গৃহবধূকে হত্যার পর ঝুলিয়ে রাখেন স্বামী-শাশুড়ি

নীলফামারীর সৈয়দপুরে যৌতুকের জন্য এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার সকালে উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের বাড়াইশালপাড়া আদর্শ গুচ্ছ গ্রাম থেকে মুক্তা বেগম (২৫) নামে ওই গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এ ঘটনায় নিহতের স্বামী তহিদুল ইসলাম (২৮) ও শাশুড়ি তহুরা বেগমকে (৪৮) আটক করা হয়েছে। তারা উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের বাড়াইশালপাড়া আদর্শ গুচ্ছ গ্রামের আফজালের ছেলে ও স্ত্রী।

নিহত গৃহবধূর নাম মুক্তা বেগম (২৫)। সে একই উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের কিসামত উত্তরপাড়ার মোস্তফার মেয়ে।

নিহত মুক্তা বেগমের মা মোরশেদা জানায়, ৯ বছর আগে মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। বিয়ের পর থেকেই জামাই ও তার বাবা মা যৌতুক দাবি করে আসছে। ইতোমধ্যে অনেক টাকা দেওয়া হয়েছে। একটি ছেলেও হয়েছে। তবুও তারা আরও যৌতুক দাবি করছে।

অতিরিক্ত দাবিকৃত যৌতুক না দেওয়ায় এ নিয়ে প্রায়ই তারা আমার মেয়েকে পারিবারিকভাবে নানা অত্যাচার করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার সকালে মুক্তা বেগমকে বেদম মারপিট করে এক পর্যায়ে বসার পিঁড়ি দিয়ে বুকে ও পিঠে আঘাত করলে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে।

এতে অবস্থা বেগতিক দেখে পরিবারের লোকজন প্রথমে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘরের চালের কাঠের বাতার সাথে ঝুলিয়ে দিয়ে চিৎকার করে প্রচার করে যে মুক্তা আত্মহত্যা করেছে। এতে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে তাদের সহযোগিতায় হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তখন পরিবারের লোকজন মুক্তাকে পুনরায় বাড়িতে নিয়ে আসে।

এরপর সকাল ৯টার দিকে খবর পেয়ে মুক্তার মা বাবা ছুটে যায়। এসময় তারা মৃত মেয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে পুলিশকে খবর দেয়।

থানায় উপস্থিত গৃহবধূর ছেলে মোমিন (৫) নানির কোলে বসে পুলিশকে জানায়, আমার মাকে বাবা পিঁড়ি দিয়ে মারছে আর গলায় ওড়না দিয়ে বাঁধছে। আমি এগিয়ে গেলে আমাকেও মারছে। এসময় সে তার পায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখায়।

১১টার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। সেই সাথে হত্যার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে স্বামী ও শাশুড়িকে ধরে নিয়ে আসে। শ্বশুর, দেবর ও খালা শাশুড়ি পলাতক রয়েছে।

সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসনাত খান জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নীলফামারী সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে নিহতের শরীরের আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। তাছাড়া নিহতের একমাত্র সন্তান বলেছে তার মাকে পিঁড়ি দিয়ে পিটিয়ে মারা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

এসএইচ-১৪/১৭/২১ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)