থানায় ধর্ষকের সঙ্গে গৃহবধূর বিয়ে : এসআই বরখাস্ত

পাবনায় ধর্ষণের অভিযোগকারীর সাথে থানা চত্বরে অভিযুক্ত ধর্ষকের বিয়ে দেওয়ার ঘটনায় পুলিশের তদন্ত কমিটি সত্যতা পাওয়ায় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবাইদুল হককে প্রত্যাহার এবং কাজী ডেকে বিয়েতে সহায়তা করায় এসআই একরামুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম (বিপিএম,পিপিএম) বৃহস্পতিবার সকালে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে বুধবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। এরপরই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এই শান্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলো। অপর দিকে বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার জানান, পুলিশের গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ কারণে ওসি ও এসআই একরামুল হকের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হয়। তাদের কাছ থেকে সন্তোষজনক জবাব না মেলায় শান্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

গণধর্ষণের অভিযোগ তোলা গৃহবধূর মামলা গ্রহন না করে অভিযুক্ত ধর্ষকের সাথে থানায় বিয়ে দেওয়া হয়েছে এমন সংবাদ বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর ৯ সেপ্টেম্বর সোমবার বিকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার) ফিরোজ আহমেদকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিকে মঙ্গলবার রাত ১২টার মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বুধবার সকালে প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি।

পুলিশ সুপার আরো জানান তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের নির্দেশে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবাইদুল হককে প্রত্যাহার এবং এসআই একরামুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৯ আগষ্ট রাতে পাবনা সদর উপজেলার সাহপুর যশোদল গ্রামের এক গৃহবধুকে বিয়ের প্রলোভনে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে রাসেল হোসেনসহ কয়েক যুবক। পরে গৃহবধূকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায় রাসেল। বিষয়টি ওই নারী বাড়ি ফিরে স্বজনদের জানালে গত ৫ সেপ্টেম্বর তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেই গৃহবধূ নিজেই বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগ দায়েরের পর পুলিশ রাসেলকে প্রথমে আটক করে। পরে ওই নারীর স্বামী থাকা সত্ত্বেও পূর্বের স্বামীকে তালাক দিয়ে অভিযুক্ত রাসেলের সঙ্গে থানায় তাকে বিয়ে দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ঘটনাটি বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশ হলে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন এবং ধর্ষণ মামলা নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেয় জেলা পুলিশ।

৯ সেপ্টেম্বর সোমবার পুলিশ ওই গৃহবধূকে থানায় ডেকে নিয়ে মামলা করে এবং অভিযুক্ত রাসেনকে গ্রেফতার করে। এদিকে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের নির্দেশে পাবনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ নেওয়াজকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।

অপরদিকে ধর্ষণের মামলায় বৃহস্পতিবার সকালে আরও দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে এ মামলায় মোট চার জনকে গ্রেফতার করা হলো।

পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার সকালে সদর উপজেলার টেবুনিয়া এলাকা থেকে ইসলামগাঁতি গ্রমের আব্দুস সামাদ সরদারের ছেলে জাকির হোসেন ড্রাইভার ও ফলিয়া গ্রামের কালাম মোল্লার ছেলে সঞ্জুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এর আগে গত সোমবার ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি রাসেলকে এবং বুধবার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শরিফুল ইসলাম ঘন্টুকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ঘন্টু দাপুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

এসএইচ-২৯/১২/১৯ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)