জিয়াউর রহমানের মরদেহ পুড়িয়ে হালদা নদীতে ফেলা হয়

দীর্ঘ ৪০ বছর আগে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে নিহত হওয়ার সময় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরনে ছিল সাদা পাঞ্জাবি এবং পায়জামা।

প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দির পাশাপাশি মামলার এজাহারেও তাই উল্লেখ করা হয়েছে। এরমাঝে রাঙ্গুনিয়ার কবর থেকে যাদের লাশ তুলে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাদের সবার পরনে ছিল সামরিক পোশাক। এদিকে, রাঙ্গুনিয়ায় পৌঁছানোর আগেই জিয়াউর রহমানের মরদেহ গাড়িসহ পুড়িয়ে হালদা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল-এমন তথ্যও মিলছে কোনো কোনো সূত্রে।

ঢাকার চন্দ্রিমা উদ্যানের সমাধি নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কের প্রেক্ষাপটে তখনকার প্রতক্ষ্যদর্শীদের সঙ্গে আলাপচারিতার ভিত্তিতে বেশ কিছু তথ্য উঠে এসেছে।

পুলিশের তৎকালীন সহকারী কমিশনার মোকাররম হোসেনের দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ৩০ মে দিবাগত রাত ৪টায় হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমানে লাশ দীর্ঘক্ষণ সিঁড়িতেই পড়ে ছিল। পুলিশ সদস্যরা লাশ উদ্ধারে গেলে কর্নেল মাহফুজ বাধা দেন। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর আরও কয়েকজন সদস্য গিয়ে জিয়াউর রহমানসহ নিহত অন্যান্য সেনা সদস্যদের লাশ গাড়িতে করে নিয়ে যান।

অভিযোগ উঠে মেজর খালেদের নেতৃত্বে একটি টিম মরদেহ নিয়ে রাঙ্গুনিয়া যাওয়ার পথে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ওয়ারল্যাস মেসেজ পেয়ে মেজর খালেদ বাকি লাশ রাঙ্গুনিয়া পাঠিয়ে দিলেও জিয়াউর রহমানের মরদেহবাহী গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। পরবর্তীতে মদুনাঘাট ব্রিজ থেকে পোড়া লাশ এবং গাড়ি ফেলে দেওয়া হয় হালদা নদীতে।

ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্তদের জবানবন্দি শ্রবণকারী মুক্তিযোদ্ধা সিরু বাঙালি জানান, মেজর খালেদ মৃত্যুর আগে তিনি প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ একজনকে দিয়ে গিয়েছিলেন তিনিও বর্তমানে জীবিত নেই। তিনি বলেছিলেন নিজের হাতেই জিয়ার লাশ পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে আমরা সবাই লাশবাহী গাড়িটাকে ঠেলে হালদা নদীতে ফেলে দিয়েছি।

জিয়াউর রহমানের লাশ পুড়িয়ে ফেলার সত্যতা বিএনপি নেতারা নাকচ করে দিলেও জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার সময় তার পরনে সাদা পাঞ্জাবি এবং পায়জামা ছিল বলে নিশ্চিত করেছেন তারা। মামলার এজাহারেও পুলিশ একই ধরনের পোশাকের কথা উল্লেখ করে।

নগর বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয় রাত সাড়ে ১২টার সময়, তার বেড রুমে, তিনি গেঞ্জি এবং পায়জামা পরা অবস্থায় ছিলেন। আমরা কথা বললাম, কথা বলার পর আমি চলে আসলাম। আমরা চলে আসার পর খবর পেলাম রাত চারটার সময় যে এরকম ঘটনা ঘটেছে এখানে।

ইতিহাসবিদদের মতে, হত্যাকাণ্ডের পর দু’দিনেও যখন জিয়ার লাশের হদিস মিলছিল না, তখন রাঙ্গুনিয়ার একটি মাজারের পাশের কবর থেকে কয়েকজনের মরদেহ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ঢাকায়।

মুক্তিযোদ্ধা ও লাশ তোলার প্রত্যক্ষদর্শী কুতুব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ওখান থেকে যে তিনজনের মরদেহ তোলা হয়েছিল তাদের সবার পরনে সামরিক পোশাক পরা ছিল। ওখানে পাঞ্জাবি বা গেঞ্জি পরা কারও লাশ তোলা আমি দেখিনি।

বিএনপির দাবি, রাঙ্গুনিয়া থেকে উত্তোলনের পর জাতীয় সংসদ ভবনের পার্শ্ববর্তী চন্দ্রিমা উদ্যানেই জিয়াউর রহমানকে সমাহিত করা হয়েছিল। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সেখানে জিয়াউর রহমানকে সমাহিত করা হয়নি। ১৯৮১ সালের সেই কফিনে জিয়াউর রহমানের মরদেহ ছিল না বলেই পরিবারকে প্রথা অনুযায়ী লাশের মুখ দেখতে দেয়নি তৎকালীন প্রশাসন।

এসএইচ-১১/১৪/২১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)