রাষ্ট্রপতি হিসেবে সংসদে শেষ ভাষণে যা বললেন আবদুল হামিদ

একাদশ জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শেষ ভাষণ দিয়েছেন মো. আবদুল হামিদ।

বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) বিকাল ৪টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বছরের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা উপস্থিত রয়েছে।

সংবিধান অনুযায়ী বছরের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, জাতীয় জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ অতিক্রম করছি আমরা। ২০২২ সাল আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং একটি বছর ছিল। সমগ্র বিশ্বই পার করছে এ কঠিন সময়।

রাষ্ট্রপতি বলেন, আমরা করোনা মহামারি সফলভাবে মোকাবিলা করে অর্থনীতির গতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের এ অগ্রযাত্রাকে শ্লথ করেছে। তারপরও ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট ১৪ শতাংশ বেড়ে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

আবদুল হামিদ বলেন, নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেওয়া আমাদের কর্তব্য। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ-প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাঙালি জাতিকে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। দেশের অগ্রযাত্রাকে বেগবান করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর জাতির জনকের আদর্শকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে জাতি এগিয়ে যাক ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, আত্মমর্যাদাশীল বঙ্গবন্ধুর সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ার পথে।

তিনি বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক দুই-পাঁচ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা সামগ্রিক বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ইতিবাচক। মাথাপিছু জাতীয় আয় পূর্ববর্তী অর্থবছর থেকে ২৩৩ মার্কিন ডলার বেড়ে দুই হাজার আটশ চব্বিশ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ৩ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারে।

করোনার অভিঘাত মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের কার্যকর বাস্তবায়নের ফলে আমাদের অর্থনীতিতে গতিশীলতা ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। সরকার ঘোষিত ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার কৃষি, গার্মেন্টসসহ ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজের সরাসরি উপকারভোগী প্রায় ৭ কোটি ৩২ লাখ ব্যক্তি ও প্রায় ২ লাখ প্রতিষ্ঠান।

সরকার কর্তৃক কৃষি উৎপাদনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিগত অর্থবছরে মোট ১৫ হাজার ১৭২ দশমিক ৭৯ কোটি টাকা ভর্তুকি এবং ৩৯ হাজার কোটি টাকা সরলসুদে কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বিশেষ প্রণোদনার আওতায় কৃষকদের মধ্যে ৫০০ কোটি টাকার বীজ, সার এবং কীটনাশক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।

উপবৃত্তির উপকারভোগীর সংখ্যা এক লাখ এবং প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা প্রায় ২৪ লাখ জন।

তিনি বলেন, বিগত অর্থবছরে ভিজিডি (সরকারি ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট) চক্রে সারাদেশে ১০ লাখ ৪০ হাজার উপকারভোগীকে প্রতি মাসে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির উপকারভোগী ১২ লাখ ৫৪ হাজার জনকে মাসিক ৮০০ টাকা হারে ভাতা দেওয়া হয়েছে। সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে দেশের সব নাগরিকের জন্য পেনশন ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সরকারের যুগোপযোগী ও নারীবান্ধব কর্মসূচির ফলে বাংলার নারীরা দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করছে। ২০২২ সালে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা অর্জনের মাধ্যমে নারীরা দেশের জন্য এক অনন্যসাধারণ গৌরব বয়ে এনেছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার এবং তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সেবার মাধ্যমে ১ কোটি ১০ লাখ গ্রামীণ নারীদের তথ্যপ্রযুক্তিতে ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। সব নারী উদ্যোক্তাকে ই-কমার্সে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস ‘লালসবুজ ডটকম’ এবং ‘ইজয়িতা’ চালু করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’, এ লক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৭ লাখ ৫৮ হাজার ৫২৫টি পরিবারের প্রায় ৩৫ লাখ গৃহহীন মানুষকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পাশাপাশি জাতির সূর্যসন্তান অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা/বীরাঙ্গনা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধা/প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাদের স্ত্রী ও সন্তানদের মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ত্রিশ হাজার বাসস্থান ‘বীর নিবাস’ দেওয়া হচ্ছে।

এর আগে বিকেল ৩টায় স্পিকারের সভাপতিত্বে কার্যউপদেষ্টা কমিটির সভা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতাসহ কমিটির সদস্যরা এতে উপস্থিত ছিলেন।

এআর-১১/০৫/০১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)