আগামী বছর টঙ্গীতে ইজতেমা না করার শর্তে এবার অনুমতি পেলেন সাদপন্থিরা

তাবলিগ জামাতের মাওলানা সাদপন্থীরা আগামী বছর থেকে টঙ্গীর তুরাগ নদের পাশে বিশ্ব ইজতেমা করতে পারবেন না, এমন শর্তে রাজি হলে এ বছর তাঁদের ইজতেমা করার অনুমোদন দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক-৬ শাখার উপসচিব আবু সাঈদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, তাবলীগ জামাত বাংলাদেশের শুরায়ী নেজামের অনুসারীগণ (মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের সাহেব) ৩১ জানুয়ারি হতে শুরু হওয়া ইজতেমা ৫ ফেব্রুয়ারি সম্পন্ন করে ৬ ফেব্রুয়ারি বাদ মাগরিব ইজতেমা ময়দান প্রশাসনের নিকট হস্তান্তর করবেন।

এতে বলা হয়, তাবলীগ জামাত বাংলাদেশের (মাওলানা সা’দ সাহেবের অনুসারীগণ) বিশ্ব ইজতেমার ২য় পর্ব আগামী ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবার পর ১৮ ফেব্রুয়ারি বাদ মাগরিব ইজতেমা ময়দান প্রশাসনের নিকট হস্তান্তর করবেন।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, তবে তাবলীগ জামাত বাংলাদেশ (মাওলানা সা’দ সাহেবের অনুসারীগণ) আগামী বছর থেকে তাদের বিশ্ব ইজতেমা ও তাবলীগি কার্যক্রম টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে করতে পারবেন না। এ শর্ত পূরণ সাপেক্ষে শুধুমাত্র ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি ইজতেমা করতে পারবেন।

আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি টঙ্গীর ইজতেমা ময়দান শুরায়ী নেজামের নিকট হস্তান্তর করা হবে বলে জানানো হয় প্রজ্ঞাপনে।

ভারতীয় উপমহাদেশে সুন্নি মুসলমানদের বৃহত্তম সংগঠন তাবলীগ জামাতের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব প্রথম প্রকাশ্য রূপ পায় ২০১৭ সালের নভেম্বরে। ওই সময় তাদের মূল কেন্দ্র কাকরাইলে দুই দল কর্মীর মধ্যে হাতাহাতি হয়।

এর পর ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ঢাকায় কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমীর শাহ আহমদ শফীর উপস্থিতিতে তাবলীগ জামাতের একাংশের এক সম্মেলন হয় । এতে সাদ কান্দালভীকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মাওলানা সাদ কান্ধলভী ভারতীয় আলেম। তিনি তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা হজরত ইলিয়াস শাহ (রহ.) এর নাতি।

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাদ কান্ধলভী তাবলীগ জামাতে এমন কিছু সংস্কারের কথা বলছেন – যা নিয়ে মূলত তাবলীগ জামাতের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হয়।

সাদ কান্ধলভীর মতে, ধর্মীয় শিক্ষা বা ধর্মীয় প্রচারণা অর্থের বিনিময়ে করা উচিত নয় – যার মধ্যে মিলাদ বা ওয়াজ মাহফিলের মতো কর্মকাণ্ড পড়ে বলে মনে করা হয়। তিনি আরও বলেন, মাদরাসাগুলোর শিক্ষকদের মাদরাসার ভেতরে নামাজ না পড়ে মসজিদে এসে নামাজ পড়া উচিত – যাতে মানুষের সাথে যোগাযোগ বাড়ে।

এছাড়া অভিযোগ উঠেছে সাদ কান্ধলভী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় কুরআন, হাদিস, ইসলাম, নবী-রাসুল ও নবুয়্যত এবং মাসআলা-মাসায়েল নিয়ে আপত্তিকর বয়ান করেছেন। যার জন্য দেওবন্দসহ বিশ্ব আলেমদের অনেকেই এসব বয়ানের জন্য প্রকাশ্যে তাঁকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন।

মাওলানা জুবায়েরপন্থীরা বলছেন, সাদ কান্ধলভী যা বলছেন – তা তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের নির্দেশিত পন্থার বিরোধী। তাদের বক্তব্য কান্ধলভীর কথাবার্তা আহলে সুন্নাত ওয়া’ল জামাতের বিশ্বাস ও আকিদার বাইরে।

কান্ধলভীর সমর্থকরা বলছেন, তাদের নেতার বক্তব্য বা সংস্কারের প্রস্তাব মানতে না পেরেই বাংলাদেশে সংগঠনটির কর্মকাণ্ডকে রাজনৈতিক চেহারা দেওয়া হয়েছে।

এআর-০৩/০৪/০২ (জাতীয় ডেস্ক)