ইভ্যালির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা খারিজ

প্রতারণার অভিযোগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলা খারিজ করে দিয়েছেন সাইবার ট্রাইব্যুনাল।

বৃহস্পতিবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আস সাম জগলুল হোসেনের আদালতে আলমগীর হোসেন রিগ্যান নামে এক শিক্ষানবীশ আইনজীবী মামলা করেন। আদালত মামলাটির গ্রহণ করার মতো কোন উপাদান না থাকায় তা খারিজ করে দেন।

মামলায় ইভ্যালির ১০ জনকে আসামি করা হয়। তারা হলেন- ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল, চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন, ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ জাহিদ, মেহেদী হাসান, কো-ফাউন্ডার আতিউর রহমান, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আরিফুল্লাহ খান, এহসান চৌধুরী, ডিরেক্টর ফিরোজ হোসেন, হেড অব কমার্শিয়াল সাজ্জাদ আলম ও চিফ অপারেটিং অফিসার তরিকুল কামরুল।

এদিকে, বৃহস্পতিবার ঢাকার ধানমন্ডি থানার প্রতারণার আরেক মামলায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেলকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

ধানমন্ডি থানার প্রতারণার মামলায় একদিনের রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার রাসেলকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এ মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এসময় একই থানার প্রতারণার আরেক মামলায় পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন আদালত।

এর আগে মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হক ধানমন্ডি থানার প্রতারণার মামলায় মোহাম্মদ রাসেলকে একদিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন। অন্যদিকে রাসেলের স্ত্রী ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের রিমান্ড ও জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

ওই দিন গুলশান থানার প্রতারণার মামলায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে তাদের ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এরপর ধানমন্ডি থানার প্রতারণার আরেক মামলায় তাদের সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে পুলিশ।

গুলশান থানার মামলায় রিমান্ডে থাকাকালীন ধানমন্ডি থানায় রাসেল-নাসরিন দম্পতির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আরেকটি মামলা হয়েছে। এ মামলার বাদী মো. কামরুল ইসলাম চকদার নামে এক গ্রাহক। মামলায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ২০ জনকে আসামি করা হয়।

এর আগে শুক্রবার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। যা শেষ হয়েছে সোমবার।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা সিইও রাসেল ও তার স্ত্রী চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এরপর শুক্রবার

ইভ্যালির চেয়ারম্যান মো. রাসেল ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন আদালত।

এরপর এদিন রাতে হঠাৎ অসুস্থবোধ করায় মোহাম্মদ রাসেলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে নেওয়া হয় মিডফোর্ড হাসপাতালে। তবে শারীরিক গুরুতর কোনো সমস্যা না থাকায় আবারও তাকে থানায় নেওয়া হয়।

রিমান্ডে কোনো টাকা আত্মসাৎ করেননি বলে দাবি করেছেন মোহাম্মদ রাসেল। তিনি বলেন, গ্রাহক জেনেবুঝেই পণ্য অর্ডার করেছে, যারা ডেলিভারি পায়নি ভবিষ্যতে টাকা পেয়ে যাবে। এখানে প্রতারণার কোনো বিষয় ছিল না।

পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রের বরাত দিয়ে এমন খবর জানায় গণমাধ্যমগুলো। বলা হয়, স্টক শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে অনেক সময় পণ্য ডেলিভারি দিতে পারেননি ইভ্যালি। যাদের পণ্য ডেলিভারি দিতে পারেনি তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। অনেকের ফেরত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও দাবি করেছেন রাসেল।

গ্রাহকদের টাকা আটকানোর বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল দাবি করেন, জুলাই থেকে এ পর্যন্ত মোট তিন লাখ অর্ডার ডেলিভারি করেছে ইভ্যালি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা (১০% অ্যাডভান্স) এবং ইভ্যালিতে কেনাকাটায় একের পর এক ব্যাংক লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় ইভ্যালির নগদ জমার পরিমাণ কমতে থাকে। ফলে রিফান্ড প্রক্রিয়ার গতি ধীর হয়ে যায়।

২০১৬ সালে প্রথমে অনলাইনে ডায়াপার বিক্রি দিয়ে যাত্রা শুরু করেন রাসেল। ২০১৭ সালে এই ব্যবসা করতে গিয়ে বড় একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের কথা চিন্তা করেন তিনি। সেই চিন্তা থেকেই প্রতিষ্ঠা করেন দেশীয় ই-কমার্স কোম্পানি ‘ইভ্যালি’। প্রায় ১৭ লাখ নিয়মিত ক্রেতা, ২০ হাজারের বেশি বিক্রেতা নিয়ে বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতে স্বল্প সময়ে প্রথম সারিতে উঠে আসে ‘ইভ্যালি’।

এসএইচ-২৭/২৩/২১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)