দেশে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল বিএনপির ডাকা তিন দিনের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির তৃতীয় ও শেষ দিনে দুপুর থেকেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। বিএনপি-জামায়াতের ডাকা তিন দিনের অবরোধের শেষ দিনে সকাল থেকে রাজধানী ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি৷
রাজধানীতে গণপরিবহনসহ সব ধরণের যান চলাচল সকাল থেকেই বাড়ছিলো এবং দুপুরের পর থেকেই টার্মিনালগুলো সরব হয়ে ওঠে এবং যাত্রীদের ভিড় বাড়তে দেখা যায়।
অবরোধের শেষ পর্যায়ে এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী তিনদিনের অবরোধ সফল হয়েছে দাবি করে এটি সফল করায় জনগণকে ধন্যবাদ জানান।
গত ২৮শে অক্টোবর মহাসমাবেশ এবং পরের দিন হরতালের পর গত মঙ্গলবার থেকে তিন দিনের সর্বাত্মক এই অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি।
গত দুই দিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ, গাড়িতে আগুন দেয়া, হামলা এবং ভাংচুরের খবর পাওয়া যায়।
বুধবার অবরোধের দ্বিতীয় দিনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে কয়েকটি বাস ও ট্রাকে আগুন দেয়া হয়। এদিন কর্মী মারা যাওয়ার ঘটনায় সিলেট বিভাগের চার জেলায় এবং কিশোরগঞ্জে অবরোধের পাশাপাশি হরতাল পালন করেছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার অবরোধের তৃতীয় দিনে সায়েদাবাদে বেলা আড়াইটার দিকে গিয়ে অনেক যাত্রীকে ভিড় করতে দেখা যায় কাউন্টারগুলোতে। অপেক্ষমান বাসে যাত্রীদের উঠতে দেখা গেছে বরিশাল বরগুনাগামীস বাসে।
সাপ্তাহিক ছুটির আগে বৃহস্পতিবার সাধারণত স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ভিড় থাকে টার্মিনালগুলোতে। বিএনপি মঙ্গলবার থেকে তিনদিনের অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে।
এর আগে সকাল থেকে রাজধানীর মিরপুর, ধানমন্ডি ও সায়েন্সল্যাব এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সব ধরণের গণপরিবহনের চলাচল গত দুদিনের তুলনায় বেড়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচল খুব একটা দেখা যায়নি। তবে বিভিন্ন অফিস-আদালতের যানবাহনের চলাচল চোখে পড়েছে।
তৃতীয় দিনে গণপরিবহনের পাশাপাশি অফিসগামী মানুষ ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি ছিল।
রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকে তেমন কোন দূর পাল্লার বাস না ছাড়লে দুপুরের পর টার্মিনালে যাত্রীদের আনাগোনা বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার হওয়ায় আগামী দুই দিনের ছুটির কারণে অনেকেই শেষ বেলায় ঢাকা ছাড়ার চেষ্টা করছেন।
মহাসড়কেও যান চলাচল কম দেখা যাচ্ছে।
গাবতলী বাস কাউন্টারের এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বাস ছাড়ার জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী ও পুলিশ চাপ দিচ্ছেন৷ কিন্তু পর্যাপ্ত যাত্রী না পাওয়ায় তারা বাস ছাড়ছেন না৷
নাম প্রকাশ না করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক কর্মী বলেন, বাস মালিকদের অনেকে বিএনপির সমর্থক৷ তাই তারা বাস ছাড়ছেন না৷ সেই কারণেই আমরা তাদের বাস ছাড়তে বলেছি৷
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকায় ছিলেন বিবিসির সংবাদদাতা আকবর হোসেন। তিনি জানান, ঢাকার বাইরের রাস্তায় গণপরিবহনের জন্য মানুষজনের ভিড় চোখে পড়েনি।
যারা এদিন বের হয়েছেন তাদের অনেকে জানিয়েছেন, দরকার না হলে কেউ অবরোধের সময় বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না।
আর অতি প্রয়োজনে দূরে কোথায় যেতে হলেও বড় কোন যানবাহন ব্যবহার না করে বরং ছোট ছোট যানবাহনে করে ভেঙ্গে ভেঙ্গে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন তারা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গোমতী টোল প্লাজার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল অবরোধের সময় দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা মিলিয়ে বাস ও মিনিবাস চলাচল করেছে ৮০০টির মতো গাড়ি। স্বাভাবিক দিনে এই রাস্তায় ২২০০-২৫০০টির মতো বাস-মিনিবাস চলাচল করে। তবে এগুলোর বেশিরভাগই চলেছে রাতের বেলায়।
মহাসড়কে মালবাহী লরি বা ট্রেইলারের চলাচল গণপরিবহনের তুলনায় বেশি দেখা গেছে বলে জানান মি. হোসেন। গোমতি টোল প্লাজার তথ্য উল্লেখ করে তিনি জানান, স্বাভাবিক সময়ে এই রাস্তা দিয়ে এক হাজারের মতো এসব যান চলাচল করলেও গতকাল চলেছে ৬০০টির মতো।
মহাসড়কের খাবারের দোকানগুলিতেও তেমন কোন ক্রেতা বা যাত্রী দেখা যায়নি। মহাসড়কের কোথায় বিএনপির নেতাকর্মীদের চোখে পড়েনি। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মিছিল করতে দেখা গেছে।
অবরোধের কারণে মহাসড়কের পাশের বাজারগুলো থেকে কোন সবজি ঢাকায় না যাওয়ার কারণে এসব বাজারগুলোতেও কোন ভিড় নেই। কৃষকরা বলছেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা।
ঢাকার বাইরে মহাসড়কগুলোতে পুলিশ, বিজিবি বা র্যাবের মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখা যায়নি। তবে যান চলাচল কম ছাড়া ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক রয়েছে।
