নারীরা জীবনের সকল পর্যায়ে সহিংসতার শিকার
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমন ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় কমবেশি সকলকেই প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষের জনজীবন হয়ে পড়েছে অনেকটা বিপর্যস্ত। আমাদের আবারো নতুন করে সচেতন হতে হচ্ছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরের পর থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু হটাৎ করেই আবারো বাড়তে থাকে করোনার প্রকোপ।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে এখন পর্যন্ত মোট করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৩৪ লাখ ৩১ হাজার ৪৯৫ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ কোটি ৫৫ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৩ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৪ কোটি ৪৫ লাখ ৬৯ হাজার ৩২২ জন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯।
বাংলাদেশে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ২৮৪ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৮৫ হাজার ১৯৪ জনে। আর সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ২৭ হাজার ৫১০ জন।
বাংলাদেশের নারী ও মেয়েরা করোনা মহামারি সময়ে বেশি মাত্রায় পারিবারিক সহিংসতার মুখে পড়ছেন। ২০২৫ সালের মধ্যে “নারী ও শিশু নির্যাতনহীন একটি সমাজ গঠনের” জাতীয় পরিকল্পনা পর্যায়ে আসার পরও এ সঙ্কট দেখা যাচ্ছে। নারীরা জীবনের সকল পর্যায়ে সহিংসতার শিকার হচ্ছেন।
একজন নারী অধিকার বিষয়ক আইনজীবী, “পারিবারিক সহিংসতাকে তুচ্ছ বিষয় বলে মনে করেন।”, এমন ধরনের ঘটনা পরিবারে স্বাভাবিকভাবেই ঘটে থাকে। বিষয়গুলো হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে । আর গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি থাকার পরেও, নির্যাতনের বা সহিংসতার খবরে আইনি পদক্ষেপ ও ভুক্তভুগিদের জন্য পরিসেবা খুবই সীমিত।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ নারী এবং মেয়েরা নানা মাত্রায় লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতার শিকার হচ্ছে। ২০১৫ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৭০ শতাংশের বেশি বিবাহিত মেয়েরা সঙ্গীদের কাছে থেকে নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
এদের বেশিরভাগই কখনই কাউকে কিছু বলেনি এবং আইনি সহায়তা নেননি। মাত্র ৩ শতাংশেরও কম আইনি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। করোনার সময়ে ২০২০ সালের প্রথম ৯ মাসে কমপক্ষে ২৩৫ জন নারীকে তাদের স্বামী বা তাদের পরিবার হত্যা করেছে বলে বাংলাদেশ মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মাধ্যমে জানা গেছে।
নির্যাতনের শিকার নারীরা নিজেদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আইনের সহায়তা নিতে অনীহা প্রকাশ করে
থাকেন।
২৪ বছর বয়সী হীরা বলেছেন, ২০১৭ সালে তার বিয়ে হয়। সে সময় তার বাবা মা যৌতুক দেবার পরেও তার ওপর স্বামীর বাড়ির লোকজন মারধর করে। এখন করোনা সময়ে আয় কমে যাবার কারনে যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে এবং নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। এমনকি মারধরের কথা বাবার বাড়ীতে বলার পরেও মা বলেছিলেন, “তোমাকে সহ্য করেই থাকতে হবে”।
এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে গেলেও আশানুরূপ সাহায্য পাননি হীরা। শেষ পর্যন্ত তার শ্বশুর বাড়ীর লোকজন জোর করে গলায় এসিড ঢেলে দিয়েছিল।
দেশের নারীরা খুব কম নির্যাতনের বিচার পেয়ে থাকেন। কারণ তারা তথ্য ও আইনি পরামর্শ সম্পর্কে জানে না। ফলে আরও বেশি নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে।
বিশেষ করে সেই সকল নারীদের জন্য আইনি সহায়তা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, যারা আর্থিকভাবে স্বামীর ওপর নির্ভরশীল।
এই করোনার সময়ে নির্যাতনের চিত্র যেন আরও বেড়েছে। একদিকে অর্থনৈতিক মন্দা, ঘরবন্দি অবস্থা,
অন্যদিকে নির্যাতনের শিকার স্ত্রী।
এই লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা থেকে নারী এবং মেয়েদের রক্ষা করার জন্য দরকার, শিক্ষার বিস্তার, সচেতনতা। বাড়াতে হবে প্রচারণা, মানসিক সহায়তা, নিরাপদ আশ্রয় এবং আইনি সহায়তার মত সেবা সমূহ।
এসএইচ-১৬/২০/২১ (শাহানা পারভীন, রেডিও পদ্মা)