ডিম-মুরগির দাম ঊর্ধ্বমুখী

হাত বদলেই বাড়ছে ডিম-মুরগির দাম। আর এর পেছনে মূল ভূমিকা রাখছে মধ্যস্বত্বভোগীরাই। এতে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না খামারি। ফাঁকা হচ্ছে ভোক্তার পকেট। এ অবস্থায় বাজার ও খামারে স্বস্তি ফেরাতে সবার আগে উৎপাদন খরচ বের করার তাগিদ এ খাতের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি)।

দোকানিরা বলছেন, অনেক খামার নাকি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমদানি কম, চাহিদা বেশি। আর তাই দাম বাড়ছে।

ডিম-মুরগির বাজারে ঢুকতেই শোনা যায় এমন নানা শঙ্কার কথা। একটু একটু করে দাম বেড়ে যখন সহজলভ্য প্রোটিনের এ যোগান ভোক্তার সাধ্যের বাইরে যেতে বসেছে, তখন আবার খামারিরা বলছেন লোকসানের ভারে নুইয়ে পড়েছেন তারা।

কয়েকজন খামারি বলেন, সকালে ডিমের পাইকারি ক্রেতা বলেন যে, দাম কমে গেছে। আবার ডিলার ফোন দিয়ে বলেন যে, খাবারের দাম বেড়েছে। এতে তো লোকসান যাচ্ছে। এমন লোকসান কতদিন দেব! এ জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, এ ব্যবসা আর করবই না।

একদিকে ভোক্তার কাঁধে বাড়তি ব্যয়ের বোঝা, অন্যদিকে খামারির কাঁধে লোকসানের ঘানি- এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট অধিদফতর আর মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতাকে দায়ী করছে এ খাতের সবচেয়ে বড় সংগঠন বিপিআইসিসি।

সংগঠনটির সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, ‘কে ঠিক করবে আমার সঠিক মূল্য প্রাপ্তির বিষয়টি? ভোক্তার পণ্য পাওয়ার সঠিক দামটিই বা কে ঠিক করবে? সেটা ঠিক করার জন্য পরিকল্পনা থাকা উচিত।’

ভোক্তার হাতে আসার আগে খামারে ডিম-মুরগির দাম বাড়ার সবচেয়ে বড় কারণ খাদ্য বাবদ বাড়তি ব্যয়। এর পর যোগ হয় পরিবহন ও খুচরা বিক্রেতাদের টিকে থাকার হিসাব।

বিপিআইসিসি সূত্রে জানা গেছে, ডিম-মুরগির উৎপাদন ব্যয় ও লোকসানের বর্তমান হিসাবে ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি উৎপাদন ব্যয় ১৪৯ টাকা ৩৬ পয়সা। খামারে বিক্রি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। এতে লোকসান যাচ্ছে ১৪ টাকা ৩৬ পয়সা থেকে ৯ টাকা ৩৬ পয়সা। আর ডিম প্রতিপিস উৎপাদন ব্যয় ১১ টাকা ১১ পয়সা। খামারে বিক্রি ১০ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১০ টাকা ৬০ পয়সা। এতে লোকসান যাচ্ছে ৯১ পয়সা থেকে ৫১ পয়সা।

এ সবের হিসাব থাকলেও হিসাব থাকে না কয় হাত বদলে তা আসছে বাজারে আর কোন হাতে কত বাড়ছে দাম? এ অবস্থায় সবার স্বার্থ সুরক্ষায়, উৎপাদন খরচ বের করে মধ্যস্বত্বভোগীদের ওপর কড়া নজর রাখার পরামর্শ ব্যবসায়ীদের।

মসিউর রহমান আরো বলেন, ‘আমরা যারা প্রশ্ন করি যে, দাম বাড়ল কেন? তাদের আগে জানা উচিত, উৎপাদন খরচ কত? আমি যেটা বলবো, সেটাই যে সঠিক হবে, এমন দাবি করছি না। সংশ্লিষ্টদের উচিত খরচটা যাচাই করা। বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের কমিশন নির্ধারণ করে দেয়া দরকার। এই যে ২ থেকে ৩ হাত বদলায়। এতে যদি খরচটা ঠিক করে দেয়ার ব্যবস্থা থাকে, তবে ভোক্তা জানতে পারবে সঠিক দামটা।,

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা বলেন, ‘প্রকৃত উৎপাদন খরচটা জানতে পারলে ভোক্তা প্রতারিত হবেন না। সেই জায়গাটাতে এখন আমরা কাজ করছি। কঠিন কাজ হলেও প্রোটিনের বাজারে স্বস্তি ফেরাতে সবপথেই হাঁটছি।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘ডিমের ওপর কোনো কারণে যদি বিপর্যয় নেমে আসে, তবে আমাদের পুষ্টির বিষয়টি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমাদের প্রান্তিক খামারিদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য খুব ভালোভাবে কাজ করা দরকার।’

বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য, গত এক বছরে তাদের সদস্য এক লাখ খামারের মধ্যে লোকসানের চাপে বন্ধ হয়ে গেছে অন্তত ৪০ হাজারটি।

এসএইচ-২৪/৩০/২২ (ন্যাশনাল ডেস্ক)