আমরা আওয়ামী লীগকে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে নিয়ে যাব। আমরা এমনভাবে পার্টিকে সাজিয়ে নিচ্ছি যাতে মুজিববর্ষ উদযাপন এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের আমরা সারা দুনিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারি। সেখানে আন্তর্জাতিকভাবেও বিভিন্ন ‘ইভেন্টে’ বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ, সরকার প্রধান এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন। কাজেই আমরা সেভাবে আমাদের দলকে প্রস্তুত করতে চাই।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী দুইবছর আমাদের অলস হয়ে ঘরে থাকার কোনো সুযোগ নেই। পুরো দুটো বছরই আমাদের কর্মযজ্ঞ, পুরো দুটো বছরেই কোনো না কোনো কর্মসূচির মধ্যে আমাদের থাকতে হবে। এ জন্য আমাদের নেতাকর্মীকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানাই। যেন নেত্রীর ডাকে আমাদের সব সংগঠন শৃঙ্খলার সঙ্গে শক্তি প্রদর্শন করতে পারি। সম্মেলনে আমরা সাজসজ্জার দিকে না গিয়ে, আমাদের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা, সৌন্দর্য্য এবং শৃঙ্খলা বৃদ্ধির জন্য আমাদের কর্মতৎপরতা অব্যাহত থাকবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা একটা সুশৃঙ্খল জাতীয় কাউন্সিল করতে চাই। তাই যাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয় সেটা পালন করা হয়। এতে যেন কোনো গাফিলতি এবং আমাদের দলের সুনাম ও ভাবর্মূতি যাতে ক্ষুণ্ণ না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখবেন।

তিনি বলেন, আমাদের সামনে অনেক কাজ, অনেক চ্যালেঞ্জ। আন্দোলন, নির্বাচনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি ও তার দোসররা চক্রান্ত করছে নৈরাজ্য করে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অশুভ পায়তারা করছে। আদালত প্রাঙ্গণকে তারা রণাঙ্গণে পরিণত করেছে। তারা আইন, বিচার এবং আদালত মানে না। রাজনীতিকে আমরা রাজনীতি দিয়ে মোকাবেলা করবো। কিন্তু অরাজনৈতিকভাবে সহিংসতার পথে গেলে তারাও সমুচিত জবাব দিতে আওয়ামী লীগ জানে।

দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে যদি দেশে কোন নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়; শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সেটা আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করব। সহিংসতা করা উদ্ভূত পরিস্থিতি যখন যা করা প্রয়োজন সেটাই করা হবে এবং সমুচিত জবাব দেয়া হবে।

‘সরকারি দল টাকা বানানোর রোগে আক্রান্ত’ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন অভিযোগের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির জন্য পাঁচবার ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন’ হাওয়া ভবনে বিকল্প পাওয়ার হাউজ সৃষ্টি করে বিএনপির টাকা বানানোর মেশিন ছিল, আওয়ামী লীগে টাকা বানানোর বিকল্প কোনো ‘পাওয়ার সেন্টার’ নেই। আমাদের সম্পদ হলো দেশের জনগণের ভালোবাসা। আমাদের মধ্যে যারা দুর্নীতি করবে তাদের রেহাই নেই, শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা কাজের প্রমাণ দিয়েছেন। গুটি কয়েক অপকর্মকারীদের দায় দলের ত্যাগী কর্মীরা কেন নেবে? তাই নেত্রী যে পথ বেছে নিয়েছেন সেটা সঠিক পথ হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর শুদ্ধি অভিযানের সফলতা প্রত্যাশা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, গুটিকয়েক অপকর্মকারীর জন্য গোটা পার্টির বদনাম হতে পারে না। যারা অপরাধ অপকর্ম করে তারা গুটিকয়েক। তার দায় আমরা এতো ত্যাগী নেতাকর্মীরা কেন নেব? কাজেই নেত্রী যা করেছে সঠিক করেছে। নেত্রী যে পথ বেছে নিয়েছে সঠিক পথ বেছে নিয়েছে। আমরা নেত্রীর সঙ্গে আছি। আমরা তার পাশে আছি।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপ কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মির্জা আজম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসসহ উপ-কমিটির সদস্যরা।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নবনির্বাচিত সভাপতি সাধারণ সম্পাদক এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বিএ-১৫/০১-১২ (ন্যাশনাল ডেস্ক)