নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম শিমুলের উপস্থিতিতে নলডাঙ্গা পৌর মেয়র মনিরুজ্জামান মনিরের ভাতিজাসহ দুই কর্মীকে মারপিটের অভিযোগ উঠেছে এমপির অনুসারীদের বিরুদ্ধে।
হামলা ও মারপিটের শিকার হয়েছেন মেয়রের ভাতিজা শহীদ নজমুল হক সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার হোসেন (২২) ও সেন্টু আলী (২১)। নলডাঙ্গা থানার হতে মাত্র একশো হাত দূরে অবস্থিত পৌরসভা চত্বরে পুলিশের উপস্থিতিতেই হামলার চেষ্টা করা হয়। এ সময় এমপি শিমুলের লোকজন অস্ত্র বের করে মেয়র মনিরকে ধাওয়া দিলে তিনি পৌর কার্যালয়ে ঢুকে আত্মরক্ষা করেন। রোববার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রোববার বিকেলে ৫টার কিছু পর এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল তার অনুসারীদের নিয়ে নলডাঙ্গা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যান। এ সময় ছাত্রলীগ নেতা মেয়রের ভাতিজা শাহরিয়ার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে একই পথে যাচ্ছিলেন। নলডাঙ্গা হাটের ভেতর মোটরসাইকেলের সঙ্গে এমপির গাড়িবহরের ধাক্কা লাগে। এতে এমপির মোটরসাইকেল বহর থেকে কয়েকজন কর্মী নেমে তাদের ওপর চড়াও হলে তারা এমপিকে উদ্দেশ্য করে বাজে কথা বলে। এ সময় এমপির অনুসারীরা তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন এবং তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এরই এক পর্যায়ে এমপির সঙ্গে থাকা আরেকটি গাড়ি থেকে রড, লাঠি বের করে তার অনুসারী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তোহিদুর রহমান লিটন শাহরিয়ারদের পিটিয়ে আহত করে। এ সময় এমপি শিমুল গাড়ি থেকে নেমে তার কর্মীদের নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলের দিকে রওনা হন।
রোববার সন্ধ্যার পর একই পথে এমপি শিমুল তার গাড়িবহর নিয়ে অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে পৌরসভা কার্যালয় অতিক্রমের সময় মেয়র মনির তার লোকজন নিয়ে এমপি শিমুলের পথরোধ করেন। এ সময় এমপি শিমুলের সঙ্গে থাকা জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বাসিরুর রহমান খান এহিয়া চৌধুরী, সাবেক জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম মাসুম, রাশেদুল ইসলাম কোয়েলসহ তার সকল অনুসারী গাড়ি থেকে নেমে মেয়রের ওপর চড়াও হন। এ সময় পুলিশের সামনেই তারা অস্ত্র উঁচিয়ে মেয়র মনিরকে ধাওয়া দিলে তিনি পৌর কার্যালয়ে ঢুকে আত্মরক্ষা করেন। পরিস্থিতি শান্ত করতে আবারো গাড়ি থেকে নেমে আসেন এমপি শিমুল। এ সময় আতঙ্কে নলডাঙ্গা বাজারের দোকানপাট বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। পরে এমপি শিমুল চলে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
মেয়র মনিরুজ্জামান বলেন, সংসদ সদস্যের অনুসারী তোহিদুর রহমান লিটনের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের বিরোধ। সে কারণে সুযোগ পেয়ে তার ভাতিজাকে প্রকাশ্যে বেধড়ক পেটানো হয়। তিনি এর বিচার চাইতে গেলে দ্বিতীয় দফায় অস্ত্র বের করে তার ওপর হামলা চালানো হয়।
তোহিদুর রহমান লিটন অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, এমপি শিমুল আমাদের নেতা। এক সময় মনিরের নেতা ছিলেন তিনি। এখন নেতা বদলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নাম ভাঙ্গিয়ে চলেন। মনিরের ভাতিজা শাহরিয়ার ও তার ক্যাডাররা সংসদ সদস্যের গাড়িবহরের সামনে বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন। তাদের বাধা দিতে গেলে তারা এমপিকে অসম্মানজনক কথা বলে। সিনক্রিয়েট করার জন্য তারাই ধাক্কাধাক্কিতে উস্কানি দেয়। পরে এমপির নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা তাদের প্রতিহত করি। তবে আমাদের ফাঁসাতে তারা নিজেরাই নিজেদের রক্তাক্ত করেছে।
এদিকে, পুলিশের সামনেই অস্ত্র বের করে মেয়রকে ধাওয়া দেয়ার পরও পুলিশের নীরব ভূমিকায় নিয়ে জানতে চাইলে নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান, অস্ত্র বের করে ভীতি সৃষ্টির ঘটনা সত্য নয়। তবে লাঠিসোটা বের করেছিলেন হামলাকারীরা। তারা সকলেই আওয়ামী লীগ কর্মী। তাদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ সম্পর্কে আমরা অবগত। সংসদ সদস্যের সামনে বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো নিয়ে কিছু মারধরের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি শান্ত করেছে। এ ঘটনায় রাত এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।
জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, এমপি শিমুলের উপস্থিতি ও নির্দেশনায় মেয়রের কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। এমপি নিজেও এ হামলায় অংশ নেন যার প্রমাণ সিসিটিভি ফুটেজে আছে।এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালে মনিরুজ্জামান মেয়র নির্বাচিত হন। ওই সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এমপি শিমুল। শুরু থেকেই মনির এমপি শিমুলের অনুসারী ছিলেন। কিন্তু ২০২২ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক হন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান। এ সময় রাতারাতি মনির শিমুল বলয় ত্যাগ করে রমজান বলয়ে আসেন। এরপরে পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও এমপি শিমুলের অনুসারী শরিফুল ইসলাম পিয়াসসহ এমপি শিমুলের লোকজনদের সঙ্গে মনিরের সম্পর্ক ভালো চলছিল না।
এসএইচ-০৩/৩১/২৩ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)