দেশে ওমিক্রন আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়াল ৩০

দাপিয়ে বেড়ানো করোনার নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টে নাজেহাল বিশ্বব্যাপী। একের পর এক নতুন ধরনে আক্রান্ত ও মৃত্যুহার বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে দেশে করোনার অতি সংক্রমক ওমিক্রন ধরনে নিশ্চিত সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ত্রিশে দাঁড়িয়েছে। দেশে করোনা রোগীর নমুনার জিন বিশ্লেষণে ওমিক্রনে সংক্রমিত এ রোগী শনাক্ত হয়েছে।

সোমবার  করোনার জিনোমের উন্মুক্ত বৈশ্বিক তথ্যভাণ্ডার জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটাতে (জিআইএসএআইডি) আজ এ তথ্য জানিয়েছে।

এর আগে গত শুক্রবার জিআইএসএআইডিতে বাংলাদেশে ওমিক্রনে সংক্রমিত নিশ্চিত রোগীর সংখ্যা ছিল ২০। তিন দিনের ব্যবধানে এ সংখ্যা বেড়ে ৩০ দাঁড়াল। ৩০ জনই ঢাকার।

গত ১০ ডিসেম্বর দেশে প্রথম ওমিক্রন শনাক্ত হয়। দেশে প্রথম ওমিক্রনে সংক্রমিত হন জিম্বাবুয়েফেরত বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটার। তারা ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

বর্তমানে দেশে করোনার সংক্রমণ আবারও ঊর্ধ্বমুখী। করোনায় মৃত্যু, নতুন রোগী ও নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার সবই বাড়ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে নতুন রোগী বেড়েছে ১১৫ শতাংশ। একই সময়ে করোনায় মৃত্যু বেড়েছে ১৫ শতাংশ।

তবে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, সংক্রমণ আরও বাড়বে।

ওমিক্রন সারা বিশ্বে অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। করোনার আর কোনো ধরনকে এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়নি। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ায় ইউরোপের দেশগুলোর পরিস্থিতি আবার খারাপ আকার ধারণ করেছে। প্রতিবেশী ভারতেও সংক্রমণ বাড়ছে।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, দেশে করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। এ অবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব বেশিসংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে জিন বিশ্লেষণ হয় কম। ৫০০ শনাক্ত রোগীর মধ্যে মাত্র ১ জনের নমুনার জিন বিশ্লেষণ করা হয়। এত কমসংখ্যক নমুনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে কোন ধরন, কী পরিমাণে ছড়াচ্ছে, তা বলা মুশকিল।

আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর সময় সংবাদকে বলেন, আমরা ডাটা যেটা দেখছি, সেটা ২০ জনের শনাক্ত হয়েছে কিন্তু বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা শহরে রোগী আছে, সেটা হয়তো আমাদের শনাক্তের মধ্যে নেই।

আইইডিসিআরের এ প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, এখন যে সংক্রমণ হচ্ছে তার একটা নিশ্চিতভাবে হলেও ওমিক্রন দিয়ে শনাক্ত হচ্ছে, ওমিক্রন ক্রমান্বয়ে বাড়তে শুরু করবে এটা স্বাভাবিক। ওমিক্রন হয়তো বাড়ছেও কিন্তু এখনো ডেল্টাকে রিপলেস করতে পারে নাই, ডেল্টাই আমাদের এখানে প্রি-ডমিন্যান্ট।

তবে আক্রান্তের হার বাড়ার পেছনে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষাসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে উপচেপড়া ভিড়কে দায়ী করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, স্কুলটা এক মাসের জন্য বন্ধ রাখা যেতে পারে, ‍বৃহৎ জনজট আমাদের হয়ে থাকে সেগুলো আমি আপাতত বন্ধ রাখার পরামর্শ দিতে চাই।

দেশে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম সন্তোষজনক উল্লেখ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে গতি আরও বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সরকার বলছে, দেশের ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী সব শিক্ষার্থীকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে করোনার টিকা দিতে হবে। টিকা গ্রহণ ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে না। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এক আদেশে এ কথা বলেছে।

এসএইচ-০৭/১০/২২ (ন্যাশনাল ডেস্ক)