করোনা ভাইরাস: বাঁচতে হলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে

করোনা ভাইরাস এর কারণে এখন সারা বিশ্বই খুব খারাপ সময়ের মধ্যে যাচ্ছে। প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন নাম, বাড়ছে মত্যুর সংখ্যা। কেউই আমরা এর থেকে নিরাপদ নই। যেহেতু করোনা ছোয়াচে সংক্রামক এক প্রকার ভাইরাস যা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা অন্য ব্যাক্তির মাঝে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

আরো ভয়াবহ ব্যাপার হল এই করোনায় কেউ আক্রান্ত হলেই যে ব্যাক্তি সাথে সাথে বুঝতে পারবেন সে আক্রান্ত কি না, তা কিন্তু নয়। এই ভাইরাস দেহে প্রবেশ করার ১৪ দিনের মাথায় এসে লক্ষণগুলো দেখা দেয় । কিন্তু এই ১৪ দিনে সে ব্যাক্তি দেদারসে অন্য সুস্থ মানুষের সাথে মিশে সকলে সংক্রামিত করে ফেলেছেন।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার সকলকে হোম কোয়ারাইন্টাইনে থাকতে বলেছেন এবং সবাই তা মেনে চলার চেষ্টাও করছেন। কিন্তু এই ১৪ দিনের পিরিয়ড কিন্তু এখনও শেষ হয়নি। বাংলাদেশে শুধু মাত্র ঢাকা ও চট্টগ্রাম বাদে এখন পর্যন্ত কোথাও করোনা টেস্টিং সেন্টারও নেই, এজন্য বোঝা যাচ্ছেনা বা জানা যাচ্ছেনা যে কোথায় কত জন আক্রান্ত হচ্ছে।

আগামী সপ্তাহের মধ্যে সারাদেশে করোনা টেস্ট শুরু হবে বলে একাধিক গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানা গেছে। টেস্ট শুরু হলেই প্রতিদিন আপডেট আশা শুরু করবে কোন জেলায় কত জন করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে। এখন যেমন আমরা টেলিভিশনে দেখছি কোন দেশে কত জন আক্রান্ত এবং কত জন মারা যাচ্ছেন কিন্তু আগামী সপ্তাহ থেকে আমাদের দেখতে হবে বাংলাদেশ এ কোন জেলায় কত জন আক্রান্ত আর কত জন মারা যাচ্ছে।

উন্নত দেশগুলো যেখানে এই করোনা মোকাবেলায় লেজেগোবরে অবস্থা করে ফেলছে যেখানে বাংলাদেশে কী ভয়াবহ অবস্থা হতে পারে সেটা আমরা সকলেই আন্দাজ করতে পারছি। এখন সময় এসেছে নিজেদের সুরক্ষা নিজেদেরই করার । এমন সময় শুধু সরকারের উপর ভরসা করে বসে থাকা মনে হয়না যে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আজ থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে একদম প্রান্তিক গ্রাম পর্যায় থেকে । আর এক্ষেত্রে সবথেকে বড় ভূমিকা পালন করবে এলাকার যুবক ভাই বোনেরা ।

খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ড এ একটি করে কন্ট্রোল রুম খুলতে হবে ওয়ার্ড মেম্বার এর সহযোগিতায়। এখানে গ্রামের যুবক ভাইবোনেরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যুক্ত থাকবে বিশেষ করে কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইসিপি,প্যারামেডিকেল কিংবা মেডিক্যাল টেকনোলজির বা মেডিকেল শিক্ষার্থী যদি থাকে, তারা নিজেরাই এই টিমকে লিড দিবে আর অন্যান্যরা তাদেরকে সাপোর্ট প্রদান করবেন।

এই কন্ট্রোল রুমে এক বা একাধিক ফোন নাম্বার চালু থাকবে এবং এই ফোন নম্বর সম্বলিত একটি লিফলেট যেখানে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সচেতনতা বিধি লেখা থাকবে সেটি খুব দ্রুত কম্পিউটারে প্রিন্ট বা ফটোকপি করে গ্রামের প্রতিটি বাড়ির দরজায় আঠা দিয়ে স্বেচ্ছাসেবিরা লাগিয়ে দিয়ে আসবেন এবং বলে আসবেন যে কেউ যাতে কোন ভাবেই আতংকিত না হয়ে সাবধানে থাকেন। যেকোন সমস্যা প্রতীয়মান হলেই কন্ট্রোল রুমের নাম্বারে কল করবেন।

কন্ট্রোল রুমে ৩ থেকে ৫ টা অটো রিকশা সব সময় প্রস্তুত রাখবেন যেন যেকোন সময় কেউ অসুস্থ্য হলে থাকে নির্দিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়। এই কন্ট্রোল রুম থেকে সব সময় ইউনিয়ন পরিষদের অনুরূপ কন্ট্রোল রুমের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করবেন এবং জরুরি কোন নির্দেশনা আসলে তা আবার গ্রামের সকলের কাছে পৌছে দিতে পারেন ।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তার ইউনিয়ন একটি কুইক রেসপন্স কমিটি গঠণ করে সকল অর্ডার কন্ট্রোল রুমের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করবেন এবং কেউ বেশি অসুস্থ্য হলে অ্যাম্বুলেন্স এর ব্যবস্থা করবেন। সাথে সাথে উপজেলা থেকে প্রাপ্ত নির্দেশনা সকলের কাছে পৌছে দেবেন। এলাকায় যদি কোন কমিউনিটি রেডিও থাকে তাহলে সেটিকে কাজে লাগিয়ে বেশী বেশি করোনা সতর্কতা বাণী প্রচার করা এবং ২৪ ঘন্টা এই রেডিও অনুষ্ঠান প্রচার করে সাধারণ মানুষকে সঠিক তথ্য প্রচার করার মাধ্যমে ভূমিকা রাখবেন।

আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই কন্ট্রোল রুমের স্বেচ্ছাসেবকরা এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষদের খোজ খবর নিবেন, প্রয়োজনে তাদের তালিকা প্রস্তুত করে এলাকার বিত্তবান ব্যাক্তিদের সহযোগিতায় তাদের খাবারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবস্থা করবেন।

আমরা সবাই শুধু শহর শহর নিয়ে ভাবছি, কিন্তু এটা এখন মাথায় রাখতে হবে যে গ্রামে কিন্তু এখন বেশী মানুষ অবস্থান করছে, অসচেতন মানুষের সংখ্যাই কিন্তু বেশি। তাই আমাদের উচিত তাদের কে বেশী বেশি সচেতন করা এবং নিরাপদে রাখা। ঐক্যবদ্ধ সামাজিক শক্তিই আমাদের বাঁচাতে পারে করোনার হাত থেকে। আমরা সর্বান্তকরণে বিশ্বাস করি করোনার মতো এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠবই।

হাসান তানভীর