আর্থিক স্বচ্ছতার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করেনি বাংলাদেশ: যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন

আর্থিক স্বচ্ছতার আন্তর্জাতিক ন্যূনতম মানদণ্ডে কোনো অগ্রগতি নেই বাংলাদেশের। বাজেটের আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে প্রকাশিত মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়।

২০০৮ সাল থেকে প্রতি বছর আর্থিক স্বচ্ছতা প্রতিবেদন প্রকাশ করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। এতে যেসব দেশ মার্কিন আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করে সে দেশগুলোর আর্থিক স্বচ্ছতার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ১৪১টি দেশের আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশটি। সেখানে যে দেশগুলো ন্যূনতম মানদণ্ড রাখতে পারেনি তাদের বিষয়ে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে যে দেশগুলো মানদণ্ডে পৌঁছাতে অগ্রগতি করেছে, তাদের বিষয়েও বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৪০ দেশের সরকারের মধ্যে ৭২টি আর্থিক স্বচ্ছতার ন্যূনতম শর্ত পূরণ করেছে। আর বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, আলবেনিয়াসহ মোট ৬৯টি দেশ ন্যূনতম শর্ত পূরণ করতে পারেনি। তবে এসব শর্ত পূরণে ২৫টি দেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ নিয়ে বলা হয়, আর্থিক স্বচ্ছতার দিক থেকে ন্যূনতম মানদণ্ড রাখার বিষয়ে কোনো চেষ্টাই করেনি সরকার। তবে আর্থিক স্বচ্ছতা বজায় রাখতে আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এ বছরই প্রথম বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী আর্থিক স্বচ্ছতার দিক থেকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। সরকার এ সময়ে নির্বাহী বাজেট প্রস্তাব এবং বিস্তৃত বাজেট প্রণয়ন করেছে। এ ছাড়া জনগণের কাছে যাতে সহজে বাজেট পৌঁছে দেয়া যায়, সেই ব্যবস্থাও করেছে।

বাংলাদেশ কীভাবে আর্থিক স্বচ্ছতা আনতে পারে, প্রতিবেদনে তার চারটি সুপারিশও করা হয়। এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নীতি অনুযায়ী বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। সর্বোচ্চ নিরীক্ষা কর্তৃপক্ষকে স্বাধীনতা ও পর্যাপ্ত জনবলসহ প্রয়োজনীয় সম্পদ দিতে হবে, আর এটি নিশ্চিত করতে হবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী। নিরীক্ষা প্রতিবেদন সময়মতো প্রকাশ করতে হবে। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে হবে এবং এতে নিরীক্ষার সুপারিশ ও বর্ণনা থাকতে হবে।

আর্থিক স্বচ্ছতার ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য নিম্নলিখিত সরকারগুলিকে মূল্যায়ন করা হয়েছে প্রতিবেদনে। দেশগুলো হলো- আলবেনিয়া, আর্জেন্টিনা, আর্মেনিয়া, বাহামা, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, বতসোয়ানা, ব্রাজিল, বুলগেরিয়া, বুরকিনা ফাসো, কাবো ভার্দে, চিলি, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, ডি’আইভরি, ক্রোয়েশিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, এস্তোনিয়া, ফিজি, জর্জিয়া, ঘানা, গ্রীস, গুয়াতেমালা, গায়ানা, হন্ডুরাস, হাঙ্গেরি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইসরায়েল, জ্যামাইকা, জর্ডান, কাজাখস্তান, কেনিয়া, কসোভো, কিরগিজ প্রজাতন্ত্র, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, মালয়েশিয়া, মাল্টা, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, মরিশাস, মেক্সিকো, মাইক্রোনেশিয়া (ফেডারেটেড স্টেট অফ), মলদোভা, মন্টিনিগ্রো, মরক্কো, নামিবিয়া, নেপাল, নাইজেরিয়া, উত্তর মেসিডোনিয়া, পানামা, প্যারাগুয়ে, পেরু, ফিলিপাইন, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, সামোয়া, সার্বিয়া , সেশেলস, সিঙ্গাপুর, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, তিমুর-লেস্তে, টোগো, টোঙ্গা, ত্রিনিদাদ এবং টোবাগো, তিউনিসিয়া, তুরস্ক,উগান্ডা এবং উরুগুয়ে।

যে ৬৯টি দেশ ন্যূনতম শর্ত পূরণ করতে পারেনি তারা হলো- আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, আজারবাইজান, বাহরাইন, বাংলাদেশ, বেলিজ, বেনিন, বার্মা, বুরুন্ডি, কম্বোডিয়া, ক্যামেরুন, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, চাঁদ, চীন, কোমোরোস, কঙ্গো, কঙ্গো (প্রজাতন্ত্র), জিবুতি, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েডর, মিশর, এল সালভাদর, নিরক্ষীয় গিনি, এস্বাতিনী, ইথিওপিয়া, গ্যাবন, গাম্বিয়া, গিনি, গিনি-বিসাউ, হাইতি, ইরাক, লাওস, লেবানন, লেসোথো, লাইবেরিয়া, লিবিয়া, মাদাগাস্কার, মালাউই, মালদ্বীপ, মালি, মৌরিতানিয়া, মঙ্গোলিয়া, মোজাম্বিক, নিকারাগুয়া, নাইজার, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, পাপুয়া নিউ গিনি, রুয়ান্ডা, সাও টোমে এবং প্রিনসিপে, সৌদি আরব, সেনেগাল, সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ সুদান, সুদান, সুরিনাম, তাজিকিস্তান, তানজানিয়া, তুর্কমেনিস্তান, ইউক্রেন, উজবেকিস্তান, ভিয়েতনাম, ইয়েমেন, জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ে।

এসএইচ-১০/২৮/২৩ (ন্যাশনাল ডেস্ক)