করোনাকালিন বয়:সন্ধি ছেলে মেয়ের সাথে আচরন ও করনীয়

সারা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের ভারি বাতাস আজ বাংলাদেশের আকাশেও বিদ্যমান। আমরা জানি না এ বিভীষিকাময় পরিস্থিতি থেকে কবে আসবে মুক্তি, কবে আসবে স্বাভাবিকতা।

করোনা সময়ের আজ প্রায় তিনমাস অতিক্রান্ত হবার পরও আক্রান্তের ও মৃতের সংখ্যা তিল পরিমানও কমেনি বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। তারপরও সুস্থ্ হবার সংখ্যাটা এনে দিচ্ছে একটু খানি স্বস্তি।

থেমে গেছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোলাহল। বন্ধ হয়ে গেছে বাচ্চাদের ক্লাস, পরীক্ষা আর এ্যাসাইন্টমেন্টের হট্টোগোল। মাঠ গুলো ভরে গেছে সবুজ ঘাস আর গাছ গাছালিতে। আর শূন্যতায়, নেই কোন চিৎকার ফুটবলের গোল বা ক্রিকেটের উইকেট পতনের। এমনকি সকাল থেকে মুখরিত বিদ্যাপিঠে নেমে এসছে নীরবতা।

শূন্য থেকে মোটামুটি দশ বছর পর্যন্ত শিশুদের গোন্ডি থাকে স্কুল আর মা। বাসায় মা-বাবা, ভাই-বোন এবং যৌথ পরিবার হলে অন্যান্যদের সাথে ভালোই কাটে আনন্দে। তৈরী হয় তার নিজের জগৎ। কিন্তু বয়:সন্ধি বয়সের অর্থাৎ যাদের বয়স এগারো বা বারো থেকে ষোল বা সতেরো পর্যন্ত তাদের সময়টা থাকে খুব নাজুক। সে সময় তাদের শারীরিক ও মানসিক নানা পরিবর্তন দেখা দেয়। তাই প্রয়োজন হয়ে পড়ে তাদের প্রতি একটু বেশি গুরুত্বের।

তারা এ বয়সে না ছোট আবার না বড়। বাবা-মা র সাথে তারা সবকিছু শেয়ার করতে সাচ্ছন্দ বোধ করে না। স্কুল এবং বন্ধুদের সাথে গড়ে ওঠে একটা সখ্যতা। নিজের মনের কথা তাদের সাথেই বলে থাকে। অনেক সময় মা-বাবার সাথে তৈরী হয় দুরত্ব।

এ বয়সের বাচ্চারা নিজেদের একটা জগৎ তৈরী করে ফেলে। তাদের কাছে মনে হয় তারা অনেক বোঝে, তারা মতামত দিতে চায়, তারা চায় তাদেরকে মূল্যায়ন করা হোক। এ সময়টা তাদের জন্য ভীষণ নাজুক। আমাদেরও উচিত তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা। আমরা চাইও তেমন। তবে সবসময় এমনটা হয়ে ওঠে না। ভুল বুঝাবুঝির একটা সুক্ষ জায়গা থেকেই যায়।

বর্তমানে করোনাভাইরাসে প্রতিদিনের আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি সম্পর্কেও তারা পুরোটাই জানে বলা যায়। তাই বড়দের সাথে সাথে তাদের মধ্যেও একটা মানসিক চাপ পরিলক্ষিত হচ্ছে।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় বিধি-নিষেধে শিথিলতা আনায় দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। বিশ্বের এমন শীর্ষ ১০ দেশের তালিকা তৈরি করেছে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান। এ তালিকায় জার্মানি, ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং সুইজারল্যান্ডের পর পঞ্চম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

আজ বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের ১১১ তম দিন। আমরা এ পর্যন্ত নানা রকম প্রেডিকশন করে গেছি। কিন্তু ভয়াবহতা দিনদিন বেড়েই চলেছে। আমরা এখনও জানিনা কতদিন সময় লাগবে এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে।

বয়:সন্ধি বয়সের বাচ্চাদের চেনা জগৎ থেকে যেন জোর করে হঠাৎ বন্দী করে ফেলা হয়েছে। শুরু থেকে দু’ সপ্তাহ করে একটা আশার নক্ষত্র তবুও দেখা যাচ্ছিল। এখন সে আশাও তারা ছেড়ে দিয়েছে। এমন সময় তাদের প্রতি আমাদের একটু বেশি মনোযোগ দেয়া জরুরী।

বর্তমানে অধিকাংশ পরিবারই একক। মা-বাবা, একটি বা দু’টি সন্তান। লকডাউনের শুরুতে তবুও একটা ছুটির আমেজ ছিল।কিন্তু অতিরিক্ত ছুটিও একসময় দম বন্ধ করে ফেলে। সেই সাথে যে পরিবারে মা-বাবা উভয়েই কর্মজীবি আবার করোনা সময়ে অফিস করতে হচ্ছে তাদের জন্য উৎকণ্ঠার মাত্রা আরো এক ধাপ বেশি।

এ সময়ে ঘরবন্দী অবস্থায় অনলাইনে স্কুল কার্যক্রম অবশ্যই তাদের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে গত মার্চের মাঝামাঝি সময়ে স্কুল বন্ধ হবার পর তাদের স্বাভাবিক ক্লাসের কার্যক্রম পুরোপুরি ব্যহত হয়েছে। এমতাস্থায় তাদের জন্য কোন প্রকার পরীক্ষা বা টেস্ট অতিরিক্ত মানসিক চাপের আরও একটি কারন হিসেবে অবশ্যই বিবেচ্য।

কোভিড ১৯ পেনডামিকে বিভিন্ন দেশে শক্ত কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং তা কার্যকরও করা হয়েছে। সে হিসাবে আমাদের মত জনবহুল দেশে লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, প্রোপার টেস্টিং, এমনকি সময়মত চিকিৎসা কোনটাই করা সম্ভব হয়নি। সেই সাথে রয়েছে সাধারন মানুষের অজ্ঞতা। এমতাবস্থায় আমরা পিক আওয়ারে চলে এসেছি বা ফলডাউনে আছি, সে চিত্র এখনও অস্পষ্ট।

যখনই মহামারী আসে তখনই নারী ও পুরুষের পাশাপাশি বয়:সন্ধী বয়সের ছেলেমেয়ের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আমরা তাদের প্রতি যত্নবান হই, তাদের মানসিক অবস্থার কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করি, সময় দেয়। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে এই পেনডামিকে সতেজ রাখি।

শাহানা পারভীন, স্টেশন ম্যানেজার, রেডিও পদ্মা ৯৯.২ এফ এম