ফেসবুক লাইভে নিজের বাসায় না যেতে পারার আর্তনাদ ঢাবি শিক্ষার্থীর

ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকায় নিজ জমিতে বাড়ি করার সময় স্থানীয় প্রভাবশালীদের মারধরের শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও তার পরিবারের সদস্যরা। বর্তমানে তারা প্রাণভয়ে বাসার বাইরে অবস্থান করছেন।

শনিবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে তিনি জানান, তার নাম জহিরুল ইসলাম প্রান্ত। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ সেশনের মার্কেটিং বিভাগের একজন ছাত্র। তিনি ও তার পরিবারের সবাই যাত্রাবাড়িতে থাকেন।

প্রান্ত বলেন, আমাদের বাসায় দীর্ঘদিন ধরে একটু ঝামেলা চলছে। যেটার শুরু হয়েছে ২০১৯ সালের নভেম্বরের দিকে।

ঘটনা শুরুর বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ৫তলা বাসার পাশে একটি ফাঁকা জমিতে টিনশেড বাসা আছে। যেটা ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ভেঙে ঠিক করার পরিকল্পনা করি। সেসময় আমাদের পাশের বাড়িওয়ালা (তোফাজ্জেল হোসেন তপন) কাজে বাধা দেন। কারণ, ওই জমিতে তিনি জায়গা পাবেন।

পরে এলাকার কমিশনারের মাধমে জায়গা মেপে দেখি আমরা আরও পাশের বাসা থেকে কিছু জমি পাব। এরপর আমরা একটি মামলা করি। সে মামলার শুনানিতে আদালত রায় দিলে আমরা আবার সব ঠিকঠাক করে কাজ শুরু করি।

প্রান্ত বলেন, বাসাটি তিন তলা পর্যন্ত করার পর আবারও তারা কাজে বাধা দেয়। পাশের বাসার বাড়িওয়ালা ডিসি অফিসে অভিযোগ করে, ডিসি অফিস থেকে বলে আমরা আবার জমি মেপে ঠিক করে দেব। এরপর ডিসি অফিস থেকে এসে মাপার পর একই ফলাফল আসে যে আমরা আরও কিছু জমি পাব। তখন ডিসি বলেন, যেহেতু আদালত বলছে আপনারা কাজ করতে পারবেন তাহলে আপনারা কাজ শুরু করতে পারেন। এরপর আমরা আর কাজ শুরু করিনি। পরে শনিবার (২৮ মে) সকালে আমাদের নতুন বাসার কন্ট্রাকটর অন্য জায়গায় কাজ পাওয়ার সুবাদে কিছু কাঠ ও বাঁশ নিয়ে যেতে চাইছিল। তখন পাশের ওই বাড়িওয়ালা তাকে মারধর করে।

তিনি অভিযোগ করেন, এ ঘটনার পর তার লোকজন লাঠি নিয়ে এসে আমার ও আমার পরিবারের ওপর হামলা করে। সেই সঙ্গে আমাদের নতুন ও পুরানো বাড়িতে হামলা করে, বাসার সব দরজা-জানালা ভেঙে দিয়েছে।

প্রান্ত দাবি করেন, সকাল থেকে ৯৯৯- এ কল দিয়েও কোনো প্রকার সাহায্য পাইনি। থানায় অনেকবার কল দেয়ার পর পুলিশ আসছে। তখনও পুলিশের সামনে তারা ভাঙচুর করছিল। তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে পুলিশ চলে যায়। যাওয়ার আগে বলে যায় আবার ভাঙলে যেন তাকে কল দেয়া হয়।

এ পরিস্থিতির পর তারা এখনো পর্যন্ত ঘরছাড়া। তাদের পরিবারের সবাই এখন বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

এর আগেও ২০২০ সালে তাদের ওপর হামলা চালায় তারা। তখন প্রান্তর মাথায় আঘাত করলে অন্তত ২৯টি সেলাই দেয়া লাগে বলেও জানান তিনি।

খবরের সত্যতা যাচাই করতে প্রান্তর সঙ্গে রাত ৯টা ৫৯ মিনিটে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমি এখনো পর্যন্ত বাসার বাইরে আছি। থানায় যোগাযোগ করছি কিন্তু থানা থেকে ওসি আমাকে বলছে আমাদের নামে উল্টো মামলা হয়েছে। তাই এখন আমাদের কিছু করার নেই।’

প্রান্ত আরও বলেন, ‘আমাদের সকাল থেকে বাসায় ভেতর আটকে রেখে আক্রমণাত্মকভাবে তারা সবকিছু ভাঙচুর করছে। আমরা উপায় না পেয়ে পরে ৯৯৯- এ কল দেই। কিন্তু তারা বলে থানায় যেতে। আবার থানায় ফোন দিয়েছি যে আমাদের আটকে রাখছে। থানা থেকেও বলে আপনারা থানায় আসেন। পরে আমরা কোনো রকমে বের হয়ে থানায় গিয়ে মামলা করতে গিয়েছি। আমাদের মামলা নেয়নি, শুধু একটি অভিযোগ লিখেছে।’

এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ি থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম সময় নিউজকে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা তাদেরকে থানায় আসতে বলেছি। তারা থানায় আসলে যত সেবা লাগবে আমরা দেব। যদি পুলিশ লাগে সেটাও দেব। তবে দুই পক্ষ থেকে এখনো কোনো মামলা হয়নি।

এসএইচ-১৫/২৮/২২ (ন্যাশনাল ডেস্ক)