চোখের জলে শুরু বিচার কাজ শেষ হলো সন্তান-মায়ের হাসিতে

আড়াই বছরের শিশু আরফি (ছদ্মনাম)। যে সময়টাতে বাবা-মার স্নেহ ভালোবাসায় বেড়ে ওঠার কথা ঠিক সেই সময় বাবা-মার সাংসারিক বিবাদের শিকার হয়ে মাতৃস্নেহ ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত সে। মা থাকা সত্ত্বেও মায়ের মুখটুকু দেখার সুযোগ নেই ফুটফুটে এই শিশুটির।

বাবা-মার সাংসারিক বিরোধ গড়ায় আদালত পর্যন্ত। বাদী মা তার স্বামীর বিরুদ্ধে ঈশ্বরদী পারিবারিক আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। নাবালক সন্তানের অনাদর, অবহেলার কথা উল্লেখ করে গত ২৫ আগস্ট তাকে নিজ জিম্মায় পাওয়ার প্রার্থনা করেন।

আদালতের বিচারক এস এম শরিয়ত উল্লাহ্ বাদীর বক্তব্য শুনে নাবালকের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষা ও কল্যানার্থে তার প্রকৃত অবস্থা এবং নাবালকের বক্তব্য শোনার জন্য পরবর্তী ধার্য তারিখে নাবালককে তারা বাবাসহ আদালতে হাজির নিশ্চিত করার জন্য ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দেন।

সে অনুযায়ী রোববার নাবালককে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। সাথে তার বাবা এবং দাদা উপস্থিত ছিলেন। এ মামলার শুনানিকালে আদালতে এক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। নাবালককে আদালতের উপস্থাপন করার পর তার মাকে ডাকা হয়। প্রায় ৬ মাস পর বাদী তার সন্তানকে দেখে কাঁদতে থাকেন। মায়ের কান্নার আওয়াজ এবং চোখের পানি নিমিষেই আদালতের চিত্রপট পাল্টে দেয়। এজলাসে দাদার কোলে নাবালক এবং মুখোমুখি তার মা। নাবালককে কোলে নেওয়ার জন্য আদালত বাদীকে বললেন। বাদী তার ছেলেকে কোলে তুলে নিলেও শিশুটি অস্বস্তিবোধ করছিল। সে মায়ের কোল থেকে দাদার কোলে ফিরে গেল।

এই চিত্র দেখে আদালত নাবালককে তার মায়ের সাথে একান্তে কিছু সময় কাটানোর জন্য বিচারকের খাস কামরায় বসতে বলেন। যেহেতু শিশুটি দীর্ঘদিন তার মাকে ছাড়া বাবা-দাদার সাথে ছিল। সেহেতু স্বাভাবিকভাবেই উন্মুক্ত আদালতে সে বাদীর কোলে অস্বস্তি বোধ করছিল। তাছাড়া, বিবাদী হয়তো শিশুটিকে তার মায়ের কাছে না যাওয়ার বিষয়ে প্রভাবিত করে থাকতে পারে। সব কিছু বিবেচনা করে আদালত শিশুটিকে বিচারকের খাস কামরায় তার মায়ের সাথে একান্তে থাকার ব্যবস্থা করলেন।

এরপর আদালতের অন্যান্য শুনানি কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর মা এবং শিশুকে পুনরায় বিচারকের সামনে উপস্থিত করা হয়। এবার এক ভিন্ন চিত্র দেখা গেল। মায়ের কোলে হাসিখুসি প্রাণবন্ত এক শিশু দেখতে পেল উপস্থিত সবাই। আদালত শিশুটি এখন কেমন আছে এ বিষয়ে তার মুখ থেকে কিছু কথা শুনলেন। আধো আধো সে কথা স্পস্ট না হলেও এটা বোঝার বাকি রইল না সে তার আপন নীড় খুঁজে পেয়েছে।

এরপর শিশুটির বাবা এবং দাদাকে মুখোমুখি করা হলো। এবার তাদের বলা হলো শিশুটিকে কোলে নিতে। কিন্তু, কোনোভাবেই সে তার মায়ের কোল থেকে যেতে চাচ্ছিল না। আদালত সব কিছু বিবেচনা করে নাবালককে তার মায়ের হেফাজতে প্রদান করেন। একই সাথে এই মামলায় বাদী-বিবাদীর মধ্যে আপসের জন্য পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। আদালতের বিচক্ষণতায় শিশুটি ফিরে পেল তার মায়ের কোল। সন্তানের জন্য মায়ের চোখের জলের মধ্য দিয়ে দিনের যে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল তা মা, শিশু এবং উপস্থিত সবার হাসিমাখা মুখ দিয়েই শেষ হলো।

এসএইচ-১৪/১২/২১ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)