প্রয়োজন একটি ওয়াশরুম আড়ানী মহিলা গেইট কিপারের

নিজ প্রয়োজনের তাগিতে প্রিয় পরিবার কিংবা প্রিয় মানুষটিকে রেখে কে কোথাই কখন ছুটাছুটি করে, তা বুঝার অপেক্ষা রাখে না। হতে পারে ছেলে বা মেয়ে। নিজ পরিবারকে খুশি রাখার জন্য যাই এক জেলা থেকে অন্য জেলাতে, এমনকি অন্য দেশেও। ঠিক তেমনি সংগ্রামী এক নারী তাহমিনা আক্তার।

তিনি সব সময় অপেক্ষায় থাকেন এই বুঝি টেলিফোনে কিংবা মুঠো ফোনে ট্রেন পার হবার খবর আসলো। আর খবর আসলেই শুরু করে দেয় তার নিজের দ্বায়িত্ব। সে খুব ভাল করেই জানে তার একটু অবেহেলাতে হতে পারে বড় দূর্ঘটনা।

ইচ্ছে ছিলো মানুষের সেবা করার কিন্তু সেই সেবা টা যে , এই ভাবে করতে হবে তা কখনো ভাবেনি নরসিংদী সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে ডিগ্রি শেষ করা তাহমিনা আক্তার। সামলাচ্ছেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী রেল কসিং। সকল বাঁধা ডিঙ্গিয়ে মানুষের নিরাপত্তা দেবার জন্য অপেক্ষায় থাকেন ট্রেন কখন আসবে আর ঠিক ঠাক ভাবে তার দ্বায়িত্ব পালন করবে।

তাহমিনা আক্তারের ছোট্ট বয়স থেকে ইচ্ছে ছিলো মানুষের সেবা করার, সেইটা পরিপূর্ণ ভাবে সফল না হলেও আংশিকভাবে সেবা করে জাচ্ছেন রেল ক্রসিং এর গেইট কিপার হয়ে। তার জন্ম স্থান কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলাতে। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস নিজ পরিবার ও সন্তানের কথা চিন্তা করে গেইট কিপার হিসাবে চাকরি করছেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী রেল কসিং এ।

নারী হয়েও কর্মক্ষেত্রে পুরুষের মতই সমান অবদান রাখছেন তিনি। পশ্চিম অঞ্চল রেলওয়ের অধিনে তাহমিনা আক্তারের মত আরো ১০ জন নারি বিভিন্ন রেল ক্রসিং এর গেইট কিপার হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। সংগ্রামী এই সব নারীদের নিরলস ভাবে দ্বায়িত্ব পালনের কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার দূর্ঘটনা ছাড়াই পার হচ্ছেন রেল ক্রসিং।

গেইট কিপার চাকরির অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা হয় তাহমিনা আক্তারের সাথে। তিনি বলেন, প্রথম দিকে আমার এই চাকরিতে আসতে অনেক কথা শুনতে হয়েছে, অনেক বাঁধাও আসছে । তবুও থেমে না থেকে সবাইকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি, মেয়েরা চাইলে সব কাজ করতে পারে। পারে নিজেকে পরিবর্তন করতে। আমি কখনো চাইনি আমি অন্যজনের উপর নির্ভরশীল হতে। আমি দেখিয়ে দিতে চেয়েছি, আমরাও পারি সকল কাজ সঠিক ভাবে করতে।

তাহমিনা জানান, ডিগ্রিতে পড়ালেখা চলাকালীন সময়ে আমি আবেদন করেছিলাম। যদিও চাকরিটা সরকারি না হয়েও আমি হাজার বাঁধা পার করে প্রজেক্ট এর আওতাধীন পরিক্ষা দিয়েই চাকরিটা পেয়েছি। এখন আশা ও ভরসা চাকরিটা যেন সরকারের আওতাধীন হয়।

শারমিন আক্তারের চাকরির বয়স তিন বছর। এই তিন বছরে এমন কোন দিন যায়নি তার দ্বায়িত্বকে ফাঁকি দিয়ে রেইল ক্রসিং ট্রেন পার হয়েছে।

তিনি আরো জানান, ডিউটির জন্য ছোট্ট একটি ঘর থাকলেও নেই ওয়াস রুমের ব্যবস্থা। প্রয়োজনে পাশের বাড়িতে অনুরোধের মাধ্যমে নিজ প্রয়োজন সারতে হয়। ফলে নিজ দ্বায়িত্বের ঝুকি থেকেই যাই। সেই সাথে ব্যবহার করা হচ্ছে নিজ খরচে কারেন্ট। যদি এই সকল ব্যবস্থা থাকতো তাহলে নিজের রেইল ক্রসিং পার হওয়া পথচারীদের থাকতো না কোন ঝুঁকি।

তাহমিনা আক্তারের বিষয় কথা হয় আড়ান স্টেশন মাস্টার ময়েন উদ্দিনের সাথে, তিনি জানান, তাহমিনা আক্তার অত্যান্ত দায়িত্ববান একজন মেয়ে। আজ পযন্ত কখনো দেখিনি তার নিজ দায়িত্বের অবহেলা।

তাহমিনা আক্তার চান তার এই চাকরি সরকারি করন হবার পর ট্রান্সফারের মাধ্যমে তার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে। থাকতে চান পরিবারকে নিয়ে হাসিখুশি ।

এআর-০৩/০৩/০৫ (মোস্তাফিজুর রহমান)