এক কাপড়ে আড়াই শতাধিক শ্রমিককে ফেরত পাঠাল সৌদি

রোববার মধ্যরাত। সাউদিয়া এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে আড়াই শতাধিক সৌদিপ্রবাসী পৌঁছেছেন ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। যাদের অধিকাংশের বাড়ি চট্টগ্রামে। যারা ছয় থেকে দশ মাস আগে বৈধ কাগজপত্র নিয়ে রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। তাদের এক কাপড়ে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।

প্রবাসীদের দাবি, তাদের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। তা সত্ত্বেও নানা অজুহাতে সৌদি কারাগারে পাঠানো হয় তাদের। সেখানে একই রুমে গাদাগাদি করে রাখা হয় কয়েকশ প্রবাসীকে। পরে তাদের জোরপূর্বক এক কাপড়ে দেশে ফেরত পাঠায় সৌদি সরকার।

ফেরত আসা প্রবাসীরা জানান, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো তাদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ নিয়েছে। কিন্তু এজেন্সিগুলো সঠিক ভিসা দেয়নি। যে কাজের ভিসা নিয়ে তারা বিদেশে গেছেন, সে কাজ বা বেতন কিছুই পাননি। বাধ্য হয়েই অন্য কাজ খুঁজতে গেলে তাদের আটক করে সৌদি পুলিশ। তখন তাদের কোনো কথা না শুনে তাদের জেলে পাঠানো হয়।

রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বিদেশ পাঠানোর জন্য গড়ে প্রতিটি শ্রমিকের কাছ থেকে প্রায় পাঁচ লাখ করে টাকা নিয়েছে। এভাবে প্রায় সোয়াশ কোটি টাকা নিলেও বৈধ হতে পারেননি এসব এজেন্সির মাধ্যমে যাওয়া কোনো শ্রমিক, পাননি প্রতিশ্রুত কাজও।

চট্টগ্রামের বাসিন্দা সৌদিপ্রবাসী হাবিব। পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর আশায় রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে গিয়েছিলেন সৌদি আরব। ছয় বছর পর দেশে ফেরার কথা থাকলেও ফিরেছেন শূন্যহাতে। মধ্যরাতে পলিথিনের একটি পোঁটলা হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শাহজালাল বিমানবন্দরে। তিনি জানান, আকামা, পাসপোর্ট সব আছে। তারপর পাসপোর্ট, মোবাইল সব কেড়ে নিয়ে গাড়িতে করে তাকে জেলে পাঠিয়ে দেয় সৌদি পুলিশ। সেখান থেকে খালিহাতে পাঠানো হয় দেশে। এখন বাড়িতে যাওয়ার ভাড়াটুকুও তার কাছে নেই বলে জানান তিনি। তার মতো এমন ভাগ্যবরণ করতে হয়েছে অনেককে।

ফেরত পাঠানো আরেক প্রবাসী বলেন, ‘ভিসার মেয়াদ ছিল, আমি কোম্পানিতেও ছিলাম, তারপরও তারা নতুন করে আবার ভিসা খুলেছে।’

ফেরত পাঠানো এক প্রবাসী বলেন, ‘২৯ দিন আটকায় রাখছে। পরশু (২৯ এপ্রিল) থেকে এখন পর্যন্ত পানিও খাইতাম পারছি না।’

শ্রমিকরা জানান, এক রুমে প্রায় এক থেকে দেড়শ লোককে আটকে রাখা হয়। খাবার ছিল না, পানি ছিল না। একজনের ওপর আরেকজন শুয়ে থাকতে হতো। তাদের কাছে কোনো টাকা নেই। এখন বিমানবন্দরে এসে নেমেছেন, কিন্তু বাড়িতে যাওয়ার মতো ভাড়ার টাকাও নেই।

ফেরত পাঠানো আরেক শ্রমিক বলেন, ‘আমার এখনও আকামা আছে আট মাসের। আমাকে এসে সৌদি পুলিশ ধরল, আকামা দেখানোর পর সেটি ভেঙে ফেলল। তারপর আমার হাতে একটি পানির বোতল দিয়ে আমাকে কোর্টে চালান করে দিলো। বাংলাদেশ এম্বাসির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা শুধু বলে জানাচ্ছি, জানাচ্ছি।’

ফেরত পাঠানো এই শ্রমিকদের কেউ ১০ মাস, কেউ এক বছর, দু-বছর, কেউবা আবার ছয়-সাত বছর সৌদিতে থাকলেও তাদের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়।

এদিকে শাহজালাল বিমানবন্দরে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, প্রতিদিনই সৌদি থেকে প্রায় প্রতিটি ফ্লাইটে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের এক কাপড়ে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। তাদের সহায়তা দিতে বিমানবন্দরেও থাকে না কোনো সরকারি সংস্থা। এমনকি বৈধভাবে যাওয়া এই শ্রমিকদের কী পরিমাণ অবৈধ হয়ে দেশে ফেরত আসছে, তারও হিসাব রাখা হয় না ঢাকার বিমানবন্দরে।

এসএইচ-০৬/০১/২৩ (ন্যাশনাল ডেস্ক)