গুম হওয়া ব্যক্তির স্বজনদের হয়রানির অভিযোগকে মনগড়া বলছে পুলিশ

‘গুম হওয়া ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাদা কাগজে সই দিতে চাপ ও গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারকে হয়রানি করছে পুলিশ’- বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ভবিষ্যতে এ ধরনের অতিরঞ্জিত, বিকৃত ও মনগড়া তথ্য প্রকাশ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ।

শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানে এক প্রতিবাদলিপিতে ডিএমপি এ আহ্বান জানায়। প্রকাশিত প্রতিবেদনে অতিরঞ্জিত ও বিকৃত সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) অভিযোগ করে, ‘গুম নয়, উক্ত ব্যক্তি আত্মগোপনে গেছেন’ বলাতে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের কাছ থেকে জোর করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

বিবৃতিতে আসক আরও জানায়, বিভিন্ন সময়ে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গত কিছুদিন ধরে নানাভাবে যোগাযোগ করছেন এবং নানা ধরনের প্রশ্ন বা তথ্য জানতে চাওয়ার মাধ্যমে তাদের হয়রানি করছেন। একই সঙ্গে পরিবারগুলোর কাছ থেকে জোর করে লিখিত কাগজে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে, যেখানে লিখিত রয়েছে যে, ‘উক্ত ব্যক্তি গুমের শিকার হননি, তিনি আত্মগোপন করেছেন।’

ডিএমপি বলছে, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ‘গুম হওয়া’ সংক্রান্ত দায়েরকৃত অভিযোগের বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন এবং উপস্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে নিতে ভুক্তভোগী ও অভিযোগ প্রদানকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করা পুলিশ বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রথাগত দায়িত্ব।

এই দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে পুলিশ মাঝেমধ্যে ভুক্তভোগীর পরিবার কিংবা অভিযোগকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর পরিবার বা অভিযোগকারী ব্যক্তিরা পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে থাকেন।

সবুজবাগ থানা এলাকায় মাহবুব হাসান সুজন নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর সম্পর্কে ডিএমপি জানায়, পুলিশ গত ১০ জানুয়ারি তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এসময় মাহবুব হাসান সুজনের ভাই মো. শাকিল খান তার ভাইয়ের নিখোঁজ হওয়ার স্থান সম্পর্কে ভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন, যা এর আগে সবুজবাগ থানায় করা জিডিতে উল্লেখ নেই। এ ব্যাপারে লিখিতভাবে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপনের জন্য পুলিশ অনুরোধ করলে তিনি বা তার বাবা তা দিতে অস্বীকার করেন। কিন্তু পরে তিনি এ বিষয়ে মিডিয়ার কাছে মিথ্যাচার করেছেন এবং বলেছেন, পুলিশ তার বাবার কাছ থেকে সাদা কাগজে সই নেওয়ার চেষ্টা করে। অন্যদিকে একই ঘটনায় মাহবুব হাসান সুজনের সঙ্গে নিখোঁজ হওয়া কাজী ফরহাদের বোন ও ভগ্নিপতি নিখোঁজসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য লিখিতভাবে পুলিশের কাছে উপস্থাপন করেন।

মিডিয়ায় উল্লেখিত অপর ঘটনায় দেখা যায়, পল্লবী এলাকার নিখোঁজ তরিকুল ইসলাম তারা সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করতে পুলিশ তার বাসায় যায় এবং এসংক্রান্তে কাগজপত্রের কপি প্রদানের জন্য অনুরোধ করে। পরে তরিকুল ইসলামের স্ত্রী তার শ্বশুরসহ থানায় আসেন। ওই সময়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) থানার বাইরে থাকায় তাকে কিছু সময় থানায় অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু তিনি মিডিয়ার কাছে অভিযোগ করেন, পুলিশ তাকে থানায় বসিয়ে রাখে। অথচ ওসি থানায় আসামাত্র তার সঙ্গে কথা বলেন। এর ধারাবাহিকতায় তারা গত ১৩ জানুয়ারি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত আছে জানালে পুলিশ তার বাসা থেকে তা সংগ্রহ করে।

ডিএমপি যেকোনো অভিযোগ গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করে এবং প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান বা তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। পুলিশের কার্যক্রমকে হয়রানি হিসেবে উল্লেখ করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রচার করা এবং এ সম্পর্কে একতরফা বিবৃতি প্রদান করা পুলিশের তদন্তকাজে অসহযোগিতার নামান্তর বলে প্রতিবাদলিপিতে উল্লেখ করেছে ডিএমপি।

এসএইচ-২২/১৪/২২ (ন্যাশনাল ডেস্ক)