শ্রাবনে সয়লাব পথঘাট ‘চাই সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও প্লাবন নিরসনে কার্যকরী পদক্ষেপ’

ষড়ঋতুর রূপ বৈচিত্রে আষাঢ়ের পথ ধরে আসে বর্ষা।শ্রাবণ বর্ষায় নিরবচ্ছিন্ন বৃষ্টিপাতে যেমন একদিকে প্রখর তাবদাহ থেকে মুক্তি দেয়,তেমনি, এর অবিরাম উপচে পড়া ধারায় নাগরিক জীবনযাপনকে বিব্রতও করে তোলে।

অনভিপ্রেত বর্ষনের পথঘাট প্রান্তর তলিয়ে যায়। প্লাবনে ভেসে যায় শহরে বা অঞ্চলে বিভিন্ন অলি, গলি, খানা খন্দ,ডোবা নালা,এমনকি দোকানপাটও।বাইরে কাজ থাকলেও, কখনোবা সেচ্ছায় বরন করে নিতে হয় বন্দিদশা।
এ প্রতিকূল অবস্থায় স্কুল,কলেজ বা অফিসে ছুটতে গেলে মানুষের যেন দূর্দশার অন্ত নেই।

অবিরল ধারার বৃষ্টিতে যখন নগরের রাস্তাঘাট, ভরাডুবি পানিতে সয়লাব; তখন যাতায়াত বা বন্যাপ্লাবিত রাস্তা পারাবার হতে গিয়ে সাধারন মানুষকে পোহাতে হয় সীমাহীন দূর্ভোগে।

আর স্কুল ছুটির পর কোমলমতি শিক্ষার্থী মা বা বাবার হাত ধরে অপেক্ষমান কতক্ষনে ঘরে ফিরবে।কিন্তু এ সময়ে রিক্সা বা অন্য যাতায়াতকারী যান গুলোও মুখ ফিরিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
কখনোবা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অনেক বেশী ভাড়ার দাবী জানায়।

কেনই বা প্লাবন হচ্ছে, প্রতিবছর কেন বর্ষায় এ সমস্যা দূর্দশায় প্রকোপিত হচ্ছে তা চিহ্নিত করার বিষয়টি বর্তমানে অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে বৈকি।

বন্যা সৃষ্টি হওয়ার, প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম দুটো কারনকে দায়ী করা যায়।

তন্মধ্যে প্রধান ও মূল কারন হচ্ছে টানা বর্ষন সহ ভারী বৃষ্টি বা অতি বৃষ্টি।

দেশের নদ-নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় গভীরতা হ্রাস পায়, ফলে নদী খাতের পানি ধারণের ক্ষমতা কমে যায়। নদীর পানি উপচে এসে সৃষ্টি হয় প্লাবন।

মনুষ্যসৃষ্ট বহু কারনও বন্যা প্লাবনের জন্যে দায়ী।

অববাহিকার উপর দিয়ে প্রতিবছর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নির্মিত হচ্ছে, পানি নিষ্কাশন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।ফলে নদী প্রবাহ পথ ক্রমাগত সংকুচিত হচ্ছে।এতে পানি দ্রুত গতিতে নীচের দিকে নেমে প্লাবনের সৃষ্টি করছে।
অববাহিকার উপর দিয়ে বন কাটা হচ্ছে।ফলশ্রুতিতে ভূমি ক্ষয় হচ্ছে।যা পানির সাথে মিশে নদীর তলদেশে পলি জমা হচ্ছে।

এভাবে নদীগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

ফলস্বরূপ,পানি ধারনক্ষমতা অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস পাচ্ছে সৃষ্টি হচ্ছে প্লাবন।

পুকুর,ডোবা,খাল বিল ভরাট করে সেখানে নির্মিত হচ্ছে বহু স্থাপনা।

ডাস্টবিন থাকা স্বত্তেও মানুষ যেখানে সেখানে ময়লা,আবর্জনা,যত্রতত্র ফেলছে।কিন্তু এটি প্রতিরোধে কোন সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।

বিভিন্ন স্থানে ড্রেনগুলোও ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বিস্কিট বা চিপসের প্যাকেট, পলিথিন এসমস্ত অপচনশীল সামগ্রী যেখানে সেখানে ফেলে শহরের পরিবেশ যেমন অপরিচ্ছন্ন করছে তেমনি প্রয়োজনমতো বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশনের সুযোগ হারাচ্ছে।

প্লাবন প্রতিকারের জন্যে নিম্নোক্তভাবে উপায় বা সমাধান বের করা যায়।

নদীর খনন ও সংস্কার কর্মসূচী গ্রহন করতে হবে।

নদীগুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।

পরিকল্পিত উপায়ে রাস্তাঘাট নির্মাণ করতে হবে।

প্রচুর পরিমানে গাছপালা লাগাতে হবে।কারন গাছপালা যেমন ঝড়ঝঞঝা, প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে ঢাল রূপে আমাদেরকে রক্ষা করে, পরিবেশ বাঁচায়, তেমনি জলচ্ছ্বাস থেকেও বাঁচায় বহুভাবে।

যেখানে সেখানে রাস্তা খননের ব্যবস্থা বা সংস্কার করা হলে তা পর্যবেক্ষন করে যত দ্রত পাকা করে ফেলার পদক্ষেপ নিতে হবে।

ময়লা,আবর্জনা যেখানে সেখানে যাতে না ফেলা হয় প্রয়োজনে এ সমস্যা সমাধানে আইনের আওতায় বা আইনানুগ ব্যবস্থা আনা বাঞ্চনীয়।

শ্রাবনে সৃষ্ট বন্যা বা রাস্তাঘাট প্লাবনের কারন গুলো চিহ্নিত করে, জাতীয় বা স্থানীয় ভাবে দ্রুত ক্ষয়ক্ষতি ও চাহিদা নিরুপনের ব্যবস্থা করতে হবে।

সরকার এর পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও সামরিক বাহিনীর সাথে সমন্বয় সাধন করে এ সমস্যা নিরসনে সম্মিলিত প্রচেষ্টা অগ্রনী ভূমিকা পালন করতে পারে।সর্বোপরি প্রতিবছর বর্ষায় জনজীবনে এ চরম ভোগান্তি নিরসনে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে।

লেখক: হাসিনা সাঈদ মুক্তা, ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা