ফেসবুকে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, প্রতারিত ৮০০ চাকরিপ্রত্যাশী

ফেসবুকে ‘এসএসএফ প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেড’ নামে প্রতিষ্ঠানে চাকরির ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৭০০-৮০০ চাকরিপ্রত্যাশীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া চক্রের মূলহোতাসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

বুধবার রাতে ঢাকার মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৮টি মোবাইল ফোন, নগদ ৫ হাজার ৫৪০ টাকা, শতাধিক ভর্তি ফরম, দুই শতাধিক সিভি, দুটি চেকবই, দুটি অঙ্গীকারনামা, ভিজিটিং কার্ড, অর্ধশতাধিক ডিপো ও নিয়োগপত্র জব্দ করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন চক্রের মূলহোতা মো. মাছুম বিল্লাহ (৩৩), খাইরুল আলম রকি (২০), মো. কামরুজ্জামান ডেনিশ (২২), মো. মাহমুদুল হাসান (৩২), মাসুদ রানা (২৪) ও এসএম রায়হান (২৪)।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, কর্মজীবনের শুরুতে চক্রের সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নামসর্বস্ব নিয়োগ প্রতিষ্ঠানের চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখে প্রতারণার শিকার হন। এরপর তারা নিজেরাই প্রতারণাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন।

গ্রেফতার মো. মাছুম বিল্লাহ চক্রের মূলহোতা উল্লেখ করে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, তিনি নিজেকে আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দিতেন। এ পরিচয়ের কারণে ভুক্তভোগীরা তাকে ভয় পেতেন। তিনি ভুক্তভোগীদের মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করতেন।

মাছুম বিল্লাহর অন্যতম সহযোগী গ্রেফতার খাইরুল আলম রকি ও মো. কামরুজ্জামান ডেনিশ আগে সিনথিয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড নামের একটি নামসর্বস্ব কোম্পানিতে একই ভাবে প্রতারণার কাজ করতেন। কোম্পানিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের পর তারা মাছুম বিল্লাহর সঙ্গে যোগ দেন।

রকি অফিসে আসা চাকরিপ্রত্যাশীদের প্রতারণামূলক কথাবার্তা বলে মগজ ধোলাই করে জামানতের টাকা আদায় করতেন। ডেনিশ, রায়হান ও মাসুদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে দেশব্যাপী আগ্রহী প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইন্টারভিউয়ের জন্য অফিসে নিয়ে আসতেন। গ্রেফতার মাহমুদুল চাকরিপ্রত্যাশীদের ফরম পূরণ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদনপত্র জমা নিতেন।

র‍্যাব কর্মকর্তা জানান, বিজ্ঞপ্তিতে সিকিউরিটি গার্ড, সহকারী সুপারভাইজার, সুপারভাইজার, সিকিউরিটি ইনচার্জ, মার্কেটিং অফিসার, অফিস সহকারী, লেডি গার্ড, অফিস রিসিপশনস পদের বিপরীতে উচ্চ বেতন লেখা থাকতো। এছাড়া, আকর্ষণীয় সুযোগ হিসেবে ফ্রি খাওয়ার সুব্যবস্থা, কর্মদক্ষতার ওপর পদোন্নতির মতো লোভনীয় প্রস্তাব উল্লেখ করা হতো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব বিজ্ঞপ্তি দেখে অসংখ্য বেকার যুবক-যুবতি, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন।

প্রতারণার দ্বিতীয় পর্যায়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের মোবাইলে ফোন দিয়ে একটি নির্দিষ্ট তারিখে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ অফিসে এসে ইন্টারভিউ দিতে বলা হতো। তৃতীয় ধাপে চাকরিপ্রত্যাশীদের বিভিন্ন প্রতারণামূলক কথাবার্তা বলে মগজ ধোলাই করা হতো। এরপর তাদের কাছ থেকে ভর্তি ফরম, ট্রেনিং এবং আইডি কার্ড বাবদ সাড়ে ১২ হাজার টাকা জামানত আদায় করা হতো।

পরবর্তীতে সিকিউরিটি অফিসে যোগদান করলে তাদের নিয়োগপত্রে উল্লেখ করা হতো প্রতি মাসে নতুন নতুন চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহ করতে হবে এবং নতুন চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহের ভিত্তিতে কমিশন হিসেবে তাদের বেতন দেয়া হবে। কিন্তু কাজে যোগদান করার পর চাকরিপ্রার্থীদের কোনো বেতন দেয়া হতো না।

কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভুক্তভোগীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে কাগজে লিখিয়ে নেয়া হতো, তারা স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন এবং কোম্পানির সঙ্গে তাদের কোনো আর্থিক লেনদেন নেই। এভাবে অভিযুক্তরা গত ৮ মাসে প্রায় ৭ থেকে ৮০০ জন চাকরিপ্রার্থীকে তাদের কোম্পানির নিয়োগ ফরম পূরণ করিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।

এসএইচ-২০/০৪/২২ (ন্যাশনাল ডেস্ক)