সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগসহ বিচ্ছিন্ন ঘটনায় পূর্ণ বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ

বিএনপি’র ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন, বুধবার সকালে ঢাকার মুগদা এবং সাভারে দুটি বাসে আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এছাড়া নেতাকর্মী মারা যাওয়ায় সিলেট বিভাগের চার জেলা এবং কিশোরগঞ্জে অবরোধের পাশাপাশি হরতাল পালন করছে বিএনপি।

প্রথম দিনের মতো অবরোধের দ্বিতীয় দিনেও ঢাকার রাস্তায় প্রায় সব ধরনের গাড়ির সংখ্যা কম লক্ষ্য করা গেছে।

ফলে যানজটও দেখা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিবিসি সংবাদদাতারা।

তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বাড়তে দেখা গেছে।

এছাড়া গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকেও সকালে দূরপাল্লার কোন বাস ছাড়েনি।

যদিও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

বুধবার সকাল ১১টার দিকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল মজিদ।

পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে।

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এরআগে, বুধবার ভোরে সাভারের মধুমতী মডেল টাউন এলাকায় একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

বাসটির সহকারী, যিনি ঘটনার সময় বাসের ভেতরেই ঘুমিয়ে ছিলেন, বলেন ভোর ৬টার দিকে একদল লোক এসে প্রথমে বাসের জানালার কাঁচ ভেঙে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এরপর তিনি দ্রুত বাস থেকে বের হয়ে জীবন বাঁচান।

পরে স্থানীয়দের সহায়তায় বাসের আগুন নেভানো হয়।

এ ঘটনার পর ওই এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

সকাল ১০টার দিকে বিজিবিকেও ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকায় টহল দিতে দেখা গেছে।

অবরোধের প্রথম দিনে নিহতদেরকে দলীয়কর্মী দাবি করে এর প্রতিবাদে বুধবার কিশোরগঞ্জ এবং সিলেট বিভাগের চার জেলায় হরতাল পালন করছে বিএনপি।

এর মধ্যে সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে সকাল-সন্ধ্যা এবং কিশোরগঞ্জে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অর্ধবেলা হরতাল পালন করছে বিএনপি।

সকালে এসব জেলায় যান চলাচল প্রায় ছিলো না বলেই জানিয়েছেন স্থানীয় সংবাদদাতারা।

তবে এখন পর্যন্ত কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।

প্রথম দিনের মতো অবরোধের দ্বিতীয় দিনেও ঢাকায় সীমিত সংখ্যক যান চলাচল করতে দেখা গেছে।

সকাল ১০টা পর্যন্ত ঢাকার ধানমণ্ডি, গ্রিনরোড, কারওরান বাজার, ফার্মগেট, তেজগাঁও, বিজয় সরণী, মহাখালী, বনানী, গুলশান, মিরপুর, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ি সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে রাস্তায় তুলনামূলক কম সংখ্যক যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক, পিকআপ ভ্যান এবং ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করছে।

এছাড়া রিক্সা এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা অন্যান্য দিনের মতোই দেখা গেছে।

তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা বাড়তে দেখা যাচ্ছে।

বুধবার সকালে ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে স্বাভাবিক দিনের মতোই ট্রেন চলাচল করতে দেখা গেছে।

তবে কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেল স্টেশনে যাত্রীদের সংখ্যা কম ছিলো।

বুধবার সকাল থেকে ঢাকার গাবতলী এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়তে দেখা যায়নি।

গাবতলী টার্মিনালে বাসের টিকেট কাউন্টারগুলোর অধিকাংশই বন্ধ দেখা গেছে।

যে অল্প সংখ্যক টিকেট বিক্রেতা সকালে কাউন্টার খুলেছেন, যাত্রীর অভাবে গত ২৪ ঘণ্টায় তারা দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়তে পারেননি বলে বিবিসি বাংলার সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন।

