শিশু সন্তানকে নিয়ে বিদেশ পালানোর ঘটনায় দাদাকে হাইকোর্টে তলব

আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও হাজির না হয়ে তিন বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পালিয়ে যান বাংলাদেশি বাবা শাহিনুর টি আই এম নবী। এ ঘটনায় শিশুর দাদা টিম নবীকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ৭ ডিসেম্বর তাকে হাজির হতে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার ভারতীয় নাগরিক সাদিকা সাঈদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

সেই সঙ্গে শিশুর দাদা যেন দেশত্যাগ না করতে পারে, এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ফেসবুকে উচ্চ আদালত নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করার ঘটনায় তাকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া আদালতের আদেশ অমান্য করে শিশুকে নিয়ে দেশত্যাগ করায় বাবা সানিউর টি আই এম নবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। তার বাংলাদেশি পাসপোর্টের কার্যকারিতা সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।

এদিন আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম ও ব্যারিস্টার ফাইজা মেহরিন।

এর আগে শিশুসহ তার বাবাকে রোববার বিকাল ৩ টার মধ্যে হাজির করতে ডিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পরে মামলাটি শুনানিতে ওঠলে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান আদালতকে জানান, গত ১৬ নভেম্বর ওই শিশুকে নিয়ে তার বাবা অস্ট্রেলিয়া চলে গেছেন।

আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমারের কাছে জানতে চান, শিশুসহ বাবার দেশত্যাগের ঘটনা আদালত অবমাননার পর্যায়ে পরে কিনা? জবাবে তিনি বলেন, এটি অবশ্যই আদালত অবমাননার শামিল।

পরে আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ২৩ নভেম্বর দিন নির্ধারণ করেন।

গত ১৬ নভেম্বর শিশু সন্তানকে নিয়ে তার বাবা বাংলাদেশি নাগরিক শাহিনুর টি আই এম নবীকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। একই বিষয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশকে এ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। শিশুর মা ভারতীয় নাগরিক সাদিকা সাঈদের রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট এ আদেশ দেন।

তবে শিশুর বাবার আইনজীবী থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

গত ২৫ আগস্ট হাইকোর্ট দুই মাসের জন্য ওই শিশুকে ভারতীয় নাগরিক মা সাদিকা সাঈদের হেফাজতে রাখতে আদেশ দেন।

আদেশে বলা হয়, মা ও শিশু মানবাধিকার সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল এন্ড ডেভোলপমেন্টের (ফ্লাড) ব্যবস্থাপনায় থাকবে। তবে বাংলাদেশি বাবা সপ্তাহে তিনদিন সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত শিশুর সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন। এই দুই মাস সাদিকা সাঈদের পাসপোর্ট গুলশান থানায় জমা রাখতে বলা হয়।

তবে হাইকোর্টের আদেশের পর শিশুর বাবা তার সন্তানকে উন্নত পরিবেশে গুলশান রাখার ইচ্ছার কথা জানান। শিশুর মঙ্গলের কথা চিন্তা করে মা রাজি হন। এরপর থেকে গুলশান ক্লাবেই শিশুর মাসহ তারা অবস্থান করছিলেন।

এক পর্যায়ে বেড়ানোর কথা বলে গুলশান ক্লাব থেকে শিশুকে নিয়ে যান তার বাবা। তবে এরপর আর শিশুকে গুলশান ক্লাবে মায়ের কাছে দিয়ে যাননি বাবা। এর মধ্যে শিশুর মায়ের বিরুদ্ধে জিডি ও মামলাও করা হয়।

পরে গত ১৫ নভেম্বর শিশুটিকে হাজির করতে আইনজীবীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু শিশুর বাবা আইনজীবীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। এ কারণে আইনজীবী থেকে ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন।

প্রসঙ্গত, ভারতের বিয়ে সংক্রান্ত ওয়েবসাইট থেকে অন্ধপ্রদেশের হায়দরাবাদের সাদিকা সাঈদ শেখ নামে এক নারীকে পছন্দ করেন বারিধারার এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান শাহিনুর টি আই এম নবী। মেয়েটিও হায়দারাবাদের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের। ২০১৭ সালে হায়দরাবাদে তাদের ঘটা করে বিয়ে হয়।

বিয়ের পর মালেশিয়ার কুয়ালালামপুরে বসবাস শুরু করেন তারা। কয়েক মাস পর ঢাকায় চলে আসেন। এর মধ্যে এই দম্পতি ২০১৮ সালে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। এক পর্যায়ে তাদের সংসারে অশান্তি নেমে আসে। সাদিকা শেখকে মারধরও করেন তার স্বামী।

ভারতের আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। বিষয়টি ভারতে মেয়েটির আত্মীয় স্বজনরা জানতে পারেন। তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথমে ভারতীয় হাই কমিশনে যোগাযোগ করা হয়। তারপরও সমাধান হয়নি। পরে মেয়েটির বোন মানবাধিকার সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল এন্ড ডেভোলপমেন্টের (ফ্লাড) কাছে আইনি সহায়তা চান।

এরপর গত ৮ আগস্ট সাদিকা শেখ ও তার শিশু সন্তানসহ আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে রিট করে ফাউন্ডেশন ফর ল এন্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) পরিচালক ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষক লুলান চৌধুরী।

এদিকে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করার পরপরই বাংলাদেশি নাগরিক শাহিনুর টি আই এম নবী ভারতীয় নাগরিক সাদিকা সাঈদ শেখকে (স্ত্রী) ডিভোর্স দেন।

এসএইচ-১৮/২৩/২১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)