নাটোরে স্ত্রী ও শিশু কন্যাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা, স্বামী আটক

নাটোর শহরের চৌকিরপাড় এলাকায় পারিবারিক কলোহের জের ধরে স্ত্রী মাসুরা বেগম (২০) ও কন্যা সন্তান মাহমুদাকে (৩) শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে স্বামী আব্দুস সাত্তার। এ ঘটনায় স্বামী আব্দুস সাত্তারকে আটক করেছে পুলিশ।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। রোববার দুপুরে শহরের পৌর এলাকার উত্তর চৌকিরপাড় মহল্লায় এই জোড়া খুনের ঘটনাটি ঘটে।

আটককৃত স্বামী আব্দুস সাত্তার একই এলাকার মৃত হযরত আলীর ছেলে। সে একজন পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ী।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, প্রায় ৫/৬ বছর আগে সদর উপজেলার গোয়ালডাঙ্গা গ্রামের মাসুরা খাতুনের সাথে শহরের উত্তর চৌকিরপাড় মহল্লার আব্দুস সাত্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তান জন্ম হয়। তাদের নিয়ে আব্দুস সাত্তার এই বাড়ীতে বসবাস করতো। আব্দুস সাত্তার পেশায় একজন পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ী।

আব্দুস সাত্তার ও মাসুরা বেগমের দীর্ঘদিন ধরেই পারিবারিক বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মাঝে মাঝেই বিরোধ চলছিল। বিরোধের এক পর্যায়ে শনিবার রাতের কোন এক সময় আব্দুস সাত্তার স্ত্রী মাসুরা বেগম ও কন্যা মাহমুদাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর গলায় রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। সকালে ঘরে তালা ঝুলিয়ে সে বাড়ির বাহিরে যায়। দুপুরে বাড়ি ফিরে আসার পর ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়।

এসময় প্রতিবেশী ও স্বজনদের সন্দেহ হলে তারা আব্দুস সাত্তার ও তার স্ত্রীর না ধরে ডাকাডাকি শুরু করে। কিন্তু ঘরের দরজা না খুলে আব্দুস সাত্তার চিৎকার করে বলতে থাকে সে তার ফুটফুটে সুন্দর স্ত্রী ও কন্যাকে হত্যা করেছে। এই কথা শোনার পর প্রতিবেশীসহ সজনরা দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে মা ও মেয়েকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়।

এসময় তারা মৃতদেহ দুটি নামিয়ে চৌকির ওপর শুইয়ে দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘাতক স্বামী আব্দুস সাত্তারকে আটক থানায় নিয়ে যায়।

পরে মা ও শিশু কন্যার মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতালে প্রেরন করে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক জুবায়ের সহ অন্য পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এদিকে মেয়ে নাতনিকে হত্যা করার খবর পেয়ে নানা মেছের আলী ও নানি আছিয়া বেগম গোয়ালডাঙ্গা গ্রাম থেকে মেয়ে জামাইয়ের বাড়িতে ছুটে আসে। এসময় তারা বিলাপ করতে থাকেন তার মেয়ে হত্যাকারীর ফাঁসি দাবী করেন।

নিহত মাসুরার মা আছিয়া বেগম জানান, বিয়ে দেওয়ার পর থেকে তার মেয়েকে নির্যাতন করতে থাকে জামাতা,শাশুড়ি ও ননদসহ জামাতার পরিবারের সদস্যরা। জামাতা সাত্তার মাঝে মধ্যেই যৌতুকের টাকা দাবী করতো। প্রতিবেশীদের সাথে তার মেয়েকে কথা বলতে দিতনা। তিনি তার মেয়ে ও নাতনির হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবী জানান।

এলাকাবসীরা জানান, এলাকায় দীর্ঘকয়েক বছর সংসার জীবন কাটালেও প্রতিবেশীদের কেউ মাসুরা নাম জানতে পারেননি। সাত্তার তার বউকে কারোসাথে কথা বলতে বা মিশতে দিতেননা। সবাই জানতেন সাত্তারের বউ খুব পর্দানশীল।

ঘাতক আব্দুস সাত্তার হত্যাকান্ডের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করে চিৎকার করে বলেন, তিনি নিজে স্ত্রী ও তার কন্যা সন্তানকে হত্যা করেছেন। শনিবার রাতে তাদের মেরে ফেলেছেন। স্ত্রীকে হত্যার পর তার কন্যা খুব কান্নাকাটি করছিল। তখন কানান থামানোর জন্য শিশু কন্যা মাহমুদাকে আছড়িয়েছেন। পরে গলা টিপে মেরে ঝুলিয়ে রাখেন গরের তীরের সাথে।

নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনছুর রহমান জানান, বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের টাকার জন্য স্ত্রী মাসুরা বেগমের সাথে স্বামী আব্দুস সাত্তারের পারিবারিক বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মাঝে মাঝেই ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো।

শনিবার রাতে খাওয়া শেষে আব্দুস সাত্তার স্ত্রী ও ছেলে মেয়েকে নিয়ে ঘরে ঘুমাতে যায়। রাতের কোন এক সময় আব্দুস সাত্তার তার স্ত্রী মাসুরা বেগম ও কন্যা সন্তান মাহমুদাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রাখে।

এ সময় আব্দুস সাত্তারের ছেলেকেও মারধর করে ঘরের মধ্যে আটকে রাখে সে। পরে দুপুরে মরদেহ দুইটি গুম করার চেষ্টায় বস্তাবন্দী করার সময় পরিবারের অন্য সদস্যরা দেখতে পেয়ে পুািলশে খবর দেয়।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ দুইটি উদ্ধার ও ঘটনাস্থল থেকে আব্দুস সাত্তারকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। প্রাথমিক তদন্তে মা ও মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। এব্যাপারে পরিবারের অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এসএইচ-১৬/২৩/২২ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)