গাবতলী থেকে উত্তরবঙ্গের ২৬টি জেলা এবং দক্ষিণবঙ্গের ২২টি জেলায় প্রতিদিন অন্তত ১২০০ যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে বলে জানিয়েছে টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু অবরোধ শুরু হওয়ার পর দূরপাল্লার বাসগুলো বন্ধ থাকায় পরিবহন ব্যবসায় স্থবিরতা নেমে এসেছে বলে জানিয়েছেন বাসের টিকেট বিক্রেতারা।

একই চিত্র দেখা গেছে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালেও।

ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় এবং প্রবেশপথগুলোতে র‍্যাব-পুলিশের সতর্ক অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে বলে জানিয়েছেন বিবিসি বাংলার সংবাদদাতারা।

এছাড়া ঢাকা ও সাভারের কোথাও কোথাও বিজিবিকেও টহল দিতে দেখা গেছে।

ঢাকা ও এর আশপাশের জেলাগুলোর বিভিন্ন মোড়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে আছেন।

অনেক জায়গায় অবরোধবিরোধী মিছিল ও শান্তি সমাবেশ করতে দেখা গেছে।

সকালে ঢাকার মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, গাবতলী, যাত্রাবাড়ি, মিরপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় অবরোধ বিরোধী মিছিল করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

এছাড়া সাভারের আমিনবাজার, হেমায়েতপুর এবং নারায়ণগঞ্জেও ছোট ছোট মিছিল করেছে সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা।

এসময় তাদের কারো কারো হাতে লাঠি-সোটা এবং রড দেখা গেছে।

তবে ঢাকায় কোথাও বিএনপি’র কোন মিছিল দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন বিবিসি সংবাদদাতারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এবং যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

গত ২৮শে অক্টোবরের নাশকতার মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ।

বুধবার তাদেরকে আদালতে নেওয়া হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

গত কয়েকদিনের মতো বুধবার সকালেও বিএনপি’র নয়াপল্টন কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলছে।

কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে আছেন পুলিশের সদস্যরা।

তবে সেখানে বিএনপি নেতাকর্মীদের কাউকেই দেখতে পাননি তিনি।

বিএনপি’র ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধের প্রথম দিন মঙ্গলবারে বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।

এর মধ্যে কিশোরগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে দুইজন কর্মী নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। যদিও বিবিসি বাংলার কাছে বিল্লাল হোসেন নামে একজনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছিলেন কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার।

এছাড়া পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।

নিহত তিনজনকেই দলীয় নেতা দাবি করে তাদের মৃত্যুর জন্য পুলিশকে দায়ী করেছে বিএনপি।

যদিও পুলিশ এসব মৃত্যুর দায় স্বীকার করেনি।

এছাড়া ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং বগুড়ায় পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়।

এসব সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

এছাড়া মঙ্গলবার ঢাকা, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি গাড়ি পোড়ানো এবং ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

গত ২৮শে অক্টোবর বিএনপি’র সমাবেশে “হামলা, হত্যা, গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে” এবং সরকার পতনের একদফা দাবি আদায়ে ৩১ অক্টোবর থেকে ২রা নভেম্বর পর্যন্ত টানা তিন দিনের এই অবরোধ কর্মসূচি দেয় বিএনপি।

গত ২৯ অক্টোবর দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ টানা তিন দিনের এই অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

বিএনপি তখন দাবি করেছিলো যে, ২৮ অক্টোবরের আগের পাঁচ দিনে সারা দেশে বিএনপি’র দুই হাজার ছয়শত নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ৪৫টি মামলাও দেয়া হয়েছে।

আর গেলো ২৮শে জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দলটির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৪৪২টি। যেখানে গ্রেপ্তারের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে বলেও দাবি করেছে দলটি।

বিএনপি বলছে, তাদের ভাষায় এসব গ্রেপ্তার, নির্যাতনের অবসান এবং সরকার পতনের দাবি আদায়ের জন্যই তাদের অবরোধের নতুন কর্মসূচি।

এসএইচ-০১/০১/২৩ (ন্যাশনাল ডেস্ক)