অবরোধের দ্বিতীয়দিনে বাসে অগ্নিসংযোগ, দুর পাল্লার বাস বন্ধ

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির দ্বিতীয় দফা সোমবার অবরোধের শেষ দিনের শুরুতেই ঢাকা, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি যাবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

অন্যদিকে রোববার রাতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। যদিও এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি।

অবরোধের প্রথম দিনের মতো সোমবার সকালেও ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোন বাস ছেড়ে যায়নি বলে খবর পাওয়া গেছে।

এছাড়া ঢাকার রাস্তায় তুলনামূলকভাবে কম যান চলাচল করছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বাড়তে দেখা যাচ্ছে।

অবরোধের প্রথম ৩০ ঘণ্টায় মোট ১৮টি যানবাহন পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। রোববার ভোর ৪টা থেকে সোমবার  সকাল ১০টা পর্যন্ত এসব যান পুড়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, ঢাকা মহানগরে ১০টি, ঢাকা বিভাগে (গাজীপুর, কালিয়াকৈর, নারায়ণগঞ্জ) ৪টি, চট্টগ্রাম বিভাগে (খাগড়াছড়ি, আনোয়ারা, পটিয়া) ৪টি বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১৩টি বাস, ২টি ট্রাক, ১টি প্রাইভেটকার, ১টি সিএনজি, ১টি লেগুনা পুড়ে যায়। এই ১৮টি অগ্নিকাণ্ড নির্বাপণ করতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ৩৬টি ইউনিট ও ২১৬ জন কর্মী কাজ করেছে।

বিরোধীদলগুলোর ডাকা অবরোধের দ্বিতীয় দিনে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় সড়কে কম বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। ফলে অফিসগামী কিংবা জরুরি কাজে যারা বের হয়েছেন তাদেরকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে কিছুটা যানবাহন বেড়েছে।

দ্বিতীয় দফায় রোববার সকাল থেকে সড়ক-রেল ও নৌ পথে সর্বাত্মক অবরোধ পালন করছে বিএনপি। ৪৮ ঘণ্টার এই অবরোধ শেষ হবে মঙ্গলবার সকাল ৬টায়।

এর আগে, গত ৩১শে অক্টোবর থেকে ২রা নভেম্বর পর্যন্ত তিনদিনের সর্বাত্মক অবরোধ পালন করেছে দলটি।

সোমবার ভোরে ঢাকা, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে অন্তত চারটি যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, সোমবার ভোর ৫টার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর এলাকায় একটি যাত্রবাহী বাসে আগুন দেওয়া হয়।

এর আধা ঘণ্টা পর ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় আগুন দেওয়া হয় একটি মালবাহী ট্রাকে।

প্রায় একই সময়ে চট্টগ্রামের আনোয়ারা এবং পটিয়ায় দু’টি সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

এছাড়া রোববার রাতে ঢাকার হাজারীবাগ, পোস্তগোলা, বাংলামোটর এবং গাজীপুরের কদমতলীতে চারটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এছাড়া খিলগাঁওয়ে একটি লেগুনায় আগুন দেওয়া হয়।

তবে এসব ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

রোববার রাতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে বলে দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। এ নিয়ে গত দু’দিনে অন্ততঃ চার জন কেন্দ্রীয় নেতাকে আটক করার খবর দিলো দলটি।

তবে শামসুজ্জামান দুদুকে তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি।

বিএনপির চেয়ারপার্সনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার বিবিসি বাংলাকে জানান, শামসুজ্জামান দুদু রোববার ঢাকা সেনানিবাস এলাকায় তার বড় বোনের বাসায় অবস্থান করছিলেন। রাত ১২টার দিকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে একটি দল তাকে তুলে নিয়ে যায়।

এসময় হাসনাত আশরাফ রবিন নামে মিস্টার শামসুজ্জামানের এক ভাগনেকেও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

রোবারের মতো সোমবার সকালেও ঢাকার রাস্তায় সীমিত সংখ্যক গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে।

সকালে ঢাকার লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, আদাবর, শ্যামলী, গাবতলীয়, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, ধানমণ্ডি, পান্থপথ, গ্রিনরোড, কারওয়ান বাজার, তেঁজগাও, মহাখালী, গুলশান, মিরপুর, বাংলামোটর, কাকরাইল, পল্টন, মতিঝিল, যাত্রাবাসী সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে অল্পকিছু যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক এবং পিকআপ ভ্যান চলাচল করতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন বিবিসি সংবাদদাতা।

এছাড়া অবরোধের আগের দিনের মতোই ঢাকায় রিক্সা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা বেশি চোখে পড়েছে। আর ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা তুলনামূলক কম দেখা গেছে।

তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে দেখা যাচ্ছে।

আগের অবরোধের মতোই সোমবার সকালে ঢাকার গাবতলী, মহাখালী এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোন বাস ছাড়তে দেখা যায়নি।

তবে সকালে ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোর উদ্দেশ্য স্বল্প দূরত্বের কিছু বাস ছাড়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাসের টিকেট বিক্রেতারা।

তারা বলছেন, অবরোধের কারণে পর্যাপ্ত যাত্রী না পাওয়ায় দূরপাল্লার বাসগুলো ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

সোমবার সকালে ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে স্বাভাবিক দিনের মতোই ট্রেন চলাচল করতে দেখা গেছে। নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ীই সব ট্রেন ছাড়া হচ্ছে বলে বিবিসি সংবাদদাতাকে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।

তবে স্টেশনে যাত্রীদের সংখ্যা স্বাভাবিক দিনের চেয়ে কম দেখা গেছে।

গত কয়েকদিনের মতোই সোমবার সকালেও ঢাকার প্রধান সড়কগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় র‍্যাব ও পুলিশের বেশ কয়েকটি দলকে টহল দিতে দেখা গেছে।

এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মোড় এবং ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে পুলিশের সতর্ক অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে।

টানা নয় দিন তালাবন্ধ রয়েছে বিএনপির নয়াপল্টনের কার্যালয়। কার্যালয়টি সর্বশেষ খোলা হয়েছিলো গত ২৮শে অক্টোবর বিএনপি মহাসমাবেশের দিন।

সেদিনের সংষর্ঘ ও প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর পুলিশ ধরপাকড় শুরু করলে আর কার্যালয়ে আসতে দেখা যায়নি বিএনপি নেতাকর্মীদের।

গত নয়দিন ধরে নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে আছে পুলিশ।

এসএইচ-০১/০৬/২৩ (ন্যাশনাল ডেস্ক)