খালেদা জিয়ার মুক্তি সরকারের হাতে নেই

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি সরকারের হাতে নেই উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা। সরকার কীভাবে তাকে মুক্তি দেবে? মামলটি রাজনৈতিক হলে তাকে রাজনৈতিক বিবেচনায় মুক্তির প্রশ্ন ছিল।

মঙ্গলবার ঢাকা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে খুলনা বিভাগীয় অঞ্চলের নেতাদের সঙ্গে আয়োজিত যৌথ সভায় তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে দলটির নেতারা রাজনৈতিক ইস্যু তৈরির সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে বিএনপি জনবিস্ফোরণের চেষ্টা করছে। তারা সব কিছুতেই রাজনীতি করতে চায়। তাই দলের নেত্রীর মুক্তির বিষয় নিয়েও রাজনীতি করছে। আন্দোলন ও নির্বাচনে ব্যর্থ হয়ে তারা সরকারকে হঠানোর জন্য নতুন ষড়যন্ত্র করছে।

খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ফখরুল সাহেব ঝানু রাজনীতিক হতে পারেন কিন্তু তিনি তো চিকিৎসক নন। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কেমন, তা তিনি কিভাবে বুঝবেন? চিকিৎসার বিষয়ে মির্জা ফখরুল তো আর সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। চিকিৎসকরা বলছেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা বার্ধ্যক্যের কারণে। এই বয়সে তার শারীরিক অবস্থা যেমন থাকার কথা ঠিক তেমনই আছে। কিন্তু মির্জা ফখরুল একবার বলেন তার শারীরিক অবস্থা খারাপ আবার বলেন, মানবিক কারণে মুক্তি দেওয়ার কথা।

খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সঙ্গে ফোনালাপ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, মির্জা ফখরুল ফোনে আমাকে অনুরোধ করে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয় নিয়ে যেন কথা বলি। সেটি তিনি অস্বীকার করলে তা প্রমাণ করারও সুযোগ রয়েছে। ফখরুলের সঙ্গে ফোন কলের রেকর্ড আছে। সুতরাং এখানে অসত্য কথা বলার কিছু নেই। তিনি অনুরোধ করেছেন। এখন কী তিনি প্রমাণ করতে চান যে অনুরোধ করেননি। তাহলে কিন্তু প্রমাণ দিয়ে দিতে হবে। আমি এতো নিচে যেতে চাই না। উনি নিজেকে কেন এতো নিচে নিয়ে যাচ্ছেন?

খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি বিষয়ে ফোনালাপে কোনো কথা হয়েছে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্যারোল নিয়ে মির্জা ফখরুল কোনো কথা বলেননি। প্যারোল দিতে গেলে একজন বন্দিকে বন্দির চেয়েও বড় কথা তিনি কনভিক্টেট প্রিজনার। কনভিক্টের প্রিজনারকেও প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার নিয়ম আছে। কিন্তু তারা কোনো আবেদনই করেননি। কাজেই সেই নিয়মটি আছে কি-না, যুক্তিযুক্ত কোনো কারণ আছে কি-না তাকে মুক্তি দেওয়ার, সেটা বিবেচনার কোনো অবকাশ নেই।

মুজিব বর্ষ নিয়ে যেন চাঁদাবাজি না হয়: খুলনা বিভাগীয় আওয়ামী লীগের যৌথসভা শেষে মুজিববর্ষে নানা আয়োজন নিয়েও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।

জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজনকে ঘিরে চাঁদাবাজির মতো কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ড সহ্য করা হবে না বলে দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, মুজিব বর্ষ শৃঙ্খলার মধ্যে উদযাপন করবেন। সুতরাং এটি নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি সহ্য করা হবে না। মুজিব বর্ষের নামে যে তোড়জোর দেখছি, তা যেন চাঁদাবাজির দোকান না হয়। বঙ্গবন্ধুকে তাহলে ছোট করা হবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, চাঁদাবাজির দোকান খুলে বঙ্গবন্ধুর মহিমাকে বড় করা যাবে না। কাজেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, জেলায় জেলায় যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, দলীয় ও সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আপনাদের প্রোগ্রাম সাজাতে হবে। যেখানে সেখানে যত্রতত্র চাঁদাবাজি করে বঙ্গবন্ধুর নামে মুজিব বর্ষের একটা দোকান খোলা হবে, সেটিতে সায় দেবেন না। কোনো অবস্থায়ই অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলাকে মদদ দেওয়া যাবে না। যারা এসব করবে তাদের অপতপরতা বন্ধ করে দিতে হবে।

খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক ও মির্জা আজম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ূয়া, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় সদস্য পারভীন জামান কল্পনা, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বিভাগের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বিএ-০৯/১৮-০২ (ন্যাশনাল ডেস্ক)