জ্বালানি ও স্বাস্থ্য খাতে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত বাংলাদেশ-ইন্দোনেশিয়া

আশিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) এই বৈঠকে ঢাকা ও জাকার্তা জ্বালানি, কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।বৈঠকের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বলেন, বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া জ্বালানি ও স্বাস্থ্য খাতে তিনটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে, এতে দুই দেশের কল্যাণে কাজ করতে ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) এবং ১৮তম ‘ইস্ট এশিয়া সামিটে’ অংশ নিতে ইন্দোনেশিয়া সফরে রয়েছেন। জাকার্তা কনভেনশন সেন্টারে (জেসিসি) এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

মোমেন বলেন, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন তাকে আমন্ত্রণ জানানো ও বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলকে চমৎকার আতিথেয়তা প্রদানের জন্য ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের উন্নয়ন, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পিত ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ ধারণা যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসা অর্জন করেছে তার প্রশংসা করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক খাতে ব্যাপক উন্নয়নের কথাও উল্লেখ করেন।

মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বলেন, ইন্দোনেশিয়া বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক মানের ওষুধ, সিরামিক ও তৈরি পোশাক (আরএমজি) পণ্য আমদানি করতে পারে। রাষ্ট্রপতি গত এক দশক ধরে বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের ধারাবাহিকতার কারণে ইন্দোনেশিয়ার বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানান।

রাষ্ট্রপতির উদ্ধৃতি দিয়ে ড. মোমেন বলেন, দুই দেশের চিকিৎসকদের সনদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য একটি পারস্পরিক সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড), ৩৯টি হাই-টেক পার্ক ও অন্যান্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে। তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়া যদি আগ্রহী হয়, তবে বাংলাদেশ খুশি হয়ে তাদের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থান নির্ধারণ করবে।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত একটি উৎপাদন কেন্দ্রে রূপান্তরিত হতে চায়। এই দশকের শেষ নাগাদ একটি ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হওয়া বাংলাদেশের লক্ষ্য।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বিনিয়োগের সুযোগ পেতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে বৃহত্তর সহযোগিতার ওপর জোর দেন। সাহাবুদ্দিন ইন্দোনেশিয়ার বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থে বাংলাদেশে যে বিশাল সুযোগ রয়েছে তা কাজে লাগাতে উৎসাহিত করেন। শিগগিরই ঢাকা ও জাকার্তা বা বালির মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগ স্থাপন করা হবে এবং দুই দেশের সমুদ্র বন্দরের মধ্যে শিপিং চালুর সুযোগ তৈরি হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ইন্দোনেশিয়ার সরকার ও জনগণের কাছ থেকে সর্বাত্মক সহায়তা কামনা করে বলেন, বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় মিয়ানমারের বাস্তুচ্যূত নাগরিকদের আশ্রয় দিয়েছিল। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, আসিয়ান সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেখানে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আসিয়ান চেয়ার ও আসিয়ান সেক্টোরাল ডায়ালগ পার্টনারের সদস্যপদ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের কাছ থেকে আরো সহযোগিতা কামনা করেন।

তিনি দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময়ে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়াই বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয়।

এআর-০৪/০৬/০৯ (জাতীয় ডেস্ক)