জ্বালানি সাশ্রয় নীতিতে ফের পরিবর্তন, ব্যয় বাড়ার শঙ্কা

আবারও পরিবর্তন এলো জ্বালানি সাশ্রয় নীতিতে। এখন পুরোদমে উৎপাদনে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র। মূলত লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় ডিজেলের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। যদিও এ কারণে বাড়বে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয়। কিন্তু বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ও রফতানিমুখী শিল্পের উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে অন্য কোনো বিকল্প ছিল না বলে জানিয়েছেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন।

জ্বালানি সাশ্রয়ে গত ১৯ জুলাই থেকে সরকারের নতুন পরিকল্পনায় বন্ধ করে দেয়া হয় ডিজেলচালিত সব বিদ্যুৎকেন্দ্র। তবে লোডশেডিংয়ে জেনারেটর চালুসহ বিভিন্ন বিকল্প ক্ষেত্রে ডিজেলের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই আসে নতুন সিদ্ধান্ত, শুরু হয় দ্বৈত জ্বালানির দুইটি কেন্দ্রে ডিজেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন।

কিন্তু তাতেও সহনীয় মাত্রায় রাখা যায়নি লোডশেডিং। ফলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় আবারও বদল আনতে হলো জ্বালানি সাশ্রয় নীতিতে। যার ভিত্তিতে এবার ডিজেলচালিত সব কেন্দ্র থেকেই বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হচ্ছে। এমনকি অফ-পিক আওয়ারেও চালু রাখতে হচ্ছে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র। সব মিলিয়ে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মিলছে দিনে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য বলছে, জ্বালানি সংকটে বন্ধ রাখতে হচ্ছে দেড় থেকে দুই ডজন গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, যেসব কেন্দ্রের সক্ষমতা ৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। আর এ কারণেই ঝুঁকতে হচ্ছে তুলনামূলক বেশি উৎপাদন ব্যয়ের ডিজেলচালিত বিদ্যুতে। কিন্তু তারপরও কোনো কোনোদিন লোডশেডিং করতে হচ্ছে ১ হাজার মেগাওয়াটের বেশি।

এবিষয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, আমরা যদি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কাঙ্ক্ষিত গ্যাস পেতাম, তাহলে আমাদের ডিজেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রয়োজনই হত না। কারণ আমাদের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলো ১১ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতা সম্পন্ন। আমরা যদি গ্যাস থেকে ন্যূনতম সাড়ে ৬ হাজার মেগাওয়াটও পাই, তাহলে কিন্তু আমাদের লোডশেডিং করা লাগে না। সেখানে আমরা সর্বোচ্চ ৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি পাই।

রফতানিমুখী শিল্পের উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতেই এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার যথার্থভাবেই উৎপাদনমুখী যে শিল্প, বিশেষ করে রফতানিমুখী শিল্পের উৎপাদন যেন ব্যাঘাত না হয়, সেজন্য তাদেরকে গ্যাস সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাচ্ছেন। সে জন্য আমরা আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে আমাদের চাহিদার তুলনায় কম পাই। যার কারণে আমাদের ডিজেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হচ্ছে। অথবা লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

যদিও একদিকে সাশ্রয়ী ব্যয়ের বেশ কয়েকটি গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ, অন্যদিকে ডিজেলচালিত কেন্দ্রগুলো চালু করায় বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বাড়ার শঙ্কা বেড়েছে।

প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, অবশ্যই এটি একটি উদ্বেগের বিষয়। এর পাশাপাশি আমরা যদি সেই ব্যয় দিয়ে ডিজেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু রাখি, তাহলে শিল্পে আবার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে পারলে, তাদেরও উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। এ ক্ষেত্রে এটি লাভজনক। কেননা, সেক্ষেত্রে রফতানি আয়ের ওপরও প্রভাব পড়বে।

এদিকে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর অন্য কোনো বিকল্প এ মুহূর্তে খুব একটা ছিল না বলেও মত দিচ্ছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সালেক সুফী বলেন, এখন তো অনিবার্য হয়ে গেছে। এখন তো উপায় নেই। কারণ ডিজেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ বন্ধ করার পর যখনই লোডশেডিং হয়েছে সবাই ডিজেলের জেনারেটর চালু করেছে। ডিজেলের চাহিদা তো কমেনি। এ বিষয়গুলো কিন্তু সার্বিকভাবে পরিকল্পনা করা হয়নি। একে তো অদূরদর্শি পরিকল্পনা পাশাপাশি বাস্তবায়নে সমন্বয় নেই।

বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় নিয়ন্ত্রণে অপেক্ষায় থাকা কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো দ্রুত চালুর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।

এসএইচ-১৫/১৫/২২ (ন্যাশনাল ডেস্ক)