মানুষের যাতায়াত ও চলাচল কম হলেও মহাসড়কের ধারে থাকা স্কুলগুলো খোলা রয়েছে। বড় ধরণের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে খুব একটা তৎপরতা দেখা যায়নি।
রাজধানী ঢাকার উত্তরার আজমপুরে পরীস্থান পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়া হয়েছে। এতে কেউ হতাহত হয়নি বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা চার মিনিটে বাসটিতে আগুন দেয়া হয়। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সকাল সাতটা ৩৩ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে তারা।
বাসটির আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট কাজ করেছে।
এছাড়া এখনো পর্যন্ত রাজধানীর আর কোথাও আগুন লাগার মতো কোন ঘটনার খবর তারা পাননি বলেও জানান।
বিএনপির পক্ষ থেকে পাঠানো এক বার্তায় দলটি দাবি করেছে যে, রাজধানীর গুলশান এলাকার একটি বাসা থেকে তাদের চার কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বরাত দিয়ে ওই বার্তায় দাবি করা হয়, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, মহানগর উত্তর যুবদলের সদস্য সচিব সাজ্জাদুল মিরাজ, পল্লবী থানা যুবদলের সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়া এবং গাড়ি চালক মাহবুবসহ চার জনকে আটক করা হয়েছে।
ডিবি পুলিশ তাদেরকে গুলশানের একটি বাসা থেকে দরজা ভেঙ্গে আটক করে নিয়ে যায় বলে বার্তায় দাবি করা হয়।
তবে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন এ বিষয়ে তারা কিছু জানেন না।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে পুলিশের সাথে বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, বৃহস্পতিবার ভোর রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গত মঙ্গলবার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে পুলিশের সাথে এই সংঘর্ষ হয়। সেসময় পুলিশের তিন সদস্যকে কুপিয়ে জখম করা হয় বলে জানায় র্যাব।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর গুলোতে পুলিশের বরাত দিয়ে বলা হয়, অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিএনপির সমর্থকরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে টায়ার পুড়িয়ে অবরোধ করে। সেখান গাড়ি ভাঙচুর করা হলে দায়িত্বরত পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এতে সংঘর্ষ বাধলে কুপিয়ে ও পিটিয়ে পুলিশের তিন সদস্যকে আহত করা হয়।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার বনগ্রাম এলাকায় দাঁড় করিয়ে রাখা দুটি বাসে ভাঙচুর এবং একটি বাসে আগুন দেয়া হয়েছে। রাঙ্গুনিয়ার ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাস্টার কামরুজ্জামান সুমন বিবিসি বাংলাকে জানান, বৃহস্পতিবার ভোর রাত চারটা ১০ মিনিটের দিকে বাসগুলোতে আগুন দেয়া হয়।
পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে যায় ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট। তারা প্রায় আধা ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
সুমন জানান, যে দুটি বাসে ভাঙচুর চালানো হয়েছে সেগুলোতে ওই বাসের কর্মীরা আটকে পড়েছিলেন। পরে ফায়ার সার্ভিস গিয়ে তাদেরকে মুক্ত করে।
ভাঙচুর ও আগুন লাগার ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি বলেও জানান তিনি। এর আগে বুধবারও রাঙ্গুনিয়ায় আরেকটি বাসে আগুন দেয়া হয়েছিল।
বিএনপির ডাকা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির শেষ দিনে বরিশাল নগরের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করেছেন দলটির নেতা–কর্মীরা। এ সময় রূপাতলী এলাকায় কয়েকটি যানবাহনে ইটপাটকেল ছুড়ে ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়া উদ্দিন সিকদারের নেতৃত্বে নগরের রূপাতলী শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর টোল প্লাজা এলাকায় ঝটিকা মিছিল বের হয়। মিছিল শেষে যানবাহন লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন নেতা-কর্মীরা। এতে বেশ কয়েকটি যানবাহনের কাচ ভেঙে যায়। এরপর দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন নেতা-কর্মীরা।
এর আগে বুধবার রাতে নগরের সিঅ্যান্ড রোডে ঢাকা-বরিশাল মহসড়কে মশালমিছিল করেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। কাশিপুর এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তাঁরা।
এ ছাড়া সকাল থেকে নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে অবরোধ কর্মসূচির সমর্থনে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঝটিকা মিছিল করেন। নগরের সোনালী আইসক্রিম মোড়ের বিভিন্ন সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করা হয়। এসব ঘটনায় চারজনকে আটক করে পুলিশ। তাঁরা হলেন ৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সদস্য মোনায়েম খান, সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি মো. মহসিন ও একই ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. মাসুদ এবং একজন কর্মী (নাম–পরিচয় জানা যায়নি)।
