প্রধান শিক্ষককে মারধর, আ.লীগ নেতা গ্রেফতার

পাবনার বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া-জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসারের সামনেই মারধরের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার হাটুরিয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বেড়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিদ মাহমুদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় আওয়ামী লীগ সভাপতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষককে মারধর ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। হাজি নুরুল ইসলাম ওই বিদ্যালয়ের সভাপতির পাশাপাশি হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। মঙ্গলবার দুপুরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তাকে মারধর করেন নুরুল ইসলাম। এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষক শামীম আকতার মামলা করেছেন।

জানা যায়, বিদ্যালয়ের দুই বিঘা আয়তনের একটি পুকুর লিজ দিয়ে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলামের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের তিক্ততা চলছিল। এরই জেরে প্রধান শিক্ষককে মারধর করেন বিদ্যালয়ের সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা।

প্রধান শিক্ষক শামীম আকতার বলেন, সভাপতি নুরুল ইসলাম বিদ্যালয়ের দুই বিঘা আয়তনের একটি পুকুর ৯ বছর ধরে লিজ দিয়ে টাকা তুলে বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। এবারও পুকুরটি বিদ্যালয়ের সদস্য আব্দুল আলীমকে লিজ দিয়ে টাকা তুলে বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা না দিয়ে সভাপতি ও সদস্য আলীম ভাগ করে নেন।

তিনি বলেন, দুই বছর হলো আমি বিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছি। যোগদানের পর থেকে পুকুর লিজের টাকা বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা দেয়ার জন্য সভাপতিকে অনুরোধ করলে শোনেননি। উল্টো বিষয়টি নিয়ে সভাপতি ও তার সহযোগী আমার ওপর ক্ষিপ্ত হন। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আবু সাইদ বিদ্যালয়ে আসেন। বিষয়টি সভাপতিকে জানিয়ে বিদ্যালয়ে আসার জন্য বলি। কিছুক্ষণ পর সভাপতি তার দুই সহযোগী আব্দুল আলীম এবং আলতাফ হোসেনকে নিয়ে আমার কক্ষে আসেন।

এ সময় সহকারী শিক্ষা অফিসারের কাছে আমার বিরুদ্ধে বানোয়াট ও মিথ্যা অভিযোগ দেন সভাপতি। প্রতিবাদ করলে সভাপতি নুরুল ইসলাম আমার ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে আমাকে কিলঘুষি ও অফিসের চেয়ার দিয়ে মারধর করেন। তার সঙ্গে থাকা দুই সহযোগীও আমাকে মারধর করেন। উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসারের সামনেই আমাকে মারধর করেন তারা।

প্রধান শিক্ষক শামীম আরও বলেন, আমাকে মারধরের সময় সহকারী শিক্ষা অফিসারসহ অন্যান্য শিক্ষক তাদের থামানোর চেষ্টা করেন। তখন সহকারী শিক্ষা অফিসারকেও কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন সভাপতি। সভাপতি ও তার সহযোগীদের মারধরে আমি গুরুতর আহত হই। কান্না পর্যন্ত করেছি, তবুও তারা আমাকে ছাড়েনি। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে এক শিক্ষকের হাত কেটে যায়। পরে আমাদের দুজনকে বেড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আবু সাইদ বলেছেন, প্রধান শিক্ষককে আমার সামনে মারধর করেছেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা ও তার দুই সহযোগী। ওই সময় মারধর ঠেকাতে গেলে সভাপতি নুরুল ইসলাম আমাকে কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

বিএ-২২/২৫-০৪ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)