রক্ত দিয়ে প্রসূতি মাকে বাঁচালেন তৃতীয় লিঙ্গের নদী

ফেসবুকে পোস্ট দেখে একজন প্রসূতি মা ও তার অনাগত সন্তানকে বাঁচাতে রক্ত দিতে এগিয়ে এলেন সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সদস্য তৃতীয় লিঙ্গের নদী। তার রক্ত দেওয়ায় বেঁচে যান প্রসূতি মা ও তার নবাগত সন্তান।

গত ১৫ মার্চ সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘একজন প্রসূতি মায়ের জন্য জরুরি ভিত্তিতে এ পজিটিভ রক্তের প্রয়োজন’ এমন একটি মানবিক পোস্ট দেওয়া হয়। পোস্টের সঙ্গে স্থান ও মোবাইল নম্বরও দেওয়া হয়। নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বেশ কয়েকটি ফেসবুকভিত্তিক রক্তদাতা সংগঠনের গ্রুপ এই পোস্টটি শেয়ার করে। তবে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত, রাত গড়িয়ে দিন এলেও কোনো রক্তদাতা পাওয়া যায় না।

এমন পরিস্থিতে রক্ত না পেয়ে প্রসূতি মা ও অনাগত সন্তানকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান স্বজনরা। এ সময় রক্ত দিতে হাজির হন ১৯ বছর বয়সী তৃতীয় লিঙ্গের নদী। মানবতার হাত বাড়িয়ে বাঁচান প্রসূতি মায়ের জীবন।

নদী রক্তদাতাদের সংগঠন জলঢাকা ব্লাড ট্রান্সফিউশন গ্রুপের সেচ্ছাসেবী সাকিবুল ইসলাম সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই প্রসূতিকে রক্ত দেন।

নদী গণমাধ্যমকে জানান, আমার পরিচিত একজন ল্যাব টেকনিশিয়ান ভাই আমাকে রক্ত দেওয়ার বিষয়ে উৎসাহিত করেন এবং এর উপকারিতা সম্পর্কে জানান। উনি আমাকে যখন বললেন একজন প্রসূতি মায়ের জন্য রক্তের প্রয়োজন। প্রথমে কিছুটা ভয় পেয়ে গেছিলাম, তবে উনি আমাকে সাহস দেন। তখন আর না আমি করিনি। জীবনে প্রথমবার রক্ত দিলাম। আমি এখন থেকে নিয়মিত রক্ত দিব।

নদী আরও জানান, প্রথমে আমার অনেক সঙ্গীই বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। তবে আমি রক্ত দেওয়ার পর তারা সবাই আমাকে বলছে তারাও রক্ত দেবে। এ নিয়ে এখন তাদের উৎসাহের শেষ নেই। রক্ত দেওয়ার পর ওই প্রসূতি মা ও তাদের পরিবারের প্রশান্তি আমায় আনন্দ দিয়েছে।

নদীর পরিবার থাকে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুরে। তৃতীয় লিঙ্গের কয়েকজন সঙ্গীর সঙ্গে নদী জলঢাকা উপজেলার আহেলার বাজার নামক স্থানের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।

নদীর পরিচিত ল্যাব টেকনিশিয়ান সাকিবুল রহমান সাকিব গণমাধ্যমকে জানান, আমি ল্যাবে কাজ করি। চাঁদা তুলতে এসে আমার সঙ্গে পরিচয় হয় নদীর। একদিন তাকে জিজ্ঞেস করলাম রক্তের গ্রুপ জানে কি-না। বলল জানে না। পরে আমি তার রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে দেই। রক্ত দানে তাকে উৎসাহিত করি। সুবিধাগুলো বোঝাই। নদী খুব ভয় পেয়েছিল। তবে রক্ত দেওয়ার পর নদীর ভয়টা কেটে গেছে। তার সঙ্গীরাও উৎসাহিত হয়েছে। এটি জলঢাকার রক্তদাতাদের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে।

নীলফামারী ব্লাড ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নীলফামারী সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক নুরুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, নীলফামারীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে আমরা গত দেড় বছর ধরে রক্তের চাহিদা পূরণ করে আসছি। নীলফামারীর তরুণদের মাঝে রক্তদান এখন উৎসবের মতো। জলঢাকায় তৃতীয় লিঙ্গের নদী একজন প্রসূতি মাকে রক্ত দিয়েছেন বিষয়টি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার। আমারা তাকে অভিনন্দন জানাই। আশা করছি রক্তদানে নতুন ডোনারদের অনুপ্রেরণা হবে নদী।

এসএইচ-১৭/১৯/২১ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)