নির্বাচনে অযোগ্য হলেন জুবাইদাও

একাধিক মামলায় সাজা পেয়ে এর আগেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এবার একই পথে হাঁটতে বাধ্য হলেন তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমানও।

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বুধবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই মামলায় স্বামী তারেক রহমানকে সহযোগিতা করায় দোষী প্রমাণিত হন জুবাইদা। তাকে দেওয়া হয়েছে ৩ বছরের কারাদণ্ড। কারাদণ্ডের পাশাপাশি, তারেককে ৩ কোটি এবং জুবাইদাকে ৩৫ লাখ টাকার অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে।

সংবিধানের ৬৬ ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডের সাজা পেলে এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হলে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। ফলে তিন বছরের সাজা হওয়ায় আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন জুবাইদা রহমান।

এর ফলে জিয়া পরিবারের জ্যেষ্ঠ তিন সদস্যের কেউই আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। কারাদণ্ডাদেশ নেই পরিবারের এমন সদস্যরা হলেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে কোকো রহমানের স্ত্রী শর্মিলা রহমান ও তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান।

তারেক-জুবাইদার বিরুদ্ধে মামলার এ রায়কে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রায়ের আগেই দাবি করেছিলেন, জিয়া পরিবারের সদস্যদের রাজনীতি থেকে দূরে সরাতে সরকার আদালতকে ব্যবহার করছে।

অবশ্য তার এ অভিযোগ নাকচ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মামলাটা দায়েরের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল। তখন সেই তত্ত্ববধায়ক সরকারের সাথে তাদেরই নিয়োগপ্রাপ্ত সেনা প্রধানের যথেষ্ট সখ্য ছিল, সেটা সম্বন্ধে আমার কিছু বলার নেই। তারাই দুর্নীতির মামলা দায়ের করেছিল। তারা যদি বলেন ফরমায়েসি, তাহলে আইন সম্বন্ধে তাদের জ্ঞান নিয়ে আমার সন্দেহ হয়।’

তারেক-জুবায়দাকে ফেরানোর চেষ্টা থাকবে: আইনমন্ত্রী তারেক-জুবায়দাকে ফেরানোর চেষ্টা থাকবে: আইনমন্ত্রী
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা হওয়ার পর নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারান জিয়া পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করলে ওই বছরের অক্টোবরে সাজা দ্বিগুণ করে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই মাসে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসনকে ৭ বছরের সাজা দেওয়া হয়।

এর মধ্যে অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তিনি দুই বছরের সাজা খেটেছেন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। ২০২০ সালে ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে তার সাজা ৬ মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। এর পর কয়েক দফায় এই মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

খালেদা জিয়া বর্তমানে তার গুলশানের বাসভবন ফিরোজাতে অবস্থান করছেন। সাজাপ্রাপ্ত আসামী হওয়ায় তার বিদেশ ভ্রমণ ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বিএনপি ও পরিবারের পক্ষ থেকে চিকিৎসার জন্য তাকে বেশ কয়েকবার বিদেশে পাঠানোর অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর সবগুলো নাকচ হয়ে যায়।

খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও আগেই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অনেকগুলো মামলার মধ্যে চারটিতে তার সাজা হয়েছে। এর মধ্যে মানি লন্ডারিংয়ের একটি মামলায় ২০১৩ সালে নিম্ন আদালতের রায়ে খালাস পেলেও পরে উচ্চ আদালত তাকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেয়।

২০১৮ সালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় মা খালেদা জিয়ার সাথে তারও সাজা হয়। তারেককে দেওয়া হয় ১০ বছরের কারাদণ্ড।

একই বছরের অক্টোবরে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার কয়েকটি ধারায় তারেককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেই সাথে বিস্ফোরক আইনের আরেকটি ধারায় তার ২০ বছর কারাদণ্ডাদেশ হয়। সবশেষ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় তার সাজা হলো।

অন্যদিকে, তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলা হয়। সে সময় তারেক গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। পরে ২০০৮ সালে জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি স্ত্রী জুবাইদা ও মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে চলে যান। এর পর তিনি আর দেশে ফেরেননি। এখনও তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও চালাচ্ছেন লন্ডন থেকে।

রাজধানীর কাফরুল থানায় হওয়া এ মামলায় তারেক-জুবাইদার বিরুদ্ধে ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার সম্পদ অর্জন এবং তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। এ মামলার আরেকজন আসামী ছিলেন তারেক রহমানের শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানু। ২০০৮ সালে তিনজনের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম। পরে অবশ্য হাইকোর্ট তারেক রহমানের শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন।

২০২২ সালের ১ নভেম্বর অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে তারেক ও জুবাইদার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। তারা দেশে না থাকায় তাদের অনুপস্থিতিতেই এ বছরের ১৩ এপ্রিল অভিযোগ গঠন করে মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরুর আদেশ দেন আদালত। ২১ জুলাই শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। মামলায় ৫৭ সাক্ষীর মধ্যে ৪৩ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

এসএইচ-১২/০২/২৩ (ন্যাশনাল ডেস্ক)