তেলের দাম কমানোর বিষয়ে যা জানালেন অর্থমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম এখনও স্থিতিশীল নয় উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, তেলের দাম কমে স্থিতিশীল হলে সরকারও দেশে তেলের দাম কমাবে।

বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম এখনও উঠানামা করছে। কোনো দিন জ্বালানি তেলের দাম ২০ ডলার কমে যাচ্ছে, তো পরের দিন ২ ডলার বাড়ছে। যখন তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমে স্থিতিশীল হবে, তখন আমরাও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

এসময় অর্থপাচারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পত্র-পত্রিকায় কিছু নাম আমি পেয়েছি, যাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা কাজ করছে। সেই সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। গত দুই বছরে অর্থপাচার বন্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার অগ্রগতি কী এবং কতজন শাস্তি পেয়েছে, সে তথ্য তুলে ধরা হবে।

সেই সঙ্গে অর্থপাচারকারীদের সম্পর্কে জানতে অর্থমন্ত্রীর নিজস্ব কোনো পদ্ধতি রয়েছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমার কোনো পদ্ধতি নেই। পদ্ধতি রয়েছে সরকারের। কেউ পাচার করলে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়, তাকে গ্রেপ্তার করে জেলে নেওয়া হয়। বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের শাস্তি দেওয়া হয়।

এ দিকে করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন বাংলাদেশে এখনও সংক্রমিত হয়নি জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, যদি এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে এবং তাতে দেশের মানুষ ও অর্থনীতির ওপর কোনো প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে তা মোকাবিলায় অতীতের মতো সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এর আগে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ১৩টি প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। অনুমোদিত ১৩টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ৮ হাজার ২৬৯ কোটি ৫ লক্ষ ৬৫ হাজার ৪৮২ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি হতে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৮৩৬ কোটি ১৭ লক্ষ ৬৯ হাজার ৩৫৯ টাকা এবং দেশিয় ব্যাংক ও বিশ্বব্যাংক হতে ঋণ ৪ হাজার ৪৩২ কোটি ৮৭ লক্ষ ৯৬ হাজার ১২৩ টাকা।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের বিরুদ্ধে টিকার কার্যকারিতা নিয়ে মডার্নার সিইও সন্দেহ প্রকাশের পর মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম প্রায় ৩ শতাংশ কমে গেছে। এতে তেলের চাহিদা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

তবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলেও, এর প্রভাব দেশের তেলের বাজারে এখনও পড়েনি।

এর আগে গত ৩ নভেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দেশে তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়। ভোক্তাপর্যায়ে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার।

এ বিষয়ে ৫ নভেম্বর জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি পেতে থাকায় সর্বাধিক ব্যবহৃত ডিজেলের ক্ষেত্রে বিপিসি লোকসানের সম্মুখীন হয়।

চলতি বছরের জুনে ডিজেলে লিটারপ্রতি ২ টাকা ৯৭ পয়সা, জুলাইয়ে ৩ টাকা ৭০ পয়সা, অগাস্টে ১ টাকা ৫৮ পয়সা, সেপ্টেম্বরে ৫ টাকা ৬২ পয়সা এবং অক্টোবরে ১৩ টাকা ০১ পয়সা লোকসান দিয়েছে বিপিসি।

এ হিসাবে গত সাড়ে পাঁচ মাসে ডিজেলের ক্ষেত্রে বিপিসির মোট লোকসানের পরিমাণ প্রায় ১১৪৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা; যা সরকারি ভর্তুকি দিয়ে সমন্বয় করতে হবে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।

ব্যাখ্যায় বলা হয়, সার্বিক প্রেক্ষাপটে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে সরকার ৪ নভেম্বর থেকে দেশে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য পুনর্নির্ধারণ করেছে, যদিও আশপাশের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডিজেলের মূল্য এখনো কম।

ব্যাখায় সর্বশেষ দাম বাড়ানো ও কমানোর তথ্যও তুলে ধরা হয়। বলা হয়, সরকার ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে দেশে ডিজেলের মূল্য লিটারপ্রতি ৬৮ টাকা নির্ধারণ করেছিল। পরে ২০১৬ সালের এপ্রিলে তা ৩ টাকা কমিয়ে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে।

মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়, বর্তমান ক্রয়মূল্য বিবেচনা করে বিপিসি ডিজেলে লিটার প্রতি ১৩.০১ এবং ফার্নেস অয়েলে লিটার প্রতি ৬.২১ টাকা কমে বিক্রয় করায় প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে। অক্টোবরে বিভিন্ন গ্রেডের পেট্টোলিয়াম পণ্যে মোট ৭২৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।

এসএইচ-১২/০১/২১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)