এদিকে বুধবার অবরোধের দ্বিতীয় দিনে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভের চেষ্টাকালে আটকের ঘটনায় দুই শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক খোকন চন্দ্র দে বাদী হয়ে মামলটি করেন। মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান, বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আলী হায়দার, সদস্য আবু মুসা কাজল, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্যসচিব সাব্বির আলী শেখ, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যসচিব হানিফ হাওলাদার, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক দ্বীন ইসলাম, মোহাম্মদ আনিস, সদস্য শামসুল আলম, মহানগর মৎস্যজীবী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফেরদৌস হাওলাদার, জেলা ছাত্রদলের সদস্য সাকলাইন মোস্তফা, দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্য রেজাউল রহমান, কাজী মোহাম্মদ ফিরোজ, ১১ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সদস্য মোহাম্মদ আসলাম হোসেন ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সদস্য রাশেদুজ্জামান খান।
এদিকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির তৃতীয় দিনে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার যান চলাচল বেড়েছে। সকাল থেকে ছেড়ে গেছে অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চ। এ ছাড়া বেলা ১১টার দিকে নগরে মোটরসাইকেল মহড়া দেয় মহানগর আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি নগরের বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছেন।
মহানগর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. জাহিদুর রহমান বলেন, সরকার দমন-পীড়ন, গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে মাঠে নামতে দিচ্ছে না। এরপরও বরিশালে বিএনপির নেতা-কর্মীরা নানা কৌশলে মাঠে আছেন। ইতিমধ্যে অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেছেন, সড়কে যান চলাচলে বাধা দেওয়াসহ নাশকতায় জড়িত ব্যক্তিদের ভিডিও ফুটেজ দেখে যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বিএনপির ডাকা অবরোধ ঠেকাতে সিলেটে ছাত্রলীগ রামদা, রড, হকিস্টিক ও লাঠি হাতে মহড়া দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার সকালে দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় এবং গতকাল বুধবার বিকেলে সিলেট নগরের বিভিন্ন সড়কে মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মহড়া দিতে দেখা গেছে। তবে অস্ত্র নিয়ে মহড়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ছাত্রলীগ।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, আতঙ্ক ছড়ানোর পাশাপাশি তাঁদের ওপর হামলার উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেন। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ এবং মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশওয়ার জাহান সৌরভ ও সাধারণ সম্পাদক মো. নাঈম আহমদ।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিগুলোকে অস্থিতিশীল করতে দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক। এটা অনাকাঙ্ক্ষিতও। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানাব, তারা যেন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়।’
স্থানীয় কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ চত্বরে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে গতকাল দুপুরে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিকেলে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ মোটরসাইকেল বহর নিয়ে হুমায়ুন রশীদ চত্বর থেকে মহড়া দিয়ে বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা হয়ে আম্বরখানা এলাকায় আসে। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে রামদা, হকিস্টিক, রড, লাঠিসহ দেশীয় নানা অস্ত্র ছিল। একইভাবে আজ সকালে দক্ষিণ সুরমার চণ্ডীপুল এলাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজিত শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজের নেতৃত্বে একটি দল যোগ দেয়। এ সময় বহরের নেতা-কর্মীদের হাতে দেশীয় অস্ত্র দেখা গেছে।
গত দুই দিন ধরে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়ার বিষয়টি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম অস্বীকার করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তথ্যটি সঠিক নয়। তবে কিছু নেতা-কর্মীর হাতে লাঠি ছিল। বিএনপি-জামায়াতের হাত থেকে প্রাণরক্ষার স্বার্থেই কিছু নেতা-কর্মীর হাতে লাঠি ছিল। কারণ, বিএনপি-জামায়াত তো অবরোধের নামে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. আজবাহার আলী শেখ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি। সত্যতা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এসএইচ-০১/০২/২৩ (ন্যাশনাল ডেস্ক)