তিন বছর আট মাস পর রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ডাকা বিএনপি-জামায়াতের হরতালে ঢাকার বেশিরভাগ সড়কে যাত্রীবাহী বাস চলাচল তেমন চোখে পড়েনি। রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ও লোক চলাচলও কম। নেই চিরচেনা যানজট।
এর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে আছে পুলিশপ্রহরা। লাঠিসোটা হাতে জায়গায় জায়গায় আছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি। চলছে বিজিবির টহল।
রোববার সকাল থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার কম-বেশি এমন চিত্রই এমনি।
শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশ ঘিরে রাজধানীতে দিনভর উত্তাপ, সংঘর্ষ ও প্রাণহানির মধ্যে ঘোষণা আসে এই হরতালের। জাতীয় নির্বাচনের আগে আগে এমন কর্মসূচিতে জনমনে তৈরি হয় উৎকণ্ঠা।
পুলিশ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নিজেদের মহাসমাবেশে হামলার অভিযোগ করে রোববার সারাদেশে হরতাল ডাকার মাধ্যমে প্রায় তিন বছর আট মাস পর আবারো হরতাল কর্মসূচিতে ফিরে আসে বিরোধী দল বিএনপি।
এদিন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিকেল সোয়া তিনটার দিকে নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের মঞ্চ থেকে হরতালের ঘোষণা দেন। এর পরপরই কার্যত সমাবেশের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি সমাবেশে মির্জা ফখরুল সভাপতির ভাষণ দেয়ার কথা থাকলেও তাও দিতে পারেননি।
এর পরপর বিনা অনুমতিতে রাজধানীতে সমাবেশ করার সুযোগ পাওয়া জামায়াতে ইসলামী পুলিশকে ধন্যবাদ দিলেও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং পুরনো জোটসঙ্গী বিএনপির প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে রোববার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকে।
এর আগে বিএনপি সর্বশেষ হরতাল করেছিল ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি।
আজ হরতালের বাস টার্মিনালগুলোতেও ছিল না প্রতিদিনের স্বাভাবিক চেহারা। হরতালে বাস চালানোর ঘোষণা থাকলেও সকালে ছাড়েনি দূরপাল্লার গাড়ি।
সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, শেওওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, শাহবাগ, বাংলামোটর, মতিঝিল, পুরানা পল্টন, নয়াপল্টন, মিন্টোরোড, আরামবাগ মোড়, খিলগাঁওসহ প্রতিটি এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় অফিস ও কাজের উদ্দেশে বের হওয়া মানুষকে।
পাড়া-মহল্লাগুলোতে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও অন্যান্য অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের মিটিং-মিছিল করতে দেখা গেছে। তাদের হাতে ছিল লাঠি, হকিস্টিক। তাদের দাবি, তারা ‘অগ্নিসন্ত্রাসীদের হাত থেকে জনগণকে রক্ষায়’ পাহারা দিচ্ছেন।
তবে বিএনপির পক্ষ থেকে কোথাও পিকেটিংয়ের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি।
এ ছাড়া মোড়ে মোড়ে পুলিশি অবস্থান ও বিজিবির টহল দেখা গেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের চিত্রও ছিল একই রকম।
এদিকে হরতালের ভেতর মোহাম্মদপুর, তাঁতিবাজার ও বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট এলাকায় তিনটি বাসে আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এসব বাসে আগুন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস । এতে কোনো হতাহতের খবর জানা যায়নি।
এছাড়া রোববার হরতালের সকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে তার গুলশানের বাসা থেকে আটক করে নিয়ে গেছে পুলিশ।
এসএই-১০/২৯/২৩ (ন্যাশনাল ডেস্ক, সূত্র : দ্য ডেইলি স্টার)